অনিন্দ্যের হাল দেখেও ভীত নয় তোলাবাজেরা

এক অনিন্দ্যের জেলে যাওয়া দেখে অন্যেরা কতটা ‘শিক্ষা’ পাবে, সে প্রশ্ন ছিলই। রাজারহাটের দু’টি ঘটনা ফের প্রমাণ করে দিল যে, পরিস্থিতি আদতে খুব একটা বদলায়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৬ ০১:১০
Share:

নির্মীয়মাণ এই আবাসনই এখন তোলাবাজদের নজরে।

এক অনিন্দ্যের জেলে যাওয়া দেখে অন্যেরা কতটা ‘শিক্ষা’ পাবে, সে প্রশ্ন ছিলই। রাজারহাটের দু’টি ঘটনা ফের প্রমাণ করে দিল যে, পরিস্থিতি আদতে খুব একটা বদলায়নি। শুক্রবারই রাজারহাটের এক প্রোমোটারের কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়। পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ আধিকারিকও সিন্ডিকেট দৌরাত্ম্যের জেরে দীর্ঘ দিন ধরে হেনস্থা হওয়ার অভিযোগ আনেন। দু’টি ক্ষেত্রেই পরোক্ষ ভাবে নাম জড়িয়েছে বিধাননগর পুর নিগমের এক বরো চেয়ারম্যান, তৃণমূলের শাহনওয়াজ আলি মণ্ডল ওরফে ডাম্পির দিকে।

Advertisement

পুলিশ আধিকারিকের অভিযোগটি অবশ্য পুরনো। কিন্তু পাঁচ লক্ষ টাকা চেয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগটি টাটকা। অভিযোগ, শুক্রবার রাজারহাটের সৌরভ গাঙ্গুলি অ্যাভিনিউয়ে একটি নির্মীয়মাণ আবাসনের কাজ চলাকালীন স্থানীয় একটি ক্লাবের কিছু ছেলে গিয়ে পাঁচ লক্ষ টাকা তোলা চায়। শ্রমিকদের একাংশের অভিযোগ, ওই যুবকেরা এসে কাজ বন্ধ করতে বলে। তারা জানায়, টাকা না দিলে কাজ শুরু করতে দেওয়া হবে না। প্রতিবাদ করলে শ্রমিকদের মারধর করে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

ঘটনাচক্রে এই ক্লাবের সভাপতি সেই ডাম্পি মণ্ডল। তবে তাঁর দাবি, কাউন্সিলর হওয়ার সুবাদে অনেক ক্লাবই তাঁকে না জানিয়ে সভাপতি হিসেবে রেখেছে। এ ক্ষেত্রেও তেমনই ঘটেছে। শাহনওয়াজ ওরফে ডাম্পি বলেন, ‘‘যে ক্লাবের কথা বলা হচ্ছে সেখানকার কাউকে আমি চিনি না।’’ এ দিন এলাকায় গিয়েও অবশ্য ক্লাব-সদস্যদের কারও দেখা মেলেনি।

Advertisement

২০১৩ সালে ওই আবাসন তৈরি শুরু হয়। নির্মাণকারী সংস্থার এক প্রতিনিধি অভিযোগে জানান, স্থানীয় ক্লাবের থেকে ইমারতি দ্রব্য নিয়েই কাজ চলছিল। পুজো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-সহ নানা অজুহাতে যখন-তখন টাকা চেয়েছে ওই ক্লাবের সদস্যেরা। যাদের নেতৃত্বে রয়েছেন ক্লাবের সম্পাদক বাবু শীল। স্থানীয় সূত্রের খবর, বাবু গেঞ্জি কারখানার শ্রমিক। নির্মাণ সংস্থার আইনি উপদেষ্টা শঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘বিভিন্ন সময়ে ওই ক্লাবকে চাঁদা দেওয়া হয়েছে। গত কাল আচমকা ক্লাবের কিছু ছেলে এসে বলে, হয় পাঁচ লক্ষ টাকা দিতে হবে না হলে ক্লাবকে একটা ফ্ল্যাট লিখে দিতে হবে। না হলে কাজ হবে না।’’ তাঁর দাবি, বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার জ্ঞানবন্ত সিংহ, এয়ারপোর্ট থানা এবং বিধাননগরের মেয়রের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। যদিও বিধাননগরের গোয়েন্দাপ্রধান সন্তোষ পাণ্ডে, বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত অভিযোগ জমা পড়ার কথা অস্বীকার করেছেন।

পুলিশের কাছে জমা দেওয়া অভিযোগপত্র। — নিজস্ব চিত্র

অন্য দিকে, সিন্ডিকেট দৌরাত্ম্যের ‘শিকার’ খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ আধিকারিক অভিযোগে জানান, ১০ বছর ধরে তিনি নিজের জমিতে পাঁচিল দিতে পারছেন না। ওই আধিকারিক জানান, ২০০৬-এ পুর নিগমের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দশদ্রোণের রায়পাড়ায় স্ত্রীর নামে একটি জমি কেনেন তিনি। ২০১২ সালে জমিতে পাঁচিল তুলতে গেলেই শুরু হয় গোলমাল। অভিযোগ, ডাম্পি ঘনিষ্ঠ মাটি পুলক, বাবুন-সহ একাধিক যুবক কাজ বন্ধ করে দেয়। অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয় ওই আধিকারিক ও তাঁর পরিবারকে। আধিকারিকের স্ত্রী ইন্দ্রানী সিংহরায় জানান, ২০১২ থেকে জমিতে পাঁচিল তোলার চেষ্টা চলছে। কিন্তু প্রতি বার ওই দলটি এসে বাধা দিচ্ছে। ২০১৪ সালে বাধ্য হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের এক আধিকারিকের দ্বারস্থ হন তাঁরা। পরে এয়ারপোর্ট থানায় অভিযোগ করা হয়। কিন্তু কাজ হয়নি। ইন্দ্রাণীদেবীর অভিযোগ, যত বার তাঁরা নিজেদের ৪ কাঠা জমিতে পাঁচিল তুলেছেন, তত বারই তা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, মাটি পুলকদের লোকেরা বলেছে, ডাম্পির সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে। কিন্তু তাঁরা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন। কাউন্সিলর তাঁদের মেয়র সব্যসাচী দত্ত ও পুর-কমিশনার অলকেশপ্রসাদ রায়ের কাছে পাঠান। সম্প্রতি ওই আধিকারিক পুলিশ কমিশনার জ্ঞানবন্ত সিংহের সঙ্গে দেখা করতে যান। কিন্তু তিনি না থাকায় তাঁর কাছে ঘটনাটি জানিয়ে একটি অভিযোগ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে বলে ইন্দ্রাণীদেবীর দাবি। এতেও কাজ না হলে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হবেন।

তবে দু’টি ঘটনাতেই এফআইআর-এ ডাম্পির নাম নেই বলে জানা গিয়েছে। যে এলাকায় জমিটি, তা ডাম্পির ওয়ার্ড নয়। তা সত্ত্বেও তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে কেন? স্থানীয় সূত্রের খবর, মাটি পুলক, বাবুনরা ডাম্পি ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে ডাম্পি বলেন, ‘‘কে কী বলছে জানি না। ওটা আমার ওয়ার্ড নয়। স্থানীয় কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলুন।’’

দু’টি ঘটনা প্রসঙ্গেই বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচীবাবু বলেন, ‘‘আমার কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি।’’ ডাম্পি এ দিন বলেন, ‘‘দলে শুদ্ধিকরণ চলছে। আইন আইনের পথে চলবে। পুলিশ সত্য উদ্ঘাটন করুক। আমরা সহযোগিতা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন