Pollution

লক্ষ্মীপুজোতেই শব্দবাজির ব্যাটিং, আতঙ্ক দীপাবলি নিয়ে

এ শহরের বাজি ব্যবসায়ীদের অবশ্য দাবি, কলকাতার বাজারে নিষিদ্ধ শব্দবাজি বিক্রি হয় নাবললেই চলে। কারণ, বাজি ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে এখন খুবই সতর্ক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২২ ০৮:২২
Share:

প্রতীকী ছবি।

সতর্কতা তো নেই-ই। যাবতীয় সচেতনতার প্রচারও কার্যত শিকেয়! যার জেরে কালীপুজো পর্যন্তঅপেক্ষা আর করতে হল না। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর রাতেই তাণ্ডব শুরু হয়ে গেল শব্দবাজির। পুলিশের নজর এড়িয়েই শহরের একাধিক জায়গায় উৎসবের নামে চলল শব্দের দৌরাত্ম্য। বিকট আওয়াজে কেঁপে উঠল এলাকা। নাগরিকদের অনেকেরই প্রশ্ন, লক্ষ্মীপুজোতেই যদি শব্দবাজির এই তাণ্ডব হয়, তা হলে সপ্তাহ দুয়েক বাদেদীপাবলি ও কালীপুজোর দিন কী অবস্থা হবে?

Advertisement

রবিবার, লক্ষ্মীপুজোর রাতে শহরের একাধিক এলাকায়শব্দবাজির তাণ্ডব চলেছে বলে অভিযোগ। কাশীপুর, ঠাকুরপুকুর, গড়িয়া, ব্রহ্মপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় সন্ধ্যা থেকেই নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।তাঁদের আরও অভিযোগ, নজরদারি তো দূর, এলাকা কাঁপিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে বাজির দাপট চললেও পুলিশ তা থামাতে হাজির হয়নি। শব্দবাজির দৌরাত্ম্যের এই বিষয়টি চিন্তায় ফেলেছে পরিবেশবিদদেরও। কলকাতা শহরেরসচেতন নাগরিকদের পাশাপাশি পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত লোকজনের অনেকেরই বক্তব্য, প্রশাসনের এই গা-ছাড়া মনোভাবই শব্দবাজির বিক্রেতা ও ব্যবহারকারীদের সাহস দিনদিন আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। গড়িয়ার বাসিন্দা পূবালি দাস নামেএক মহিলা বললেন, ‘‘রাতে মাঝেমধ্যেই এমন এক-একটা আওয়াজ হয়েছে যে, আমাদের কানে তালা লেগে যাওয়ার জোগাড়। ওই আওয়াজের ভয়ে কাল থেকে রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছে বাড়ির পোষ্যটিও। লক্ষ্মীপুজোতেই যদি এ বার এই অবস্থা হয়, তা হলে কালীপুজো আর দীপাবলিতে কী হবে, ভেবেই আতঙ্কে আছি। পোষ্যটির জন্যও খুব চিন্তা হচ্ছে।’’

পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই এর জন্য প্রশাসনিক নজরদারিতে গাফিলতিরপাশাপাশি সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাবকেও দায়ী করছেন। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত আবার বললেন, ‘‘সবুজ বাজি, পরিবেশবান্ধব বাজি বলেআসলে কিছু হয় না। শব্দবাজির সঙ্গে কার্যত সব ধরনের বাজিই পরিবেশের জন্য খারাপ। ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বাজি ফাটাতে হবে, এমনটা তোকোথাও লেখা নেই। এটা আমাদেরই ব্যর্থতা যে, আমরা সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করতে পারিনি।’’ এর পাশাপাশি, প্রশাসনিক নজরদারিতে ব্যর্থতার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘বাজি বন্ধ করার ক্ষেত্রে প্রশাসনের তরফে যেতৎপরতা, আন্তরিকতা ও নজরদারি থাকা দরকার, এখানে তা কখনওই দেখা যায় না। তাদের গাফিলতির কারণেই আরও বেলাগাম হয়েছে বাজির এই দৌরাত্ম্য। এ ছাড়া, বেআইনি বাজির ব্যবসায়ীদের অনেকেই রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।’’

Advertisement

এ শহরের বাজি ব্যবসায়ীদের অবশ্য দাবি, কলকাতার বাজারে নিষিদ্ধ শব্দবাজি বিক্রি হয় নাবললেই চলে। কারণ, বাজি ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে এখন খুবই সতর্ক। এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, তা-ই যদি হবে, তা হলে নিষিদ্ধ বাজি ক্রেতারা পাচ্ছেন কোথা থেকে? বাজিব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, শহরতলির বাজার থেকেই যাবতীয় অবৈধ বাজি ঢুকছে শহরে। ‘বড়বাজার ফায়ারওয়ার্কস ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর জয়েন্ট সেক্রেটারি শান্তনু দত্তবললেন, ‘‘আমরাও তো শব্দবাজির বিপক্ষে। বাজারে বাজারে না ঘুরে যে সমস্ত এলাকার কারখানায় নিষিদ্ধ বাজি তৈরি হয়, সেখানেই বরং পুলিশ নজরদারি চালাক। তা হলেই এ সব বন্ধ হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘শহরতলির একাধিক বাজারে শব্দবাজি বিক্রি হয়। সেখান থেকে সেগুলি এসে পৌঁছচ্ছেক্রেতাদের হাতে।’’ কলকাতা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য জানালেন, উৎসবের মরসুম শুরু হওয়ার আগে থেকেই নিষিদ্ধ বাজির বিরুদ্ধে অভিযান চলছে তাঁদের। ইতিমধ্যেইকয়েকশো কেজি বাজি আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশি অভিযান চলছে। বাজারগুলিতেও নজর রাখা হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষকেও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। তা হলেই কমানো যাবে বাজির এমন দৌরাত্ম্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন