সঙ্কটে জরুরি অস্ত্রোপচার, ভুগছে শিশুরা

গোটা রাজ্যে সরকারি স্তরে পেডিয়াট্রিক সার্জারির ইমার্জেন্সি চলে শুধুমাত্র এসএসকেএম এবং নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৮ ০১:৩২
Share:

সরকার এখনই ‘পোস্ট ডক্টরাল ট্রেনি’ (পিডিটি) না দিলে রাজ্যের পয়লা নম্বর সরকারি মেডিক্যাল কলেজ এসএসকেএম-এর পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগে ইমার্জেন্সি বা জরুরি অস্ত্রোপচার ও পরিষেবা কয়েক দিনের মধ্যেই বন্ধ হবে। গত শুক্রবার স্বাস্থ্য ভবনে স্বাস্থ্য কর্তাদের সঙ্গে দেখা করে লিখিত ভাবে এই কথা জানিয়ে এসেছেন এসএসকেএমের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের প্রধান রুচিরেন্দু সরকার।

Advertisement

গোটা রাজ্যে সরকারি স্তরে পেডিয়াট্রিক সার্জারির ইমার্জেন্সি চলে শুধুমাত্র এসএসকেএম এবং নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে। এমনকী, শিশু চিকিৎসার একমাত্র রেফারাল হাসপাতাল বেলেঘাটা বি সি রায়-এও চিকিৎসকের আকালে ইমার্জেন্সি চালানো যাচ্ছে না। এই অবস্থায় এসএসকেএমেও যদি ইমার্জেন্সি বন্ধ হয়ে যায় তা হলে গুরুতর অসুস্থ ও দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত শিশুদের বাঁচাতে জরুরি অস্ত্রোপচার দরকার পড়লে বহু শিশু তা পাবে না।

স্বাস্থ্য ভবনও পরিস্থিতি বুঝতে পারছে, কিন্তু সমস্যা হল, তাদের হাতেও পিডিটি নেই। গত কয়েক বছর যাবৎ পেডিয়াট্রিক সার্জারিতে পোস্ট ডক্টরাল পড়তে প্রায় কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। কোনও ছাত্র পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ, যে কোনও হাসপাতালে এই ধরনের সুপার স্পেশ্যালিটি বিষয়ের ইমার্জেন্সি পরিষেবা ও অস্ত্রোপচারের পরিকাঠামো দাঁড়িয়ে থাকে মূলত পিডিটি-দের কাঁধে ভর দিয়ে।

Advertisement

রুচিরেন্দু সরকারের কথায়, ‘‘অসহায় লাগছে। আমাদের প্রতি বছর পিডিটিদের জন্য ২টি করে আসন রয়েছে। অর্থাৎ, সব সময় ৬ জনের থাকার কথা। সেটাই এসএসকেএমের মতো হাসপাতালের জন্য যথেষ্ট কম। তার মধ্যে এখন রয়েছেন মাত্র ১ জন। তিনিও আবার সামনের মাস থেকে পরীক্ষার জন্য চলে যাচ্ছেন। আর পিডিটি না পেলে ইমার্জেন্সি পরিষেবা চালানো যাবে না।

সেটাই স্বাস্থ্য ভবনে জানাতে গিয়েছিলাম আমি।’’এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পিডিটি-রা সারা ভারত থেকে আবেদন করেন। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে কেউ আসেননি। ২০১৭ সালে মাত্র এক জন প্রথম কাউন্সেলিংয়ে এসেছিলেন কিন্তু দ্বিতীয় কাউন্সেলিং-এ তিনি নিজের রাজ্যে সুযোগ পেয়ে চলে যান। এক প্রবীণ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘রাজ্য সরকার পাশ করার পর বাধ্যতামূলক ভাবে পি়ডিটিদের এ রাজ্যে তিন বছর পরিষেবা দেওয়ার জন্য বন্ড সই করাচ্ছে। ওঁরা বেশির ভাগ ভিন্ রাজ্য থেকে আসেন।

তিন বছর পড়বেন আবার তিন বছর কাজ করবেন— এই ছ’বছর পশ্চিমবঙ্গে পড়ে থাকতে চাইছেন না বলে কেউ আসছেন না।’’ এসএসকেএমে এখন পেডিয়াট্রিক সার্জারিতে ২০টি শয্যা, কিন্তু মেঝে এবং ট্রলি মিলিয়ে সব সময় ৫০-৫৫ জন ভর্তি থাকে। রুচিরেন্দুবাবু বলেন, ‘‘এই লোকবলে ২৪ ঘণ্টার ইমার্জেন্সি পরিষেবা, দু’টি টেবিলে অস্ত্রোপচার, শিশুদের অস্ত্রোপচার পরবর্তী নজরদারি অসম্ভব। তার উপরে এসএসকেএমের খুঁত ধরার জন্য সকলেই মুখিয়ে আছে। জরুরি রোগী অন্যত্র রেফার করলে সবাই প্রশ্ন তুলবে, এসএসকেএম কেন রেফার করবে?’’ এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা স্বাস্থ্য কর্তাদের জানিয়েছেন, পেডিয়াট্রিক সার্জারির কয়েক জন চিকিৎসককে জেলায় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে পেডিয়াট্রিক বিভাগ ভাল করে চালু না-হওয়ায় তাঁদের কার্যত কোনও কাজ নেই। সেই চিকিৎসকদের যদি এসএসকেএমে নিয়ে আসা যায়, তাহলে সমস্যা মেটে।

স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘রুচিরেন্দুবাবু ও এসএসকেএমের অধ্যক্ষ অজয় রায়ের সঙ্গে পেডিয়াট্রিক সার্জারি নিয়ে কথা হয়েছে। সমস্যা জটিল।
আমাদের হাতে ডাক্তার নেই। আর জেলা থেকে ডাক্তার তুলে আনতে চাইছি না কারণ, সেখানেও পরিষেবা চালাতে হবে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘আলোচনা চলছে। আপাতত অধ্যক্ষকে বলেছি, নতুন লোক না-পাওয়া পর্যন্ত যে চিকিৎসকেরা আছেন তাঁরাই যেন ডিউটির সময়সীমা বাড়িয়ে দেন। তা না হলে ইমার্জেন্সি চালানো যাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন