বিপজ্জনক বাড়ি না ভাঙার মতো অগ্নিবিধি না মানা বাড়ির ক্ষেত্রেও ‘মানবিক’ হতে চায় কলকাতা পুরসভা। তাই অগ্নি-নির্বাপণে সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা না হলেও অনেক বহুতলেই ব্যবসার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে আগুন লাগার পরে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় সে কথা কার্যত স্বীকার করে নিলেন।
ঠিক যেমন হয়েছিল স্টিফেন কোর্টে অগ্নিকাণ্ডের পরে, এ দিনও তেমনই হল। অগ্নি-সুরক্ষার স্বার্থে জরুরি বৈঠকে বসলেন দমকলমন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান, মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ। সিদ্ধান্ত হল, ফের গড়া হবে বিশেষ কমিটি। শহরের বিভিন্ন বহুতলের হাল ঘুরে দেখবেন কমিটির প্রতিনিধিরা। কথার কথায় উঠে এল আগের কমিটির কাজের রিপোর্টের প্রসঙ্গ। শহর জুড়ে সমীক্ষা চালিয়ে ওই নিরাপত্তা কমিটি ৪২টি বহুতলের (অধিকাংশই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান) বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছিল, তাদের যেন লাইসেন্স দেওয়া না হয়। কমিটির সেই রিপোর্ট পুরোপুরি না মেনেই মাস কয়েক আগে ওই সব বহুতলে ব্যবসার ছাড়পত্র দিয়েছে পুর-প্রশাসন। এ দিন ফের কমিটি গঠনের পরে সেই প্রশ্ন তোলায় বিষয়টি এড়িয়ে যান দমকলমন্ত্রী ও মেয়র, দু’জনেই। পরে মেয়র বলেন, “সব কিছু বিরোধিতার দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা ঠিক নয়।” তাঁর বক্তব্য, কেউ কেউ কাজ করেছেন বলেই লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। মানবিক কারণেই বাকিদের শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, “ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে লোকসান হচ্ছিল। আয় কমেছিল পুরসভারও।” অর্থাৎ, ‘মানবিক’ কারণে অগ্নিবিধি না মানা বাড়িকেও ছাড় দিয়েছে পুরসভা।
আগুনের গ্রাস...সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন।
চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালের অগ্নিকাণ্ডের জের সামলাতে আপাতত সে সব তর্কে যোগ দিতে নারাজ পুর-প্রশাসন। মঙ্গলবারের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, শহরে দশতলার বেশি যে সব বিল্ডিং রয়েছে, তার তালিকা তৈরি হবে। ওই তালিকা ধরে চলবে সমীক্ষা। মেয়রের কথায়, “প্রতি মাসেই একটি করে বৈঠক হবে ওই কমিটির। তাঁদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই অগ্নি-নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালে প্রায় ১৮৭টি সংস্থার অফিস ছিল বলে এ দিন জানিয়েছেন মেয়র। শোভনবাবুর বক্তব্য, এর মধ্যে ১৭৩টি সংস্থা গত বারও (২০১৩-১৪) পুরসভা থেকে লাইসেন্স নিয়েছিল। এ বার অর্থাৎ, ২০১৪-১৫ সালে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৫৯টি সংস্থা লাইসেন্স নবীকরণ করিয়েছে। বাকি ১১৪ সংস্থা এখনও পুরসভার কাছে লাইসেন্স নবীকরণই করেনি। অর্থাৎ, ওই সব সংস্থা লাইসেন্স ছাড়াই সেখানে কাজকর্ম চালাচ্ছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটায় পুর-প্রশাসনের নজরে বিষয়টি এসেছে বলে মনে করেন পুরকর্তারা। বিনা লাইসেন্সে এতগুলি প্রতিষ্ঠান চললেও পুরসভা নীরব কেন, এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জবাব মেলেনি মেয়রের কাছে।
দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান জানান, দমকলের নিয়মে বলা আছে চারতলার বেশি উঁচু (জি+৪) বাড়ির ক্ষেত্রে অগ্নিবিধি মেনে চলতেই হয়। বর্তমানে শহরে প্রায় ৮ লক্ষ তেমন বাড়ি রয়েছে। তিনি বলেন, “সব বাড়ি অগ্নিবিধি মেনে চলছে কি না, তা দেখা খুবই শক্ত কাজ। নিজেদের সুরক্ষায় বাড়ির বাসিন্দাদেরও এ ব্যাপারে সজাগ হওয়া দরকার।”