খগেন্দ্রনাথ পাত্র
বাড়ি তৈরি করেছেন বাবা। সেই বাড়ির কোন তলায়, কোন ঘরে বাবা থাকবেন, তা তিনিই ঠিক করবেন বলে জানিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। ছেলের বিরুদ্ধে বাবাকে বাড়ি থেকে উৎখাতের অভিযোগ সংক্রান্ত একটি মামলায় বুধবার এই মন্তব্য করেছেন হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক। যাদবপুর থানার পুলিশকে বিচারপতির নির্দেশ, আজ, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বাবাকে বাড়িতে ঢুকিয়ে তাঁর নিজের পছন্দের ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে হবে।
পুলিশ জানায়, পূর্ব যাদবপুরের সেন্ট্রাল পার্কের বাসিন্দা সত্তর বছর বয়সী খগেন্দ্রনাথ পাত্র রাজ্য পর্যটন দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। তাঁর স্ত্রী বছর কয়েক আগে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। তাঁর দুই মেয়ে, এক ছেলে। সেন্ট্রাল পার্কে খগেন্দ্রনাথবাবুর দোতলা বাড়ি। স্ত্রী মারা যাওয়ার আগেই ছোট মেয়ে ও জামাইকে একতলায় থাকতে দিয়ে গিয়েছিলেন। দোতলার একটি ঘরে খগেন্দ্রনাথবাবু ও তাঁর স্ত্রী থাকতেন। স্ত্রীর মৃত্যুর পরে ওই ঘরেই থাকতেন বৃদ্ধ। দোতলার অন্য ঘরে থাকেন তাঁর ছেলে, পুত্রবধূ ও চার বছরের নাতনি। বৃদ্ধের ছেলেও রাজ্য পর্যটন দফতরে কাজ করেন। পুত্রবধূ স্কুল শিক্ষিকা।
পুলিশ জানায়, খগেন্দ্রনাথবাবুর অভিযোগ, তাঁর পুত্র ও পুত্রবধূ তাঁকে গত এপ্রিল মাসে বাড়ি থেকে মারধর করে বার করে দেন। তার আগে খগেন্দ্রনাথবাবু তাঁর ছেলে ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে একাধিক বার থানায় জেনারেল ডায়েরি করেন। বাড়ি থেকে তাঁকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এই অভিযোগ তুলে পুত্র ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে গত সেপ্টেম্বর মাসে মামলা দায়ের করেন হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর আদালতে। বিচারপতি বাগচী পুলিশকে নির্দেশ দেন, বৃদ্ধকে বাড়ি ফিরিয়ে দিতে হবে। ওই বৃদ্ধের আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী জানান, পুলিশ সেপ্টেম্বর মাসে বাড়ির মেন গেটে তাঁর মক্কেলকে ছেড়ে দিয়ে ফিরে গিয়েছিল। পুত্র ও পুত্রবধূ তাঁকে দোতলায় ঢুকতেই দেয়নি, উল্টে ফের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে এই অভিযোগ জানিয়ে পুনরায় আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি।
এ দিন সেই মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি বসাকের আদালতে। বৃদ্ধের আইনজীবী আদালতে জানান, তাঁর মক্কেল বাড়ি তৈরি করেছেন। সেই বাড়ি ছেড়ে তিনি কোথায় যাবেন। তাঁকে কেন অন্যত্র আশ্রয় খুঁজতে হবে। বাড়িতে বৃদ্ধের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে বলে আইনজীবী অভিযোগ করেন। বৃদ্ধের ছেলের আইনজীবী ওই অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, খগেন্দ্রনাথবাবু স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, কেউ তাঁকে তাড়িয়ে দেয়নি। বিচারপতি বসাক সরকারি কৌঁসুলি শুভব্রত দত্তের কাছে জানতে চান, বিচারপতি বাগচীর নির্দেশ মানা হয়েছিল কি না। সরকারি কৌঁসুলি জানান, সেই নির্দেশ মানা হয়েছিল। কিন্তু পরে ছেলের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলে ফের মামলা করেছেন খগেন্দ্রনাথবাবু।
তা শুনে বিচারপতি বসাক খগেন্দ্রনাথবাবু ছেলের আইনজীবীর উদ্দেশে ওই মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে বিচারপতি সরকারি কৌঁসুলিকে জানিয়ে দেন, ওই বৃদ্ধের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে যাদবপুর থানার পুলিশকে।