Bangladesh Situation

‘সব বন্ধ করে দেওয়া উচিত’! দীপু-হত্যা নিয়ে বাংলাদেশকে ‘গুঁতো’ দেওয়ার ডাক শুভেন্দুর, তৃণমূল বলছে, মোদী কেন চুপ?

তৃণমূল লিখেছে, ‘যে প্রধানমন্ত্রী সব সময় অতি সক্রিয় থাকেন, সমাজমাধ্যম নিয়ে যাঁর এত উৎসাহ, তিনি বাংলাদেশে দীপু দাসের হত্যা নিয়ে চুপ কেন? মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমীকরণের কারণেই কি?’

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ২৩:৪২
Share:

শুভেন্দু অধিকারী। — ফাইল চিত্র।

বাংলাদেশের ময়মনসিংহে দীপু দাসের হত্যা নিয়ে সুর চড়ালেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। হত্যাকারীর বিরুদ্ধে, সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে সে দেশে কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তা না-জানালে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তিনি। সে দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রদ করার কথাও জানিয়েছেন শুভেন্দু। এ-ও জানিয়েছেন, এটা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। অন‍্য দিকে, তৃণমূলের প্রশ্ন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেন চুপ রয়েছেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ সমীকরণ’-এর জন্যই কি তিনি চুপ রয়েছেন?

Advertisement

ময়মনসিংহে দীপু নামে এক যুবককে খুন করে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তা নিয়ে সরব শুভেন্দু। মঙ্গলবার বিজেপির রাজ্য দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বলেন, ‘‘যত দিন না বাংলাদেশ উপদূতাবাস থেকে সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে, বাংলাদেশে দীপু দাসের হত‍্যাকারীদের বিরুদ্ধে কী ব‍্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, হিন্দুদের নিরাপত্তার জন‍্য কী ব‍্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, এই বিষয়ে যতক্ষণ না স্পষ্ট করে আমাদের জানানো হচ্ছে, তত ক্ষণ আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।’’

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, এভিবিপি, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ-সহ সঙ্ঘ পরিবারের একাধিক সংগঠনের ডাকে কলকাতায় বাংলাদেশের উপদূতাবাস অভিযানে জড়ো হন অনেকে। মিছিল করে তাঁরা পৌঁছোন বেকবাগান এলাকায়। তবে বাংলাদেশের উপদূতাবাসের সামনে পৌঁছোনোর আগেই বিক্ষোভকারীদের আটকে দেয় পুলিশ। সেই নিয়ে দু’পক্ষের ধস্তাধস্তি হয়।

Advertisement

শুভেন্দু বলেন, ‘‘উপদূতাবাসে আমাদের ঢুকতে দিয়ে যদি কথা বলে, তা হলে ভাল। কথা যদি না বলে, তা হলে বাইরের রাস্তা আমাদের। আমরা যা করার করব। এখানে সুস্থ ভাবে কাজ করতে দেব না।’’ এ নিয়ে তিনি কী পদক্ষেপ করবেন, তা অবশ্য এর থেকে বেশি স্পষ্ট করেননি। এর পরে তিনি ব্যক্তিগত মতামতও জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলাদেশের ব‍্যাপারে কী পদক্ষেপ হবে, তা বিদেশ মন্ত্রকের বিষয়। সে বিষয়ে আমি বলতে পারব না। তবে আমার ব‍্যক্তিগত মত, সব বন্ধ করে দেওয়া উচিত। কোনও কিছু এখান থেকে বাংলাদেশে যাবে না, সেই ব‍্যবস্থা করা উচিত।’’

এই বিষয়ে শুভেন্দু অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাকেও সমর্থন জানান। হিমন্ত বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সব কূটনৈতিক সম্পর্ক শেষ করা উচিত, এ বার ‘সার্জারি’ চাই। শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমি হিমন্তকে সম্পূর্ণ সমর্থন করি। তিনি যদি এ কথা বলে থাকেন, তা হলে ঠিক বলেছেন। বাংলাদেশের পরিস্থিতি কী রকম, তা আমরা পাঁচটা রাজ‍্য সবচেয়ে ভাল বুঝি, যারা বাংলাদেশ সীমান্তে আছি। হিমন্ত পরিস্থিতি জানেন। তাই ঠিক বলেছেন।’’ তার পরেই তিনি সুর চড়িয়ে বলেন, ‘‘ওদের এ বার গুঁতো দেওয়ার দরকার। গুঁতো না দিলে ঠিক হবে না। আফগানিস্তানের তালিবান যেমন গুঁতো খেয়ে এখন ঠিক হয়ে গিয়েছে, তেমন বাংলাদেশও গুঁতো খেলে ঠিক হবে।’’

এই প্রসঙ্গে সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে তৃণমূল পাল্টা আঙুল তুলেছে প্রধানমন্ত্রীর দিকে। তারা লিখেছে, ‘বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বিদেশ মন্ত্রক।’ তৃণমূল জানিয়েছে, এই নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর কোনও মন্তব্য করেননি। তৃণমূলের তরফে এক্স অ্যাকাউন্টে লেখা হয়েছে, ‘কেন্দ্র যেখানে পক্ষাঘাতগ্রস্তের মতো আচরণ করেছে, সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাষ্ট্রনেতার মতো আচরণ করেছেন। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে সহায়তার হাত বাড়ানোর পাশাপাশি রাষ্ট্রপুঞ্জের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে কথা বলার আর্জি জানিয়েছেন। তাদের বাংলাদেশে সুস্থিরতা ফেরানোর জন্য শান্তি বাহিনী মোতায়েন করার কথা বলতেও আবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রীকে। নেতা এ রকমই হওয়া উচিত।’

তৃণমূল এখানেই থামেনি। তারা এক্স অ্যাকাউন্টে কটাক্ষ করে লিখেছে, ‘যে প্রধানমন্ত্রী সব সময় অতি সক্রিয় থাকেন, সমাজমাধ্যম নিয়ে যাঁর এত উৎসাহ, তিনি বাংলাদেশে দীপু দাসের হত্যা নিয়ে চুপ কেন? মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমীকরণের কারণেই কি?’ তৃণমূলের আরও অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী যখন এ রকম পন্থা নিয়েছেন, তখন পশ্চিমবঙ্গে ‘সাম্প্রদায়িক হিংসা’ উসকে দিতে প্ররোচনা দিচ্ছে রাজ্য বিজেপি। তৃণমূল লিখেছে, ‘যে শুভেন্দু অধিকারী বাংলাকে অশান্ত করার জন্য আজ বিষ উগরে দিচ্ছেন, তিনিই কয়েক মাস আগে ইউনূস সরকারের প্রশংসা করেছিলেন। বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচিত সরকারের থেকে তারা ভাল কাজ করছে। যখন কোনও বিজেপি নেতা দেশের নির্বাচিত সরকারকে হেয় করে অন্য রাষ্ট্রের শাসনের প্রশংসা করে, তখন কি তা দেশবিরোধী আচরণ নয়?’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement