শিবপুর ফেরিঘাটের জেটি। — নিজস্ব চিত্র
লঞ্চঘাটের জেটি কংক্রিটের হবে না ভাসমান— শুধু এই সরকারি সিদ্ধান্ত নিতেই কেটে গিয়েছে পাঁচ মাস। ফলে কোটালের বানে ভেঙে পড়া জেটি আজও সারানো যায়নি। যার নিট ফল, দীর্ঘ পাঁচ মাস বন্ধ হয়ে রয়েছে শিবপুর ফেরিঘাট। বন্ধ যাত্রী পারাপার। নিত্য দিন নাজেহাল হচ্ছেন কলকাতার দিক থেকে জলপথে নবান্নে আসা সরকারি কর্মী ও এলাকার কয়েকশো নিত্যযাত্রী।
রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক দফতর হাওড়ার দিকে নবান্নে উঠে আসার পরে জলপথে যোগাযোগের উন্নতির জন্য গঙ্গার ফেরিঘাটগুলি সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো বছর দুয়েক আগে সেচ দফতর প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে শিবপুর ফেরিঘাটের সংস্কার করেছিল। কিন্তু গত দু’বছরের মধ্যে বানের ধাক্কায় দু’বার জেটিটি ভেঙে পড়ে। শেষ ঘটনাটি ঘটে গত ৭ এপ্রিল। কোটালের বানে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় লঞ্চঘাটটি। লোহার শিকল ছিঁড়ে ভেসে যায় পন্টুন ও গ্যাংওয়ে (জেটির হাঁটাচলার রাস্তা)। সে দিন থেকেই বন্ধ হয়ে যায় শিবপুর থেকে চাঁদপাল ঘাট লঞ্চ চলাচল।
ওই ঘটনার পরে লঞ্চঘাটটির রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, জেটিটি বারবার কোটালের বানে ভেঙে যাওয়ার কারণে রাজ্য পরিবহণ দফতর সেটি কংক্রিটের করার পরিকল্পনা করেছে। সে জন্য দরপত্র ডাকার প্রক্রিয়াও চলছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে, কংক্রিটের জেটি তো দূর, ভাঙা জেটিও সারানো হয়নি গত পাঁচ মাসে।
কেন এই টালবাহানা? জানা গিয়েছে, এর মূলে ছিল রাজ্যের বিধানসভা ভোট। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, গত এপ্রিলে জেটি ভেঙে পড়ার পরে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি থেকে জেটিটি কংক্রিটের করার আবেদন জানানো হয়েছিল। সে জন্য পরিবহণ কর্তাদের নিয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। কী ভাবে কাজ হবে, তা ঠিক করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ওই কমিটিকে। আরও ঠিক হয়, জেটি সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ করবে পরিবহণ দফতরই। কিন্তু এর পরেই ভোট এসে যাওয়ায় থমকে যায় পুরো প্রক্রিয়া।
পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘নতুন মন্ত্রিসভা তৈরি হওয়ার পরে অনেকটা সময় কেটে যায় জেটিটি কংক্রিটের হবে না ভাসমান— তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়েছে, জেটিটি ভাসমানই করা হবে।’’
তার পরেও এত দিন লাগছে কেন? ওই কর্তা বলেন, ‘‘প্রকল্প ও প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। এখন শুধু অনুমোদনের অপেক্ষা। তা মিললেই জেটির গ্যাংওয়ে ও পন্টুন তৈরির কাজ শুরু হবে। কাজ শেষ হলে যত শীঘ্র সম্ভব লঞ্চঘাট চালু করা হবে। তবে সব মিলিয়ে কত দিন লাগবে, তা বলতে পারব না।’’
এ দিকে জেটিটি কংক্রিটের না হয়ে যে ভাসমানই রাখা হচ্ছে, সেই খবরই জানেন না লঞ্চঘাটটির রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা, হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান অশোক ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘কংক্রিটের জেটি করতে হবে বলেই এত সময় লাগছে। আশা করছি শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।’’