অফিস-আবাসনে ভয় ‘বহিরাগত’ মশাই

গত বছর কেষ্টপুর খালপাড় বরাবর সল্টলেকের বৈশাখী, শরৎ আবাসন এলাকায় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ডেঙ্গি সংক্রমণ। কেন্দ্রীয় পরমাণু শক্তি বিষয়ক দফতরের অন্তর্গত ভ্যারিয়েবল এনার্জি সাইক্লোট্রন সেন্টার (ভিইসিসি), সাহা ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স, কলকাতা পুলিশের চতুর্থ সশস্ত্র বাহিনীর সদর কার্যালয়, বৈশাখী আবাসন— সর্বত্র এডিস ইজিপ্টাইয়ের দাপট দেখা গিয়েছিল।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৩০
Share:

বিপদ: বন দফতরের পিছনের জমিতে রয়েছে ঢাকনাবিহীন পাতকুয়ো। বুধবার, সল্টলেকে। নিজস্ব চিত্র

কেষ্টপুর খালপাড় সংলগ্ন এএফ ব্লকে ঝাঁ চকচকে রাস্তা। বিধাননগর পুরসভার ‘ক্লিন সল্টলেক, গ্রিন সল্টলেক’ স্লোগানের পক্ষে একেবারে আদর্শ। শুধু ফুটপাতে অনুচ্চ গাছের আড়ালে কাপের মধ্যে জমা জলে কিলবিল করছে মশার লার্ভা। বন দফতরের নার্সারি, বৈশাখী বাজারে পাত্রের মধ্যে জমা জল— কোথায় লার্ভা নেই! স্বাভাবিক ভাবে, ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে ঘর সামলেও বাহির নিয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার গুরুদায়িত্ব সামলে প্রতি শনিবার মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চালিয়েও ‘বহিরাগত উপদ্রব’-এর কারণেই আশ্বস্ত হতে পারছেন না কলকাতা পুলিশের চতুর্থ সশস্ত্র বাহিনীর সদর কার্যালয়ের আধিকারিকেরাও।

Advertisement

গত বছর কেষ্টপুর খালপাড় বরাবর সল্টলেকের বৈশাখী, শরৎ আবাসন এলাকায় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ডেঙ্গি সংক্রমণ। কেন্দ্রীয় পরমাণু শক্তি বিষয়ক দফতরের অন্তর্গত ভ্যারিয়েবল এনার্জি সাইক্লোট্রন সেন্টার (ভিইসিসি), সাহা ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স, কলকাতা পুলিশের চতুর্থ সশস্ত্র বাহিনীর সদর কার্যালয়, বৈশাখী আবাসন— সর্বত্র এডিস ইজিপ্টাইয়ের দাপট দেখা গিয়েছিল। বস্তুত, আতঙ্কিত হয়ে পুরসভাকে সাহা ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের তরফে একটি চিঠিতে লেখা হয়েছিল, ‘সম্প্রতি বিষাক্ত মশা এবং অন্য কীটপতঙ্গের দৌলতে সল্টলেক ক্যাম্পাসে কাজ করা মুশকিল হয়ে গিয়েছে’। ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে পুরসভার দ্বারস্থ হয়েছিল ভিইসিসি-ও।

অভিজ্ঞতার নিরিখে এ বছর শুরু থেকে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে তৎপর থেকেছে কেন্দ্রীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলি। ভিইসিসি-র এক আধিকারিক জানান, নিয়মিত সাফাই অভিযানের পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সাহায্যে প্রতি সপ্তাহে দু’দিন আবাসন চত্বরে মশা মারার তেল ছড়ানো হচ্ছে। ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘ডেঙ্গি যাতে না হয়, সে জন্য আমরা আবাসন ও অফিস চত্বরকে পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু ক্যাম্পাসের সীমানার বাইরের পরিস্থিতি তো হাতে নেই!’’

Advertisement

বন দফতরের নার্সারিতে জমা জল।

পরিস্থিতি কী, তা বোঝা যায় সে সব এলাকা দিয়ে হাঁটলেই। বুধবার দুপুরে যেমন ভিইসিসি-র কার্যালয়ে উল্টো দিকের ফুটপাতে পড়ে থাকা আইসক্রিমের কাপ দেখে থমকে দাঁড়ান এই ব্লকে কর্মরত কবিতা হালদার। কাপের মধ্যে থাকা জমা জলে কিলবিল করছে মশার লার্ভা। কবিতা বলেন, ‘‘জলটা ফেলে দিতে হবে। না হলে তো আমাদেরই বিপদ।’’ রাস্তার ধারের কাপ নজরে পড়ল তাই। ওই অঞ্চলে নজরের আড়ালে এমন অনেক পাত্রেই এ দিন মশার লার্ভার সন্ধান মিলল।বন দফতরেরে অফিসের নার্সারির কথাই ধরা যাক। সেখানে গাছের গোড়ায় কেউ বাটি ফেলে রেখেছিলেন। তাতে বৃষ্টির জল জমে থাকায় যা হওয়ার তা-ই হয়েছে।স্থানীয় বাসিন্দা সুকুমার দাস জানান, বন দফতরের পিছনে খালপাড়ে পুরসভার নৌকা বাঁধা থাকে। সেই নৌকোয় চড়ে খালের এক মাথা থেকে আর এক মাথা পর্যন্ত মশা মারার তেল ছড়ান পুরকর্মীরা। অথচ অদূরে জলের পাত্র, খোলা পাতকুয়োয় যে পরিমাণ মশার লার্ভা রয়েছে, সে দিকে কারও নজর যায়নি!

বৈশাখী আবাসনের ডি ব্লকে গত বছর ডেঙ্গি সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছিল ঐশী মধু নামে এক বালিকার। তা থেকেও বাসিন্দারা যে সচেতনতার পাঠ নেননি, বৈশাখী বাজারের ছবিই বলে দিচ্ছে সেই কথা। চারটি বালতিতে কিলবিল করছে প্রচুর লার্ভা। বাজারের প্রতিনিধিদের সে দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তড়িঘড়ি জমা জল নর্দমায় ফেলে দেন এক ব্যবসায়ী।

বস্তুত, ক্যাম্পাসের বাইরের এই পরিস্থিতির জন্যই উদ্বেগ যাচ্ছে না কেন্দ্রীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের। মেঘনাদ সাহা আবাসনে (১) কর্মরত এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘বিকেলের পরে মশার দাপটে ক্যাম্পাসে দাঁড়াতে পারবেন না।’’ ভিইসিসি-র এক আধিকারিক বলেন, ‘‘অনুশক্তি এবং মেঘনাদ সাহা আবাসনের মধ্যে খোলা ভ্যাট নিয়েও সমস্যা রয়েছে।’’ সূত্রের খবর, খালপাড়ের পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সুজিত বসুর সঙ্গে কথা বলেছেন ভিআইসিসি-র প্রতিনিধিরা। কলকাতা পুলিশের চতুর্থ সশস্ত্র বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ হলেও প্রতি শনিবার আমাদের ছেলেরা জঙ্গল সাফাই, মশা মারার তেল ছড়ানোর কাজ করে। নিজেরা চাঁদা তুলে যন্ত্রপাতি কিনেছি। আবাসিকদেরও সাফাইয়ের কাজে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। কিন্তু বাইরের দায়িত্ব নেব কী করে!’’

পাঁচ নম্বর বরোর চেয়ারপার্সন তথা স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর অনিতা মণ্ডল বলেন, ‘‘নিয়মিত নজরদারির জন্যই গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গি সংক্রমণ অনেক কম। যেটুকু ফাঁক আছে, তা-ও পূরণ করে ফেলা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন