বিভেদের মাঝেই যোগাযোগের সূত্রের খোঁজ

রাজনীতির নানা রঙের লড়াইয়ের মাঝে এক-একটি গোষ্ঠীর মানুষকে তুষ্ট রাখার কথা বলছে এক-এক দল। পাওয়া না-পাওয়ার হিসেব কষে বুঝিয়ে দিচ্ছে, দুনিয়াটা প্রত্যেকের জন্য আলাদা

Advertisement

সুচন্দ্রা ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৯ ০১:১২
Share:

দূরে যাওয়ার নয়, বরং কাছে আসার চেষ্টা করলে ঘুচতে পারে কিছু সমস্যা

রাজনীতির নানা রঙের লড়াইয়ের মাঝে এক-একটি গোষ্ঠীর মানুষকে তুষ্ট রাখার কথা বলছে এক-এক দল। পাওয়া না-পাওয়ার হিসেব কষে বুঝিয়ে দিচ্ছে, দুনিয়াটা প্রত্যেকের জন্য আলাদা। ভোটের রাজনীতির সেই ফাঁদে পড়ে দূরত্ব বাড়ছে পড়শি, বন্ধু, আত্মীয়দের মধ্যে। এমন সময়েই নবীনদের একটি দল মেতেছে কিছু মিল খুঁজতে। বিভেদ বাড়িয়ে চলার অনুশীলনে মজে থাকা সময়টাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে, শ্রেণি-জাত-ধর্ম-দল নির্বিশেষে আজও সঙ্কটগুলি এক। ফলে এ সময়টা দূরে যাওয়ার নয়, বরং কাছে আসার চেষ্টা করলে ঘুচতে পারে কিছু সমস্যা। একে অপরের পাশে থেকে মোকাবিলা করা যায় সঙ্কটের।

Advertisement

কাজটা সহজ নয় ঠিকই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল পড়ুয়ার মুখেও শোনা গেল সে কথা। যেমন, মণ্ডপ তৈরির কাজে যুক্ত এক তরুণের সঙ্গে হঠাৎ বসে কী গল্প করবেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের কোনও ছাত্রী? কী দিয়ে শুরু হবে কথা? নবমিতা নামে ওই তরুণী জানালেন, সমবয়সি মিঠুর সঙ্গে কথা শুরু করার সময়ে ভাবনা হয়েছিল তাঁর। অচেনা একটি মেয়ের সঙ্গে কথা বলা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন মিঠুও। তবে গল্প এগোতে সময় নেয়নি। নবমিতা বলছিলেন, ‘‘কথা বলে বুঝলাম, মিঠুর যে সব জিনিস নিয়ে ভাবনা হয়, আমার অন্য বন্ধুদেরও তেমনই হয়। আমরা এক ভাবে তা প্রকাশ করে অভ্যস্ত, মিঠুর ভঙ্গিটা হয়তো আলাদা।’’ নবমিতার বক্তব্য, তাঁদের বয়সের অধিকাংশেরই চিন্তা ভবিষ্যৎ নিয়ে। মিঠুরও তা-ই। সামনের দিনে কে কী করতে পারেন, তা নিয়ে কথা বলা, বাবা-মায়েরা কী ভাবেন তা নিয়ে আলোচনা— এমন সব বিষয় উঠতেই মিঠুর সঙ্গে মিল পেতে শুরু করেন নবমিতা। মিঠুরও বক্তব্য একই। তাঁর বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে যে, এ ভাবে কথোপকথনে কী লাভ হতে পারে অন্যদের। তাঁদের আড্ডার রেকর্ডিং কেনই বা দেখবেন অপরিচিত কেউ? তবে তিনি বলেন, ‘‘কাজটা করতে আমার ভালই লেগেছে।’’

মিঠুদের মতো এই আড্ডার অনুশীলনে যাদবপুরের অনির্বাণ চক্রবর্তী, অনন্যা বর্মণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন সোনারপুর কলেজের অর্পিতা দেবনাথ আর দেবিকা দেবনাথ। সুন্দরবন অঞ্চলের মেয়ে অর্পিতা আনন্দ পেয়েছেন এই কাজে যুক্ত হয়ে। সদ্য আলাপ হওয়া বন্ধু অনির্বাণকে গল্পে গল্পে জানিয়েছেন, তাঁর গ্রামের পরিবেশ থেকে কতটা আলাদা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জগৎটা। তবু তাঁদের গল্পও এক সময়ে এগিয়েছে নারীবাদ, জাতপাতের মতো নানা সমস্যা নিয়ে।

Advertisement

তরুণদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের এই কাজে পথ দেখাচ্ছেন শিক্ষকেরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অভিজিৎ রায় দু’জনেই সাহায্য করছেন একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকার সূত্রটা খুঁজতে। সঞ্জীববাবু বলছিলেন, ‘‘এক দিনে অনেক বদল ঘটবে, এমন আশা করি না। তবে একই ভাবে না দেখে নিজের শহর এবং সমাজটাকে যে অন্য দিক থেকেও দেখা যায়, সেটাই বোঝানোর চেষ্টা চলছে।’’ অভিজিৎবাবুর বক্তব্য, এর মাধ্যমে ইতিমধ্যেই আদানপ্রদান হতে শুরু করেছে পেশাদারি জ্ঞান। তিনি বলেন, ‘‘কেউই তো সবটা জানেন না। নিজের না জানার জায়গাগুলি স্পষ্ট হয়ে উঠছে এ ভাবে। এর ফলে অন্যের সঙ্গে মেশার তাগিদটা বাড়ে।’’

কিন্তু এ ভাবে কি বদলানো যায় চিন্তাধারা? এমন অবশ্য ভাবেন না ওঁরা কেউই। তবে সামাজিক যোগাযোগ স্থাপনের এই অনুশীলন চালাতে গিয়ে চিনে ফেলা যায় অসুবিধার মোড়গুলি, বলছিলেন সঞ্জীববাবু। ‘পোরাস সিটি’ নামে এই প্রোজেক্ট সেই কারণেই উৎসাহ জোগাচ্ছে তাঁদের। নিজেদের ওয়েবসাইট, ইনস্টাগ্রামে সে কাজ অন্যদেরও দেখাচ্ছেন ওঁরা। সকলেই অলিগলি দিয়ে চলার ফাঁকে দাঁড়িয়ে পড়ছেন হঠাৎ কারও সঙ্গে গল্প জমাতে। কখনও পৌঁছচ্ছেন বিহারি ট্যাক্সিচালকদের খাওয়ার আড্ডায়, কারও ফুটপাতের সংসারে। ফিরিয়ে আনছেন প্রাক্‌-ইন্টারনেট যুগের কথা বলার অভ্যাস। সকলের কাছে তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন ইন্টারনেটের মাধ্যমেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন