চিকেন রোলের আড়ালে কী? ভিড়ের মরসুমে ফের আতঙ্ক, সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরাও

পুজোর খাওয়াদাওয়া এখনও শুরু হয়নি। তাতে কী! পুজোর কেনাকাটা পর্বের খাওয়া কিন্তু পুরোদমে শুরু হয়ে গিয়েছে শহরের ফুটপাতের দোকান, রেস্তরাঁগুলিতে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:০১
Share:

পেটপুজো: কেনাকাটা করতে বেরিয়ে রাস্তার পাশে খাবারের দোকানে ভিড়। নিউ মার্কেট চত্বরে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

রোলে কামড় বসাতে যাচ্ছিলেন যুবক। পাশে দাঁড়ানো বন্ধুটি হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘এটা ভাগাড় স্পেশ্যাল চিকেন রোলও তো হতে পারে!’’

Advertisement

পুজোর খাওয়াদাওয়া এখনও শুরু হয়নি। তাতে কী! পুজোর কেনাকাটা পর্বের খাওয়া কিন্তু পুরোদমে শুরু হয়ে গিয়েছে শহরের ফুটপাতের দোকান, রেস্তরাঁগুলিতে। এ দিকে, ফিসফাস-গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে, এমনকি, সোশ্যাল মিডিয়াতে রসিকতাও চলছে, ‘ভাগাড়-কাণ্ডের প্রায় সকলেই জামিনে ছাড়া পেয়েছে। আবার ভাগাড়ের মাংস পাতে পড়ছে না তো!’

গত বছর ভাগাড়-কাণ্ডের পরে রীতিমতো তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল শহরের খাদ্য-মহলে। দিন যেতে না যেতেই ফের পুরনো রীতি। পাতে ভাগাড়ের মাংস নাকি অন্য কিছু, তা যাচাইয়ের ব্যবস্থা শিকেয়। তাই শুধু মাংসই নয়, পুজো উপলক্ষে শহরের রাস্তায় নিত্যনতুন গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন খাবারের দোকানের হাত ধরে ‘বিপদ’ও শিয়রে বলে সতর্ক করে দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।

Advertisement

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড বায়োকেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের শিক্ষক প্রশান্তকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘‘শুধু তো রং বা সুগন্ধি মেশানো নয়, খাবারগুলি যে তেলে ভাজা হয়, তা-ও নিম্ন মানের। বারবার ব্যবহারে তাতে নানা রকম টক্সিন জমা হয়, যা শরীরের পাচনক্রিয়াকে বিপর্যস্ত করার পাশাপাশি ক্যানসারের মতো বড় বিপদও ডেকে আনতে পারে।’’ ওই বিভাগেরই প্রাক্তন শিক্ষক উৎপল রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘বেশি ক্রেতা টানতে মিষ্টি বা ফাস্ট ফুডে সুগন্ধি মেশানো হয়। ‘অ্যারোমাটিক কেমিক্যালস’ যুক্ত সেই সুগন্ধি ফুসফুসের ক্ষতি করে। কারণ, ওই ঘ্রাণটা নাক দিয়ে ফুসফুসে যায়। সুগন্ধি স্বাদেই বিষ পড়ছে পাতে!’’

শুধু খাবারই নয়, খাবারের দোকানগুলিতে যে জল ব্যবহার করা হয়, সেই জলও পানযোগ্য কতটা, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞেরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের শিক্ষক পঙ্কজকুমার রায় বলেন, ‘‘পানীয় জলের পাশাপাশি কোন জলে খাবারের থালা-গ্লাসগুলো ধোয়া হয়, তা কিন্তু আমরা কেউই জানি না!’’

শ্যামবাজারে ফুটপাতের এক দোকানি যেমন কিছুতেই বলতে চাইলেন না ড্রামভর্তি জলের উৎস কোথায়! হাত দেখিয়ে শুধু বললেন, ‘‘ওই তো রাস্তার কল।’’ অথচ আশপাশে কোনও জলের কল নজরে পড়ল না। আবার নিউ মার্কেটে এক ফাস্ট ফুড বিক্রেতা স্বীকার করে নিলেন, ভাগাড়-কাণ্ডের পরে কড়াকড়িতে একটু সতর্ক হয়েছিলেন সকলে। কেনার আগে মাংস ঠিক কি না, তা যাচাই করে নিচ্ছিলেন তাঁর মতো খাদ্যবিক্রেতারাও। ‘অত খেয়াল রাখা সম্ভব নয়’ মানসিকতাই ফিরে এসেছে এখন আবার। ওই বিক্রেতার কথায়, ‘‘রোজকার চাপে কোন মাংস কোথা থেকে আসছে, কী ভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে, তা সত্যিই আমাদের নজরে রাখা সম্ভব হয় না!’’

কলকাতা পুরসভা পুজোর সময়ে গত কয়েক বছর ধরেই লাগাতার ভেজাল খাবারের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। এ বছরও তেমনটাই পরিকল্পনা রয়েছে। মাংস নিয়েও ফের অভিযান চলবে বলে দাবি তাদের। কিন্তু পুজোর আগে থেকেই যে ‘ভেজাল-পর্ব’ রমরমিয়ে চলে, সেটা আটকানোর ক্ষেত্রে কোনও উপায়? এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘পুরসভা না হয় অভিযান করল। কিন্তু নিজেরা কী খাচ্ছি, সে সম্পর্কেও তো সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। ভেজাল খাবারের বিপদ শুধু অভিযান করে আটকানো সম্ভব নয়!’’

কাটা ফল বা খোলা খাবার থেকে না হয় দূরে থাকা যায়, কিন্তু চিকেন বা মটন বিরিয়ানি বা রোলে আদতে কোন মাংস মিশছে, তা সাধারণ মানুষ বুঝবেন কী ভাবে? এই প্রশ্নে প্রশাসন কার্যত নীরব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন