বেহাল: ভেঙে পড়ার আগের দিন, সোমবার এমনই ছিল মাঝেরহাট সেতুর দশা। ফাইল চিত্র
মাঝেরহাটে সেতু ভেঙেছে মঙ্গলবার। সরকারের নির্দেশে বুধবার তড়িঘড়ি শহরের অন্যান্য সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে নেমেছিল পূর্ত দফতর। বৃহস্পতিবারই তারা জানিয়ে দেয়, ২০টি সেতুর অবস্থা ‘বিপজ্জনক’। পরীক্ষার হাতিয়ার: ইঞ্জিনিয়ারদের অভিজ্ঞ চোখ।
সেতুর স্বাস্থ্য চটজলদি পরীক্ষা করতে এখন উন্নতমানের প্রযুক্তি বাজারে পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, সেতুর কাঠামো না-কেটে অথবা ক্ষত তৈরি না-করেই ‘রিবাউন্ড হ্যামার’-এর সাহায্যে তার কংক্রিটের ক্ষয় সম্পর্কে আন্দাজ পাওয়া সম্ভব। আবার ‘উইন্ডসর প্রোব’ যন্ত্র ব্যবহার করলে কোনও ফুটো না-করেই স্থাপত্যের কংক্রিটের শক্তি পরীক্ষা করা যায়। এ ছাড়া, ‘থার্মাল মেথড’, ‘রেডিয়োগ্রাফি’, ‘আলট্রাসনিক পাল্স ভেলোসিটি টেস্ট’-এর মাধ্যমে স্থাপত্যের শরীরের সব ধরনের ত্রুটি বোঝা যায়। ‘হাফ সেল পোটেনশিয়াল টেস্ট’-এর সাহায্যে স্থাপত্যে ব্যবহৃত ইস্পাতের ক্ষয়, শক্তি-সহ একাধিক খুঁটিনাটি বিষয়ের তথ্য মেলে।
কিন্তু পূর্ত দফতর নিধিরাম সর্দার! সেতু পরীক্ষায় আধুনিক বা সাবেক, কোনও প্রযুক্তিই তাদের নেই। তবে পরীক্ষা হয় কী ভাবে? দফতরের এক বর্ষীয়ান ইঞ্জিনিয়ার জানাচ্ছেন, সাধারণ ভাবে খুঁটিয়ে চোখে দেখেই পরীক্ষা করা হয়। ইঞ্জিনিয়ারদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা এতে কাজে লাগে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সেতু দেখতে হয় দূর থেকে। নানা কারণে সব অংশ দেখাও যায় না। ফলে ওই সব অংশের ত্রুটি অধরাই থেকে যায়।
আরও পড়ুন: জিজ্ঞাসার মুখে সরকারি কর্তারা
পূর্ত দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের কাছে একটি মাত্র মোবাইল ব্রিজ ইন্সপেকশন ইউনিট রয়েছে। এই যন্ত্র দিয়ে অনেক কাছ থেকে সেতুর স্বাস্থ্য দেখা যায়। চাওয়া হলে কখনও কখনও ইউনিটটি পাওয়া যায়। কিন্তু ৪০-৫০ বছরের পুরনো কোনও স্থাপত্যের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সাদা চোখে করা সম্ভব নয়।’’ কারণ, অত দিন আগের প্রযুক্তির সঙ্গে এখনকার প্রযুক্তির কোনও মিল নেই। সিমেন্ট বা ইস্পাতের গুণগত মানেরও ফারাক হয়ে গিয়েছে। ওই ইঞ্জিনিয়ারের আক্ষেপ, ‘‘সেতু পরীক্ষার আধুনিক যন্ত্র হাতেগোনা কয়েকটি আইআইটি-র কাছে রয়েছে। সরকারের এমন যন্ত্র থাকলে ভাল ভাবে পরীক্ষার সুযোগ পাওয়া যেত।’’
শুধু চোখের দেখা দেখে সেতুর স্বাস্থ্য নির্ণয়ে লাভ কতটা, সেই প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই উঠেছে। সরকারের অন্য একটি অংশের অবশ্য দাবি, সেতু পরীক্ষার কাজ ধারাবাহিক ভাবে চলে। ফলে এক দিনের দেখায় সেতুর অবস্থা নির্ণয় করা হচ্ছে, এমনটা নয়। কিন্তু ঘটনাচক্রে বৃহস্পতিবার থেকেই একাধিক বিশেষজ্ঞ সংস্থার খোঁজ শুরু করেছে পূর্ত দফতর। যারা আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে পারবে।
তবে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তাঁর কথায়, ‘‘যা বলার মুখ্যমন্ত্রী বলছেন। যে হেতু তদন্ত চলছে, তাই কোনও মন্তব্য করব না।’’