আগুন-আতঙ্কের আঁচ শিশু হাসপাতালেও

পুলিশ ও দমকল সূত্রে খবর, রবিবার সকালে পার্ক সার্কাসের শিশু হাসপাতালের সামনে ডাঃ বীরেশ গুহ স্ট্রিটের ওপারে একটি মিষ্টির দোকানে প্রথমে আগুন লাগে। দোকানটির পিছন দিকে গ্যাস জ্বালিয়ে মিষ্টি তৈরি হচ্ছিল তখন। দমকল জানিয়েছে, গ্যাসের পাইপ লিক করে সারা দোকানে আগুন ধরে যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৭ ০১:৪৯
Share:

সাহায্য: আগুন নেভাতে হাত লাগিয়েছেন স্থানীয়েরাও। (ইনসেটে) শিশু হাসপাতালের জানলায় উদ্বিগ্ন মুখের ভিড়। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

বাড়ি যাওয়ার জন্য পার্ক সার্কাসের ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ থেকে সবে বেরোচ্ছিলেন হাসপাতালের কর্মী হারু দাস। হঠাৎ চোখে পড়ে, রাস্তার ওপারে একটি খাবারের দোকান থেকে গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। তখনই দমকলে খবর দেন তিনি। রবিবার সকালে দমকলের ছ’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু ততক্ষণে পুড়ে গিয়েছে এলাকার পাঁচটি দোকান। ছড়িয়েছে আতঙ্কও। যার জেরে পাশের ওয়ার্ডে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় শিশু হাসপাতালের দোতলা ও তিনতলার বাচ্চাদের।

Advertisement

পুলিশ ও দমকল সূত্রে খবর, রবিবার সকালে পার্ক সার্কাসের শিশু হাসপাতালের সামনে ডাঃ বীরেশ গুহ স্ট্রিটের ওপারে একটি মিষ্টির দোকানে প্রথমে আগুন লাগে। দোকানটির পিছন দিকে গ্যাস জ্বালিয়ে মিষ্টি তৈরি হচ্ছিল তখন। দমকল জানিয়েছে, গ্যাসের পাইপ লিক করে সারা দোকানে আগুন ধরে যায়। ওই দোকান থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের দোকানগুলিতে। মিষ্টির দোকানের কর্মীদের চিৎকারে আগুন নেভাতে প্রথম হাত লাগান স্থানীয় বাসিন্দারা। পাশের একটি তিনতলা বাড়ির ছাদ থেকে বালতি করে জল ফেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা হয়।

তবু বাঁচানো যায়নি ক্ষতি। স্থানীয়দের অভিযোগ, দমকলের গাড়ি দেরিতে পৌঁছনোয় মিষ্টির দোকানের আগুন আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। হারুবাবুর অভিযোগ, ‘‘সকাল ৯.২০ নাগাদ দমকলে ফোন করি। গাড়ি আসতে আসতে দশটা বেজে যায়।’’ স্থানীয়দের প্রশ্ন, রবিবার ছুটির দিন হওয়ায় ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে সদর দফতর ও প্রগতি ময়দান দমকল কেন্দ্র থেকে গাড়ি পৌঁছতে চল্লিশ মিনিট লাগার কথা নয়। দমকল দ্রুত পৌঁছলে আগুন এতটা ছড়াত না।’’ এ প্রসঙ্গে দমকলের অধিকর্তা তরুণ সিংহ বলেন, ‘‘আগুনের খবর পাওয়া মাত্রই দমকলের তিনটি ইঞ্জিন সদর দফতর থেকে রওনা দিয়েছিল। দমকলের গাড়ি বেরোনোর সময়ে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে যানজট ছিল।’’ তরুণবাবুর দাবি, ‘‘ঘটনাস্থলে পৌঁছতে কিছুটা তো সময় লাগবেই। ইচ্ছে করে দমকল কখনও দেরি করে না।’’

Advertisement

আগুনের খবর ছড়াতেই আতঙ্ক সৃষ্টি হয় ওপারের শিশু হাসপাতালে। রাস্তা লাগোয়া হাসপাতালের দোতলা ও তিনতলার দু’টি ওয়ার্ডে ধোঁয়া ঢুকে পড়ায় অসুস্থ শিশুদের পাশের ওয়ার্ডে সরিয়ে দেওয়া হয়। ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথের দোতলায় ডাঃ অমল দাস ওয়ার্ডে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার ভর্তি হয় পাঁচ বছরের অদ্রিজা সর্দার। অদ্রিজার মা সোমা সর্দার বলেন, ‘‘ধোঁয়ায় তখন দমবন্ধ হয়ে আসছিল। আগুনের আঁচে ঘরও গরম হয়ে গিয়েছে। আমরা তখন আতঙ্কের মধ্যে ছিলাম। নিরাপত্তারক্ষীদের খবর দেওয়ার পরে তাঁরা প্রথমে এসে ঘরের সমস্ত জানালা বন্ধ করে দিয়ে আমাদের পাশের ওয়ার্ডে নিয়ে যান।’’ পাশের ওয়ার্ডে আধ ঘণ্টা থাকার পরে ফের আগের ওয়ার্ডে তাঁদের ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয় বলে জানান আর এক শিশুর মা রফিকা বেগম। ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথের চিফ অপারেটিং অফিসার দেবপ্রসাদ সরকার বলেন, ‘‘হাসপাতালের উল্টো দিকেই আগুন লেগেছিল। আগাম প্রতিরোধী ব্যবস্থা নিতে রাস্তার লাগোয়া দোতলা ও তিনতলার দু’টি ঘর থেকে বাচ্চাদের সরিয়ে নেওয়া হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন