ছাত্র হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঁরা কেউ রয়েছেন ৭ বছর, কেউ রয়েছেন ৮ বছর। বছর বছর যে ফেল করছেন, এমনও নয়। বিষয় পাল্টে পাল্টেই কার্যত মৌরসিপাট্টা গেড়ে ফেলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে! ছাত্র রাজনীতি করার তাগিদে ফরাসি থেকে জার্মান, উর্দু থেকে স্প্যানিশ— ‘শিখে ফেলছেন’ একের পর এক ভাষা!
শিক্ষা মহলের মতে, এ ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় আঁকড়ে থাকাই ক্যাম্পাসে নানা অশান্তির মূল। এ ভাবে বছরের পর বছর ‘ছাত্র’ থাকা যাবে না বলে একাধিকবার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু কাজ কিছুই হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএমসিপি-র ছাত্র সংসদের সদস্য আব্দুল কাইয়ুম মোল্লা ২০১০-এ ইসলামিক ইতিহাস পড়তে ঢুকেছিলেন। তাঁর পড়া এখনও শেষ হয়নি। বছরের পর বছর, একের পর এক কোর্স করে চলেছেন তিনি। ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কুণাল সামন্ত ২০১১ সালে বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়তে ঢুকেছিলেন। এখনও তিনি ছাত্র। ছাত্র সংসদের সদস্য মণিশঙ্কর মণ্ডল ২০১৪ সালে বাংলায় এম-এ পাশ করার পর বিভিন্ন সার্টিফিকেট কোর্স করে এখন এমফিল করছেন।
কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ভাস্কর দাসকে নিগ্রহে মূল অভিযুক্ত গৌরব দত্ত মুস্তাফির দাবি, তিনি ওই বিভাগের প্রধান সুদীপ দাসের অধীনে পিএইচডি শুরু করেছেন। খোদ উপাচার্যই অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁর পিএইচডি রেজিস্ট্রেশন হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, ক্যাম্পাসে নিজের গোষ্ঠীর প্রভাব বজায় রাখতেই এ ভাবে ভর্তি হয়ে চলেছেন টিএমসিপি’র ছাত্র নেতারা। আব্দুল অবশ্য বলছেন, ‘‘পড়াশোনা, রাজনীতি দুটোই ভালবাসি। তাই আছি।’’ কিন্তু পড়াশোনা ভালবাসলে তো ক্লাস করতে হয়। সূত্রের খবর, ওঁরা কেউই নিয়মিত ক্লাস করেন না। কিন্তু তা বলে পরীক্ষা দেওয়া বা পাশ করা আটকায় না। আর কুণাল বললেন, ‘‘ছাত্র-স্বার্থে রাজনীতি করি। রাজনীতির জন্য পড়াশোনা করি না।’’
লিংডো কমিশনের সুপারিশ, ছাত্র সংসদ ভোটে লড়তে হলে ৭৫% হাজিরা থাকতেই হবে। নির্বাচন লড়ার সর্বোচ্চ বয়ঃসীমা স্নাতকোত্তর স্তরে ২৪-২৫ বছর এবং গবেষক হলে ২৮ বছর। সে সব অবশ্য এখনও মানতে শুরু করেনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।