হকার সমিতির সেই অফিস। —নিজস্ব চিত্র।
খাস সরকারি জমিতেই গড়ে উঠেছে সংগঠনের অফিস। উড়ছে শাসকদলের পতাকা। সাইন বোর্ড আর ফেস্টুনে ঝুলছে নেতা-নেত্রীর নাম। অভিযোগ, সেখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে তোলাবাজির সাম্রাজ্য। অথচ এমন অফিসের অস্তিত্ব জানেন না নেতারাই। এমনই অভিযোগ হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন দিঘা বাসস্ট্যান্ড চত্বরে হওয়া একটি হকার সমিতির অফিস ঘিরে।
রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে হাওড়া স্টেশন চত্বরে রাজনৈতিক মদতপুষ্ট তোলাবাজ ও হকারদের দাপট নিয়ন্ত্রণে এসেছিল অনেকটাই। কিন্তু কয়েক বছর যেতেই ফিরে এসেছে পুরনো ছবি। হাওড়া সাবওয়ের ভিতরে ফের বসতে শুরু করেছে ডালাভর্তি বাজার। হকারদের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। চলার পথ কার্যত বন্ধ।
কী ভাবে ফিরল হকার-রাজ? স্টেশনে কাজ করা বিভিন্ন দলের শ্রমিক নেতা, হোটেল মালিক, রেলকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীরা পরস্পরের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে ফিরিয়ে এনেছে তোলাবাজির পুরনো জমানা। হকারদের নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘সাবওয়ে বাস অ্যান্ড হকার্স সমিতি’। তারই অফিস তৈরি হয়েছে দিঘা বাসস্ট্যান্ড চত্বরে কেএমডিএ-র জায়গায়। অভিযোগ, ওই অফিস থেকেই ধার্য হচ্ছে হকারদের তোলার পরিমাণ। সেই মতো ডালা বসছে সাবওয়ে ও বাসস্ট্যান্ড চত্বরে। এলাকার দোকানদার ও হকারদের অভিযোগ, ওই অফিস থেকে প্রতিদিনের ‘চাঁদা’ ওঠে। অথচ ওই অফিসের দরজা খোলে রাতে। তখনই তোলার টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়।
গত ছ’মাস ধরে এই সমিতির অফিস চালু থাকলেও সে খবর জানেনই না সমিতির সভাপতি থেকে শুরু করে এলাকার বিধায়ক ও অন্য নেতারা। ওই সমিতির সভাপতি পদে নাম রয়েছে খোদ জেলা আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি অরূপেশ ভট্টাচার্যের। তিনি বলেন, ‘‘আমি স্টেশন এলাকার ৫-৬টি সংগঠনের সভাপতি। জানতামই না বেআইনি ভাবে ওই অফিস তৈরি হয়েছে ও ডালা বসাতে তোলাবাজি করা হচ্ছে। মনে হয় কোনও চক্র এ সব করে দলের বদনাম করছে।’’ উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক অশোক ঘোষ বলেন, ‘‘এই অফিসের খবর জানি না। যদি এই ঘটনা ঘটে, অবশ্যই ওই অফিস ভেঙে দেওয়া হবে।’’ একই বক্তব্য তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ রায়েরও। তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের সমিতির কথা জানি না। খতিয়ে দেখে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’’
তবে তৃণমূল নেতা-বিধায়কেরা এই নতুন সমিতির কথা না জানলেও হকার থেকে পুলিশ সকলেই স্বীকার করেছে তোলাবাজির কথা। পুলিশ সূত্রের খবর, আগে যেখানে সাবওয়েতে বসা হকারদের থেকে ডালাপিছু দিনে ৩০ টাকা দিতে হত, সেখানে এখন দিতে হচ্ছে ১০০ টাকা। অভিযোগ, নতুন জায়গায় ডালা দিতে গেলে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। বাসস্ট্যান্ড চত্বরে হকারদের বসাতে দাদাদের ‘নজরানা’ দিতে হচ্ছে দৈনিক ৭০-৮০ টাকা। জুতো পালিশ থেকে আখের রসের গাড়ি— কেউই রেহাই পাচ্ছে না। হাওড়া সিটি পুলিশের এক অফিসারের কথায়, ‘‘পরিস্থিতি এমন যে হকার তুলতে গেলে ফোন আসছে মন্ত্রী বা নেতাদের নাম করে। তখন তাদের বসতে দেওয়া ছাড়া পথ থাকছে না।’’ স্টেশন চত্বরে হকার-রাজ যে বেড়েছে, মানছেন বিধায়ক অশোকবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়ে দু’বার হকার উচ্ছেদ করেছি। কিন্তু তারা ফের বসেছে। এর পিছনে কারা আছে খোঁজ নিচ্ছি।’’ হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘মাঝেমধ্যেই হকার উচ্ছেদ অভিযান করা হচ্ছে। অভিযানের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। স্টেশন চত্বরে কোনও ভাবেই হকার বসা চলবে না।’’