বেহালায় হাতির দাঁতের চোরাকারবারের শিকড় অনেক গভীরে, ধৃতদের জেরা করে এমনটাই জানাচ্ছেন বনকর্তারা। তাঁরা জানিয়েছেন, ১০ হাজার টাকা কমিশনের বিনিময়ে জয়দেব শাসমল ও বিজয় দে নামে দু’জন হাতির দাঁতের স্মারক বিক্রি করেছিল। এই স্মারক তারা পেয়েছিল স্থানীয় এক আনাজ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। ওই ব্যবসায়ী আনাজ বিক্রি করলেও চোরাকারবার ও অন্ধকার জগতে জড়িত বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। প্রসঙ্গত, বিজয় নিজেও আনাজ ব্যবসায়ী। জয়দেব পুরনো মালপত্র কেনাবেচা করে। হাতির দাঁতের জিনিস বিক্রি নিয়ে তাদের তেমন ধারণা ছিল না বলে জেরায় জানিয়েছে তারা। যদিও তদন্তকারীদের দাবি, ধরা পড়ে নিরীহ সাজার ভান করছে দু’জনে।
বন দফতরের এক কর্তা জানান, জয়দেব ও বিজয় ধরা পড়ার সময় কাছেপিঠেই ছিল ওই আনাজ ব্যবসায়ী। বেগতিক বুঝে উধাও হয়ে গিয়েছে সে। এর আগে এই দুজনের মাধ্যমে পুরনো মুদ্রা-সহ নানা জিনিস বিক্রি করলেও হাতির দাঁত এই প্রথম।
বন দফতরের খবর, সম্প্রতি খবর মিলেছিল বেহালায় দুই যুবক হাতির দাঁতের জিনিস বিক্রির চেষ্টা করছে। এর পরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বন দফতরের অফিসারেরা। প্রাথমিক ভাবে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করলেও শেষমেশ ২ লক্ষ টাকায় রফা করে ওই দু’জন। সেই মতো সোমবার বন্যপ্রাণ শাখার রেঞ্জার উল্লাস নাথ এবং কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরো যৌথ ভাবে বেহালার শিমূলতলায় হানা দেয়। পাকড়াও করা হয় দুজনকে উদ্ধার হয় হাতির দাঁতের দু’টি স্মারক। একটির ওজন ৭০০ গ্রাম। অন্যটি ৯০০ গ্রাম। সেগুলিতে খোদাই করে মানুষের মুখ আঁকা।
তদন্তকারীরা জানান, উত্তরবঙ্গে যেমন হাতির দাঁত মেলে অর্থাৎ কাঁচা মাল হিসেবে এগুলি তেমন নয়। বরং দেখে মনে হচ্ছে কোনও পুরনো বনেদি বাড়ি বা সংগ্রহশালা থেকে এগুলি চুরি করা হয়েছে। যে ভাবে এগুলি দরাদরি করা হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে এরা হাতির দাঁতগুলি কিনে আনেনি,বরং চোরাই মাল দ্রুত বেচে যতটা টাকা কামিয়ে নেওয়া যায় সেটাই ছিল উদ্দেশ্য। এমন জিনিসপত্র আরও রয়েছে কি না তা অবশ্য জানাতে পারেনি ধৃতেরা। তদন্তকারীদের ধারণা, ওই আনাজ ব্যবসায়ীকে পাকড়াও করতে পারলে আরও তথ্য জানা সম্ভব। এক বনকর্তা বলেন, ‘‘এই ধরনের চক্রের সামনে যারা থাকে তারা অন্দরের খবর রাখে না। বহু ক্ষেত্রেই চক্রে প্রভাবশালীরা জড়িত থাকে। ফলে পাচারকারী ধরা পড়লেও যাতে চক্রীরা ধরা না পড়ে সেটার দিকে বেশি নজর দেয় তারা।’’