কোথাও মাছটাই বাসি। কোথাও বাঁধাকপি থেকে গাজরে গিজগিজ করছে পোকা। কোথাও আবার শাকে আর আনাজে জন্মেছে ছত্রাক।
রান্নাঘরের অবস্থাও তথৈবচ! কোথাও গ্যাস সিলিন্ডার খোলা। ফ্রিজের মধ্যে যেখানে খাবার রাখা, সেখানেই প্লাস্টিক-সহ বিভিন্ন সামগ্রী জড়ো করা রয়েছে। এক জায়গায় দেখা গেল, রান্নাঘরের পাশেই নর্দমা। সেখানে পাঁক ভর্তি। একেবারে মশার আঁতুড়ঘর। তার পাশেই দিব্যি বিরিয়ানি রান্না হচ্ছে।
এমন অভিযোগ মৌখিক ভাবে শোনা যাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার নাগেরবাজারের কাছে একটি শপিং মলের নামী-দামি কয়েকটি রেস্তোরাঁ ও দোকানে হানা দিয়ে সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখলেন দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (জনস্বাস্থ্য) দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) গোপা পাণ্ডে ও আধিকারিকেরা।
অবস্থা দেখে রীতিমতো চক্ষু চড়কগাছ সকলের। কারও মতে, এ যেন নরকদর্শন। খাবার তৈরির কিছু উপকরণ সংগ্রহ করেছেন আধিকারিকেরা। সেগুলির গুণমান পরীক্ষা করা হবে। পুরকর্তারা জানান, আপাতত সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে সংশোধন না করলে কড়া পদক্ষেপের বার্তা দিয়েছে দক্ষিণ দমদম পুরসভা।
পুরসভার এই অভিযানে চাঞ্চল্য ছড়ায় শপিং মলে যাওয়া লোকজনের মধ্যে। তাঁদের বক্তব্য, সব দেখেশুনে আতঙ্ক ধরে গেল। দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘খাবারের ব্যবসার নামে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া যাবে না। কী কী করতে হবে, তা ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে। দ্রুত না শোধরালে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’ যদিও পুরসভা সূত্রের খবর, ব্যবসায়ীদের একাংশ অভিযোগ পুরোপুরি মানতে নারাজ। তাঁরা পুর-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
এর আগে বুধবার রাস্তার দোকানেও আচমকা অভিযান চালান পুরকর্তারা। সেখানে ব্যবসায়ীদের সচেতন করার চেষ্টাও হয়। দেবাশিসবাবু জানান, তৈরি করা খাবার হোক বা খাবার তৈরির সামগ্রীর— কারও গুণমানই সন্তোষজনক নয়। বাসি খাবারে ছত্রাক পড়েছে, পোকা মিলেছে। রান্নাঘরের পরিবেশও তথৈবচ। তিনি বলেন, ‘‘আমরা আবার যাব। তখন সন্তুষ্ট না হলে পদক্ষেপ করা হবে।’’
গোপাদেবী জানান, বুধবার রাস্তার কিছু দোকানে অভিযান চালানো হয়েছিল। এ দিন কয়েকটি দোকানে পরিবেশ ও খাবারের গুণমান দেখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ দেখতে পাওয়া গিয়েছে। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে পুর-কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ করবেন।’’
আগে বিধাননগর পুরসভাও সল্টলেকে রাস্তার দোকানে হানা দিয়েছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষের অভিযোগ, অভিযান হলেও আখেরে কাজের কাজ হয় না। পুর প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, পুরসভাগুলির ক্ষমতা এ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ।
ঘটনার কথা শুনে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘পুরসভা ট্রেড লাইসেন্স, ফুড লাইসেন্স বাতিল করতে পারে। এবং স্বাস্থ্য দফতরকে রিপোর্ট পাঠাতে পারে। তবে এ সব ক্ষেত্রে এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।’’