Tehrik-i-Taliban

Taliban issue: ‘মেয়েটা বেঁচে আছে কি না, সেটাই তো জানি না’

এমন পরিস্থিতিতে তাই মাস দুই আগেই মেয়ে শাকিলা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল হাওড়ার বাঁকড়ার খানপাড়ার বাসিন্দা শামিমা বেগমের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২১ ০৫:৪১
Share:

চিন্তান্বিত: মেয়ে শাকিলার জন্য উদ্বিগ্ন মা শামিমা (বাঁ দিকে) ও ঠাকুরমা নুরজাহান বিবি। বৃহস্পতিবার, বাঁকড়ার বাড়িতে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

তালিবান কাবুল দখল করার মাস দুই আগেই পরিস্থিতি যথেষ্ট ঘোরালো হয়ে উঠেছিল। তখন থেকেই কাবুল বাদে অন্য অনেক এলাকায় নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছিল মোবাইল সংযোগ। ফলে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে হলেও আসতে হত কাবুলে। শুধু তা-ই নয়, তখন থেকেই মেয়েরা রাস্তায় বেরোতে সাহস পেতেন না। আড়াল থেকে সব সময়েই নজরদারি চালাত তালিব জঙ্গিরা।

Advertisement

এমন পরিস্থিতিতে তাই মাস দুই আগেই মেয়ে শাকিলা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল হাওড়ার বাঁকড়ার খানপাড়ার বাসিন্দা শামিমা বেগমের। কাবুলের কাছে কারমাগাও গ্রামে থাকেন শাকিলা। তালিবান কাবুল দখল করার পর থেকে বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছেন শামিমা ও তাঁর বৃদ্ধা শাশুড়ি নুরজাহান বিবি। গত তিন-চার দিন ঠিক করে খাওয়াদাওয়া করেননি দু’জন। বার বারই চোখ রাখছেন টেলিভিশনের পর্দায়। খবর শুনে অজানা আতঙ্কে কেঁপে উঠছেন।

বাঁকড়ার খানপাড়ায় তস্য গলির মধ্যে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে একাধিক বাড়ি। তারই মধ্যে একটি বহুতলের একতলার ঘরে বসে শামিমা বললেন, ‘‘মেয়েটা বেঁচে আছে কি না, সেটাই তো জানি না। দু’মাস আগে এক বার ফোন করতে পেরেছিল। বলেছিল, কাবুলের অবস্থা খুব খারাপ। অন্যান্য জায়গাতেও মোবাইলের টাওয়ার নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে। চার দিকে গোলমাল হচ্ছে। ওরা বাইরে বেরোতে পারছে না। খারাপ কিছু যে ঘটতে চলেছে, সেটা বার বার বলছিল। তবে তা যে এতটা তাড়াতাড়ি হবে, সেটা আমি ভাবিনি।’’

Advertisement

আফগান-ভূমে আটকে পড়া নাতনির কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে ঠাকুরমার। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন নুরজাহান বিবি। চোখ মুছতে মুছতে বলেন, ‘‘আমার নাতনির সঙ্গে বছর দশেক আগে বিয়ে হয়েছিল কাবুলের কাছে একটি গ্রামের বাসিন্দা রসুল খানের। রসুল সে সময়ে সাঁতরাগাছিতে ভাড়া থাকত। ওর কয়েক জন কাবুলিওয়ালা বন্ধু থাকত এই খানপাড়ায়। সেই সূত্রে এখানে ওর যাতায়াত ছিল। তখনই নাতনির সঙ্গে ওর পরিচয় ঘটে।’’ নুরজাহান বিবি জানালেন, তাঁর নাতনিকে ভাল লেগে গিয়েছিল রসুলের। নাতনিরও ভাল লাগত রসুলকে। দু’জন পরস্পরকে বিয়ে করতে চাওয়ায় তাঁরা আপত্তির কোনও কারণ দেখেননি।

শামিমা জানান, বিয়ের পরে বছর পাঁচেক হাওড়াতেই ছিলেন রসুল ও শাকিলা। তাঁদের একটি মেয়েও হয়। পাঁচ বছর আগে শিশুকন্যা ও স্বামীর সঙ্গে কাবুলের কাছে নিজের শ্বশুরবাড়িতে চলে যান শাকিলা। তার পরে আর মা-বাবার বাড়িতে আসেননি। কাবুলে ওই দম্পতির দুই ছেলে এবং আরও একটি মেয়ে হয়।

শামিমা বলেন, ‘‘আমার স্বামী নেই। শাশুড়ির সঙ্গেই থাকি। আফগানিস্তানে থাকলেও সেখান থেকে মেয়ে নিয়মিত আমাদের খবর নিত। কিন্তু গত দু’মাস ধরে কোনও রকম খবর পাইনি ওদের। কেমন আছে, জানি না। খবরে তালিবানি অত্যাচারের যে সব দৃশ্য দেখছি, তাতে দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুমোতে পারছি না। শুধু ভাবছি, কাবুল থেকে মেয়ের ফোনটা কখন আসবে!’’ জলে ভরে ওঠা চোখ দু’হাতে চাপা দেন প্রৌঢ়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন