এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে ফের গুলি চলল রাতের শহরে। পর পর পড়ল বোমা। এবার ঘটনাস্থল কড়েয়ার পাম অ্যাভিনিউ। এই ঘটনায় পুলিশ চার জনকে গ্রেফতার করলেও মূল অভিযুক্ত এখনও অধরা।
কি ঘটেছিল বুধবার রাতে? পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার রাত সোয়া এগারোটা নাগাদ কড়েয়ার পাম অ্যাভিনিউয়ের একটি বস্তির সামনে ছোটু নামে স্থানীয় এক যুবককে স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানের যুবকদের গালাগালি দেওয়া নিয়ে ঝামেলা বেধে যায়। সেই সময়ে ওই যুবকেরা চলে গেলেও কিছুক্ষণ পরে তারা সকলেই ওই এলাকায় ফেরত আসে। এলাকা জুড়ে শুরু হয় মারপিট, ধাক্কাধাক্কি। এর মধ্যেই রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ আচমকাই পর পর তিনটি বোমা পড়ে। বোমার আঘাতে জখম হন মাজহার হোসেন, শেখ জাফর এবং শেখ রিয়াজউদ্দিন নামে তিন বাসিন্দা। পর পর চলতে থাকে গুলিও। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় কড়েয়া থানার পুলিশ এবং লালবাজারের বিশাল বাহিনী। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশের সামনেও চলতে থাকে গুলি-বোমাবাজি। ভাঙচুর করা হয় বেশ কয়েকটি মোটরবাইক। পুলিশ এসে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে পুলিশকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শেষপর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, এই ঘটনায় আহত তিন জনকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হলেও পরে মাজহার হোসেন নামে এক আহতকে স্থানীয় বেসরকারি নার্সিংহোমে স্থানান্তরিত করা হয়। তার অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করে রাতের মধ্যেই তফিক সইদ নামে এক যুবককে এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে ফের পাল্টা অভিযোগ দায়ের করা হয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এরপর রাতের মধ্যেই শাহিদ খান, গুলজার রহমান এবং আব্দুল শেহবাজ নামে আরও তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, দু’টি অভিযোগের ভিত্তিতেই খুনের চেষ্টা, অস্ত্র আইন-সহ বিভিন্ন জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করে তদন্ত চলছে। তবে মূল অভিযুক্ত এখনও অধরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, তিলজলা, গড়িয়াহাট, কসবা এবং কড়েয়া এলাকায় এলাকা দখল এবং প্রোমোটিং ব্যবসাকে কেন্দ্র করে মাঝেমধ্যেই গণ্ডগোল এবং গুলি-বোমাবাজিতে জড়িয়ে পড়ে দুষ্কৃতীরা। এর আগেও ২ নভেম্বর গড়িয়াহাটের বন্ডেল রোডে এলাকা দখলকে কেন্দ্র করেই চলে গুলি বোমাবাজি। রাতের মধ্যেই তল্লাশি চালিয়ে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই ঘটনার মাসখানেক পরে মূল অভিযুক্ত সোনা পাপ্পু-সহ চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বন্ডেল রোডের ঘটনার সপ্তাহখানেক আগে ক়ড়েয়ার তিলজলা রোডে সিন্ডিকেট ব্যবসা নিয়ে বচসার জেরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল বিজয় রায় ওরফে কচি নামে এক প্রোমোটারের।
সাম্প্রতিক কালে ক়ড়়েয়া, তিলজলা, গড়িয়াহাট ও কসবা এলাকায় এত গুলি-বোমাবাজি বেড়ে যাওয়ার কারণ কি? ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুষ্কৃতীদের এত রমরমার পিছনে দায়ী এলাকায় সিণ্ডিকেট ব্যবসার রমরমা এবং পুলিশের গা-ছাড়া মনোভাব। ওই এলাকাগুলির কোথাও গুলি-বোমাবাজির ঘটনা ঘটলে পুলিশ এলেও তাদের সামনেই চলে যথেচ্ছ গুলি-বোমাবাজি। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে জামিন অযোগ্য ধারা দিলেও কিছুদিনের মধ্যেই তারা ফের জামিন পেয়ে যায়। ক়ড়েয়ার এক বাসিন্দা শেখ ইমতিয়াজ বলেন, ‘‘একই চেনা দুষ্কৃতীরা বিভিন্ন এলাকায় ঝামেলা করতেই থাকে। ধরলেও কিছুদিনের মধ্যেই বেরিয়ে এসে ফের ঝামেলা শুরু করে দেয়।’’
এই অভিযোগ নিয়ে কি বলছে পুলিশ? কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (এসইডি) গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘গত কয়েক মাসে পর পর অনেক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। অনেক বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে এবং এখনও উদ্ধার চলছে। তা সত্ত্বেও দু’এক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে যেটা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা প্রত্যেকটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’’ কিন্তু গত কয়েক মাসে ওই এলাকাতেই এত গুলি বোমাবাজি কেন? গৌরববাবুর কথায়, ‘‘অনেক সময় এলাকায় সামান্য বিষয় নিয়ে ঝামেলা শুরু হলেও দুষ্কৃতীরা ঢুকে পড়ে ঝামেলা বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা ক্রমাগত দুষ্কৃতীদের চিহ্নিতকরণ এবং গ্রেফতার করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’’ জামিন অযোগ্য ধারা দেওয়ার পরও কি ভাবে পার পেয়ে যাচ্ছে দুষ্কৃতীরা? ‘‘এই বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। এ নিয়ে মন্তব্য করা উচিত হবে না।’’-মন্তব্য ওই পুলিশকর্তার।