SSC Teacher Protest

টিভিতে মুখ দেখাতে নাটক হচ্ছে, বিকাশ ভবনে আন্দোলন করে কোর্টের রায় বদলানো যাবে না, চাকরিহারাদের তোপ ববির

বিকাশ ভবনের সামনে চাকরিহারাদের অবস্থান-বিক্ষোভ চলছে। শনিবার তাকেই কটাক্ষ করলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। জানালেন, এ ভাবে সুপ্রিম কোর্টের রায় বদলানো যাবে না।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২৫ ১৪:৫২
Share:

চাকরিহারা আন্দোলনকারীদের কটাক্ষ পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

বিকাশ ভবনের সামনে চাকরিহারারা ‘নাটক’ করছেন। তাঁরা আসলে টিভিতে ‘মুখ’ দেখাতে চান। শনিবার এমন মন্তব্যই করলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাকরিহারাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। তাঁর উপর ভরসা রাখলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। অনেকেই তা করেছেন। কিন্তু কিছু মানুষ এখনও আন্দোলন করে যাচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্টের রায় বিকাশ ভবনের সামনে আন্দোলন করে বদলানো যাবে না বলে মন্তব্য করেন ফিরহাদ।

Advertisement

দুর্নীতির অভিযোগে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর ২০১৬ সালের প্যানেল বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তার ফলে চাকরি গিয়েছে ২৫,৭৩৫ জনের। আদালতের রায়ের পর থেকেই চাকরিহারা এই শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীদের একাংশ পথে নেমেছেন। বৃহস্পতিবার থেকে বিকাশ ভবনের সামনে অবস্থানে বসেছেন চাকরিহারাদের ওই অংশ। ওই দিন রাতেই বিক্ষোভকারীদের উপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। শনিবার তাঁদের এই অবস্থানের তৃতীয় দিন। চাকরিহারাদের উপর পুলিশের বলপ্রয়োগের পর কিছুটা অস্বস্তিতে রাজ্য সরকার। ফিরহাদ হাকিম নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে, তিন দিনব্যাপী কেরিয়ার ও শিক্ষা মেলা ‘এডুকেশন ইন্টারফেস ২০২৫’ - এসে বলেন, ‘‘নেতাজি ইন্ডোরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, যা ব্যবস্থা করার করবেন। সেই বিশ্বাসটা রাখলেই হয়ে যেত। এত গোলমালের দরকার ছিল না। বেশির ভাগ মানুষই বাড়ি চলে গিয়েছেন। যাঁরা টিভিতে মুখ দেখাতে চান, তাঁরাই এখনও বসে আছেন। এটা নাটক হচ্ছে।’’

আন্দোলনের ফলে আইনি প্রক্রিয়ায় সমস্যা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন ফিরহাদ। তিনি বলেন, ‘‘যখন সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন যাবে, তখন যদি কেউ বলেন, শিক্ষকেরা আন্দোলন করছেন, তখন তো তাঁদেরই বিপদ বাড়বে। বিকাশ ভবনে কর্মীদের আটকে রাখা হয়েছিল। এ ভাবে মানুষের উপর অত্যাচার করে তো আন্দোলন চলতে পারে না। দুর্নীতির বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট দেখছে। তারা যা বিচার করেছে, সেটা তারাই বদলাতে পারে। বিকাশ ভবনে আন্দোলন করে তা বদলানো যাবে না।’’

Advertisement

ফিরহাদের মন্তব্যে ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছে বিকাশ ভবনের সামনে। চাকরিহারা আন্দোলনকারীদের এক জন বলেন, ‘‘সরকারের বা শাসকদলের কেউ তো এক বারও আমাদের সঙ্গে এসে দেখা করলেন না! এই ধরনের মন্তব্য আমরা গায়ে মাখি না। আমাদের হকের চাকরি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। বোধ থাকলে উনি এই মন্তব্য করতে পারতেন না।’’ অন্য এক চাকরিহারা বলেন, ‘‘মানবিকতা থাকলে উনি এটা বলতে পারতেন না। আমরা যোগ্য। এত দিন চাকরি করার পর আমাদের চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন আমরা রাস্তায় পড়ে আছি। এটা নাটক! ওঁর কথা মানি না।’’ আর এক জন বলেন, ‘‘এটা যদি নাটক হয়, তবে নাটকের সংজ্ঞা কী, দেখতে হবে। আমাদের চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ন্যায্য দাবিতে এই আন্দোলন করছি। এটাকে নাটক বললে কিছু করার নেই। আন্দোলন চলবে।’’

বিকাশ ভবনের সামনে যাঁরা বসে আছেন, তাঁদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী বা শিক্ষামন্ত্রীকে সশরীরে এসে তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে হবে। আশ্বস্ত করতে হবে। তাঁরা কোনও ভাবেই নতুন করে পরীক্ষায় বসবেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। এই দাবি নিয়ে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে বিকাশ ভবন ঘেরাও করেছিলেন বিক্ষোভকারীরা। দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে তাঁদের বচসা হয়। সন্ধ্যার পর বিকাশ ভবনের কর্মচারীদের ছুটি হলেও তাঁরা বাড়ি ফিরতে পারছিলেন না। কাউকে বেরোতে দেওয়া হচ্ছিল না। এর পরেই লাঠিচার্জ করে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। বাইরে বার করে আনা হয় আটক কর্মীদের। পুলিশ পরে সাংবাদিক বৈঠক করেও জানায়, চাকরিহারাদের আন্দোলনের প্রতি তারা সহানুভূতিশীল। কিন্তু অন্য কারও সমস্যার কারণ হয়ে আন্দোলন করা যাবে না। কর্মীদের বার করতেই ন্যূনতম বলপ্রয়োগ করতে হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। তবে তার পরেও অবস্থান ওঠেনি। শনিবার বিকাশ ভবন বন্ধ। বিকেলে সল্ট লেকের করুণাময়ী পর্যন্ত একটি মিছিল করবেন চাকরিহারারা। পুলিশকে কলম এবং চকোলেট দেওয়ার কর্মসূচিও রয়েছে। যে শিক্ষকেরা মার খেয়েছেন, তাঁদের স্কুল থেকে ছাত্রছাত্রীদের ডাকা হয়েছে। রাস্তায় বসে তাদের পড়ানো হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement