Night Club

নেশার রাত বিকোচ্ছে আইন ভেঙে, বেকবাগানের বহুতলে আবগারি হানা

শনিবার রাতে রাজ্য আবগারি দফতরের কর্তারা মাঝরাতে একটি পার্টিতে হানা দেন। ২৩ নম্বর সার্কাস অ্যাভিনিউয়ের বহুতলের ছাদে তখন চলছে উদ্দাম নাচ গান। আবগারি দফতরের এক কর্তা বলেন, “প্রায় আড়াইশো – তিনশো মানুষ এই পার্টিতে যোগ দেন।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৮ ১৪:৫৯
Share:

আবগারি কর্তাদের অভিযানের সময়। —নিজস্ব চিত্র

মাত্র ৮০০ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন। তারপর পেয়ে যান রাত ভর উদ্দাম পার্টি করার দেদার সুযোগ। হাল ফিলের কলকাতায় এই প্রাইভেট পার্টিই এখন নয়া ট্রেন্ড। বেআইনি ভাবে এ রকম চলা একটি পার্টিতে হানা দিয়ে তাজ্জব রাজ্য আবগারি দফতরের কর্তারা।

Advertisement

ফেসবুকে একটি ক্লোসড্ গ্রুপ। আর সেই গ্রুপের মাধ্যমেই কলকাতায় যাঁরা বিভিন্ন পার্টিতে যান, তাঁদের কাছে পৌঁছে যায় আমন্ত্রণ। নিয়ম খুব সহজ। ‘লোকাল’ নামে ফেসবুক গ্রুপ থেকে আমন্ত্রণের সঙ্গে পাঠানো হবে একটি রেজিস্ট্রেশন ফর্ম। ৮০০ টাকা দিয়ে সেই ফর্ম পূরণ করতে হবে। সেই ফর্মে জানাতে হবে নিজের সম্পর্কে কিছু তথ্য— নাম, ই মেল এবং ফেসবুক আইডি, ফোন নম্বর, কী ধরনের মদ খেতে চান, কী গাড়ি চেপে যাবেন — এই সব। সেই তথ্য দিয়ে ফর্ম পূরণ করার পরই আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে কবে কোথায় পার্টি।

শনিবার রাতে রাজ্য আবগারি দফতরের কর্তারা মাঝরাতে এ রকমই একটি পার্টিতে হানা দেন। ২৩ নম্বর সার্কাস অ্যাভিনিউয়ের বহুতলের ছাদে তখন চলছে উদ্দাম নাচ গান। আবগারি দফতরের এক কর্তা বলেন, “প্রায় আড়াইশো – তিনশো মানুষ এই পার্টিতে যোগ দেন।” এই পার্টিতে আগে থেকেই একটি শর্ত দেওয়া থাকে, ‘বিওয়াইওবি’। অর্থাৎ ব্রিং ইওর ওন বুজ— মানে নিজের মদ নিজেকে সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।

Advertisement

আরও পড়ুন: কোন ডেরা থেকে ‘মোমো’-র জাল ছড়াচ্ছে, তদন্তে সিআইডি

আবগারি দফতরের এক কর্তা বলেন, “ছাদের একটা অংশ কাঁচ দিয়ে ঘিরে পুরো ডিসকো থেকের চেহারা দেওয়া হয়েছে। একদিকে বার কাউন্টার, অন্যদিকে ডান্স ফ্লোর এবং ডিজের জায়গা।”

তদন্তে আবগারি দফতরের কর্তারা জানতে পারেন, বরুণ দেশাই এবং বিনয় দাসওয়ানি নামে দুই যুবক এই প্রাইভেট পার্টির মূল আয়োজক। তাঁরাই ফেসবুকে গ্রুপ করে পার্টিতে লোকজনকে আমন্ত্রণ জানানো থেকে শুরু করে পার্টির আয়োজন সবটাই করেন। বরুণ পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হলেও মূলত ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করেন। তাঁর সঙ্গী বিনয় সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার। দু’জনকেই আবগারি আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিল করে দেওয়া হয়েছে পার্টির জন্য নির্দিষ্ট ছাদের ওই জায়গা।

আরও পডু়ন: চতুর্থী থেকেই কি পুজোর সূচি? দুই মতে ভাগ মেট্রো

আবগারি কর্তারা প্রচুর পরিমাণ বিদেশি শুল্ক বিহীন (নন-ডিউটি) অ্যালকোহল উদ্ধার করেছেন। রাজ্য আবগারি দফতরের সাউথ সার্কেলের যুগ্ম কমিশনার নীলাঞ্জনা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অনুমতি ছাড়া এবং নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে মদ বাণিজ্যিক ভাবে পরিবেশনের অভিযোগে এঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।’’

বিনয় এবং বরুণকে জেরা করে জানা গিয়েছে, প্রায়ই এ রকম পার্টির আয়োজন করেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, কলকাতার রাতের জীবনের পরিসর অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। মানুষ রাতভর পার্টি করতে চান। কিন্ত নাইট ক্লাবেও রাত দুটোর বেশি পার্টি করা যায় না। তাই তাঁরা এ ধরনের পার্টির আয়োজন করছেন। তদন্তকারীদের কাছে আয়োজকরা স্বীকার করেছেন, ভোর পাঁচটা পর্যন্ত চলে এই পার্টি। আর এই পার্টিতে সমাজের বিত্তশালী মানুষদের যাতায়াত।

তদন্তকারীদের আশঙ্কার আরও কারণ রয়েছে। এক তদন্তকারী বলেন, “এই পার্টিগুলিতে বেআইনি মদের রমরমা কারবার। তার সঙ্গে জাল মদ বিক্রিরও সম্ভবনা প্রবল।”

শনিবারের রাতের হানার পর চিন্তা বেড়েছে কলকাতা পুলিশের। কারণ তাঁদের সন্দেহ করার কারণ রয়েছে, এই পার্টিগুলোতেই অন্যান্য মাদকের রমরমা কারবার চলে। কারণ এর আগেও কলকাতার কিছু নাইট ক্লাবে নিষিদ্ধ মাদকের রমরমা কারবারের হদিশ পেয়েছে পুলিশ। এক পুলিশ কর্তা বলেন, আমরাও খবর পেয়েছি, কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় এ রকম প্রাইভেট পার্টিকে সামনে রেখে কার্যত রেভ পার্টি চালানো হচ্ছে। তাই এই বেআইনি নাইট ক্নাব আর পার্টির ট্রেন্ড এখন চিন্তার কারণ পুলিশের।

(এই প্রতিবেদনের প্রথম সংস্করণে বেআইনি নাইট পার্টির বলে যে প্রধান ছবি দেওয়া হয়েছিল তা ভুল। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।)

(কলকাতা শহরের রোজকার ঘটনার বাছাই করা বাংলা খবর পড়তে চোখ রাখুন আমাদের কলকাতা বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন