আগুনে আতঙ্ক নিউ মার্কেটে

দিনের বেচাকেনা শেষ। নিউ মার্কেট তখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পসরা গোটাতে ব্যস্ত এলাকার হকারেরাও। হঠাৎই তাঁরা দেখতে পান, ঝাঁপ-বন্ধ একটি দোকানের ভিতর থেকে গলগলিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বৃহস্পতিবার রাত তখন পৌনে ৯টা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৫ ২১:৫৭
Share:

দিনের বেচাকেনা শেষ। নিউ মার্কেট তখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পসরা গোটাতে ব্যস্ত এলাকার হকারেরাও। হঠাৎই তাঁরা দেখতে পান, ঝাঁপ-বন্ধ একটি দোকানের ভিতর থেকে গলগলিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বৃহস্পতিবার রাত তখন পৌনে ৯টা। চলে আসে দমকলের ১০টি ইঞ্জিন। প্রথমে নিউ মার্কেটের একটি কোলাপসিবল গেটের তালা ভাঙেন দমকলকর্মীরা। তার পরে ভিতরে ঢুকে শুরু করেন আগুন নেভানোর কাজ।

Advertisement

একটি পোশাকের দোকানে আগুন লেগেছিল বলে জানায় দমকল। তবে আগুন লাগার কারণ গভীর রাত পর্যন্ত জানাতে পারেনি তারা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগুন তড়িঘড়ি চোখে পড়ায় বড় বিপদ এড়ানো গিয়েছে। দমকল সূত্রের খবর, নিউ মার্কেটে বারবার অগ্নিকাণ্ডের অভিজ্ঞতা থেকে তারা কোনও ঝুঁকি নেয়নি। নিউ মার্কেটের অদূরে দমকলের সদর দফতর থেকে ১০টি ইঞ্জিন পাঠিয়ে দেওয়া হয় প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। পরে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের দমকল কেন্দ্র থেকে যায় আরও দু’টি ইঞ্জিন। পৌঁছে যায় কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও। দমকলের সঙ্গে ব্যবসায়ীরাও আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগান।

আগুন নেভাতে ব্যস্ত দমকল। —নিজস্ব চিত্র।

Advertisement

দমকল সূত্রের খবর, পোশাকের দোকানটি ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছিল। শাটার ভাঙতেই তা বাজারের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। তবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় ওই দোকানের ভিতরেই আগুন আটকে রাখা সম্ভব হয়েছে। ওই দোকান ছাড়া অন্য কোনও দোকানের তেমন ক্ষতি হয়নি। এই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। এ বারের বিপদ অল্পের উপর দিয়ে গেলেও কয়েকটি প্রশ্ন উঠছেই। সব থেকে বড় প্রশ্ন, আগুন নিউ মার্কেটের পিছু ছাড়ছে না কেন? সেখানে অগ্নি প্রতিরোধে মজবুত ব্যবস্থা আদৌ আছে কি? থাকলে বারবার আগুন লাগছে কী ভাবে? ১৯৮৫-র ১৩ ডিসেম্বর নিউ মার্কেটের মূল ভবনে আগুন লেগেছিল। সেই বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে ছারখার হয়ে যায় ওই ঐতিহ্যবাহী বাজার। ২০১১-র ২০ জুলাই ফের আগুন লাগে নিউ মার্কেটে। চলতি বছরের ১৮ মে পুড়ে যায় ওই বাজারের মাছপট্টি। ২৬ এপ্রিল নিউ মার্কেট সংলগ্ন বিপণি সিটি মার্টেও আগুন লাগে।

বিপর্যয়ের এই দীর্ঘ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে কেন ওই বাজারে আগুন ঠেকানোর নিশ্ছিদ্র বন্দোবস্ত করা হচ্ছে না, সেটা বিরাট রহস্য বলে মনে করছেন নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। তাঁদের একাংশের অভিযোগ, এত বড় বাজারে ন্যূনতম অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। যখনই আগুন লাগে, তা নিয়ে দিন কয়েক হইচই হয়। তার পর সব থিতিয়ে যায়। ওই ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিউ মার্কেটে বিদ্যুতের অসংখ্য মিটারের উপরে আচ্ছাদন নেই। তাই বৃষ্টির জল পড়লেই শর্ট সার্কিট হয়। এক মাসে ৬-৭টি এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তাঁরা।

তবে এই নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি হগ মার্কেট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অশোক গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘আমরা আমাদের সমস্যার কথা পুরসভাকে জানিয়েছি।’’ বৃহস্পতিবার রাতে আগুন লাগার পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং ডেপুটি মেয়র ইকবাল আহমেদ। নিউ মার্কেটে বারবার আগুন লাগছে কেন, সেই প্রশ্ন তোলা হলে মন্ত্রী শুধু বলেন, ‘‘আমরা পুলিশ, পুরসভা, দমকল ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন