১৭ পদে ‘জামাই-বরণ’, সৌজন্যে মৎস্য দফতর

হাফ ছুটি মিলেছিল আগেই। এ বার সঙ্গে ‘সুখে মৎস্য খাইবার’ সুযোগ। সৌজন্য, রাজ্যের মৎস্য দফতর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৬ ০৭:১৫
Share:

প্রথম বিবাহবার্ষিকী শ্রী আর সঞ্জয়ের (বাঁ দিকে)। দীর্ঘ চিকিৎসাপর্ব পেরিয়ে পুরুষ থেকে নারী হয়েছেন রূপান্তরকামী শ্রী। বিয়ে করেছেন ছোটবেলার বন্ধু তথা সহপাঠী সঞ্জয়কে। অন্য বেশ কিছু রূপান্তরকামী বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীর উপস্থিতিতে ঘটা করে জামাইষষ্ঠী পালন করা হল তাঁদের। শুক্রবার। — শুভাশিস ভট্টাচার্য

হাফ ছুটি মিলেছিল আগেই। এ বার সঙ্গে ‘সুখে মৎস্য খাইবার’ সুযোগ। সৌজন্য, রাজ্যের মৎস্য দফতর।

Advertisement

বাঙালির ব্যবসা-বিমুখতার নানা নজির রয়েছে। তা থেকে বেরোতে শিল্পায়নের জন্য শুধু ভারী ভারী কারখানা নয়, তেলেভাজার দোকানকেও উৎসাহ দেওয়ার কথা বলেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। এ বার মাছের রেস্তোরাঁ খুলে জামাইষষ্ঠীর বাজারে সরকার দেখিয়ে দিল, এ ভাবেও লাভের কড়ি গোনা যায়।

এক-আধটা নয়, একেবারে সতেরো রকম মাছের পদ। ডাব চিংড়ি থেকে মোচার ঘণ্ট, সর্ষে ইলিশ থেকে তেলকই, চিংড়ির মালাইকারি থেকে পাবদার ঝাল— বাংলার জামাইদের রসনাতৃপ্তিতে এমনই সম্ভার ছিল নলবনের ফুডপার্কে। শুক্রবার জামাইষষ্ঠীতে সরকারি রেস্তোরাঁয় মাছেভাতে বাঙালির জন্য এই আয়োজন করে রাজ্য মৎস্য দফতর।

Advertisement

নলবনে ভেড়ির এক পাশে গড়ে ওঠা শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত ফুডপার্কে এ দিন ভিড় করেছিলেন বহু দম্পতি, নতুন জামাইরাও। হাজির হয়েছিলেন পরিবারের কর্তা-সহ ছোটরাও। শুধু জামাইরা নন, অন্য সকলেও দিব্যি চেটেপুটে খেয়েছেন জিভে জল আনা সেই সুখাদ্য সম্ভার।

বছর কয়েক আগে ছোট আকারে ওই ফুড পার্কের সূচনা হলেও গত মার্চ থেকে তার কলেবর বেড়েছে। এ বারই প্রথম জামাইষষ্ঠী-স্পেশাল মেনু পরিবেশনের ব্যবস্থা করে সরকারি ওই রেস্তোরাঁ ‘অল ফিশ’। মৎস্য দফতর সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছেতেই বাংলার উৎসব-পার্বণে পছন্দসই খাবারের আয়োজন করা হয়।

রেস্তোরাঁ পুরোদমে শুরু হয়েছে মাত্র মাস দুয়েক আগে। এর মধ্যেই প্রথম মাসে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ এবং দ্বিতীয় মাসে প্রায় চার লক্ষ টাকার বেচাকেনা হয়েছে। মৎস্য নিগমের এক কর্তার কথায়, ‘‘অল ফিশ নামেই স্পষ্ট, সবই মাছের পদ। এখানে বিরিয়ানি, চাইনিজ সবই মাছ দিয়ে।’’ মধ্যবিত্ত বাঙালির সাধ্যের কথা মাথায় রেখেই বিভিন্ন পদের দাম নির্ধারিত হয়েছে বলে জানান তিনি। তাতেও লাভের অঙ্ক প্রায় ৫০ শতাংশের মতো বলে সরকারি সূত্রেই জানা গিয়েছে।

এ দিন দুপুরে সপরিবার ওই রেস্তোরাঁয় এসেছিলেন সল্টলেকের বাসিন্দা সেক্টর ফাইভের কর্মী নীলাঞ্জন দাস। বললেন, ‘‘এই রেস্তোরাঁর তুলনা নেই। স্বাদও ভাল, দামেও বেশ কম।’’

দামে এত ফারাক কী করে? নিগমের এমডি সৌম্যজিৎ দাস জানান, চিংড়ি, ভেটকি, ট্যাংরা, কই, শোল, পাবদা, রুই, কাতলা সব ধরনের মাছ চাষ হয় দফতরের ভেড়ি এবং জলাশয়ে। রকমারি মাছের উৎপাদক মৎস্য দফতর নিজেই। তাই মাছের জন্য খরচও অনেক কম। আর শহরের কয়েকটি বড় রেস্তোরাঁকে মাছ সরবরাহ করে আমাদের দফতর। স্বভাবতই মাছের পদে তাদের কেউ টেক্কা দিতে পারবে না বলে দাবি সৌম্যজিৎবাবুর।

ভোজনরসিক বাঙালির পাতে রকমারি মাছের পদ তুলে দিতে আরও সরকারি শাখা খোলা হচ্ছে না কেন?

রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ জানান, দিন কয়েক আগে টাউন হলে মন্ত্রী-আমলাদের এক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, মাছের উৎপাদন বাড়াতে হবে। বাঙালির পাতে নানাবিধ মাছ তুলে দিতে চায় সরকার। মন্ত্রীর কথায়, ‘‘মাছের উৎপাদন বাড়াতে জেলায় জেলায় ঘুরব। কয়েক দিনে নবান্নে অল ফিশের আর একটা রেস্তোরাঁ খোলা হবে। সেখানে ন্যায্য মূল্যে কাঁচা মাছও বিক্রি হবে। এ ছাড়া নব মহাকরণ, জলসম্পদ ভবন-সহ একাধিক সরকারি দফতরে ওই রেস্তোরাঁর শাখা খোলার চেষ্টা চলছে।’’ তিনি জানান, কলকাতার একাধিক এলাকাতেও এর শাখা খোলার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন