পড়শির ঘরে আগুন, দরজা খুলল না কেউ

সোমবার সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ এমনই নাটকীয় উদ্ধার পর্বের সাক্ষী থাকল শ্যামবাজারের খন্না এলাকার মাধব দাস লেন। পুলিশ জানিয়েছে, ওই এলাকার একটি বাড়ির একতলায় কাপড়ের গুদামে আগুন লাগে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৪
Share:

পোড়া জিনিস বার করে আনছেন স্থানীয় যুবকেরা। সোমবার, খন্না এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

গায়ে-গায়ে লাগোয়া তিনটি দোতলা বাড়ি। মাঝখানের বাড়ি থেকে গলগল করে বেরোচ্ছে কালো ধোঁয়া। নীচের তলায় দেখা যাচ্ছে আগুনের হলকা। উপরের তলা থেকে ভেসে আসছে চিৎকার। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, আগুনে আটকে পড়েছে বেশ কয়েক জন। এর কিছু পরেই দেখা গেল, বাঁ পাশের বাড়ির একতলায় প্রবল ধাক্কাধাক্কি করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। উদ্দেশ্য, ছাদে উঠে পাশের বাড়িতে ঢুকে আটকে থাকা মানুষদের উদ্ধার করা। একই ধাক্কাধাক্কি চলছে ডান পাশের বাড়িতেও।

Advertisement

অভিযোগ, দরজা খোলেননি বাঁ পাশের বাড়ির বাসিন্দারা। পুলিশ ও দমকল কর্মীরা বাধ্য হয়ে দরজা ভাঙেন। কিন্তু ছাদে পৌঁছে দেখা যায়, ইতিমধ্যেই ডান পাশের বাড়ির ছাদে পৌঁছতে পেরেছেন স্থানীয় যুবকেরা। জোগাড় করেছেন মই-ও। তার সাহায্যে ধীরে ধীরে পাঁচিল টপকে পাশের ছাদে নামছেন বৃদ্ধা, তরুণী ও দুই শিশু।

সোমবার সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ এমনই নাটকীয় উদ্ধার পর্বের সাক্ষী থাকল শ্যামবাজারের খন্না এলাকার মাধব দাস লেন। পুলিশ জানিয়েছে, ওই এলাকার একটি বাড়ির একতলায় কাপড়ের গুদামে আগুন লাগে। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন ঘণ্টাখানেকের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। হতাহতের খবর নেই। দমকল জানায়, শট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছিল কাপ়ড়ের গুদামে।

Advertisement

বাড়ির ছাদের এই উদ্ধার পর্বের কিছু আগেই ঘরের ভিতরের দৃশ্যটা অন্য রকম ছিল। নাতি নাতনিকে নিয়ে জলখাবার খেতে বসেছিলেন কৃষ্ণা সরকার। হঠাৎই কালো ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে আসে। আগুন লেগেছে বুঝতে পেরেই চিৎকার করে ওঠেন তিনি। চার বছরের নাতি আর দু’বছরের নাতনির হাত ধরে দৌড়ন সিঁড়ির দিকে। কিন্তু প্রচণ্ড ধোঁয়া আর তীব্র হলকায় ফিরে আসেন আবার। নামতে পারেননি। চিৎকার করলেও কারও সাড়া মেলেনি বলেই জানিয়েছেন তিনি।

ঘরেই ছিলেন কৃষ্ণাদেবীর মেয়ে ঝিলিক সাহা। তিনি জানান, কালো ধোঁয়া দেখার পরেই মা চিৎকার শুরু করেন। কিন্তু প্রতিবেশীরা কেউ সাড়া দেননি। তাঁর কথায়, ‘‘দুশ্চিন্তা হচ্ছিল ছেলেমেয়েদের নিয়ে। কী ভাবে ওদের বার করব বুঝতে পারছিলাম না।’’ আতঙ্ক কাটছে না বৃদ্ধার নাতি সৃজিত সাহার। ‘‘আগুন দেখিনি। তবে ধোঁয়ায় দম আটকে যাচ্ছিল। সব্বাই ছুটছিলাম। বুঝতে পারছিলাম না, কী ভাবে বাইরে যাব। ভয় লাগছিল!’’— বলে চার বছরের খুদে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বা়ড়ি থেকে কালো ধোঁয়া দেখে তাঁরা বন্ধ গুদামের তালা ভাঙেন। দেখেন আগুন লেগেছে। তার পরে ছুটে উপরে উঠতে যান। কিন্তু ধোঁয়া আর আগুনের হলকায় উঠতে পারেননি। এ দিকে তত ক্ষণে জানা গিয়েছে, বাড়ির ভিতরে মহিলা আর শিশুরা আটকে রয়েছেন। তখনই বাঁ পাশের বাড়ির ছাদ দিয়ে ঢোকার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, তাঁরা বহু বার বললেও দরজা খুলতে রাজি হননি ওই বাড়ির বাসিন্দারা। তখনই অন্য পাশের বাড়িতে যান তাঁরা। ইতিমধ্যে দমকল পৌঁছে কাজ শুরু করে। যে বাড়িতে দরজা খুলতে আপত্তি জানানো হয়, সেই বাড়ির দরজা ভেঙে ফেলা হয়। ওই বাড়ির বাসিন্দাদের তরফে অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন