State news

রেল থেকে বিদেশে চাকরির নামে সাড়ে তিন কোটির প্রতারণা, গ্রেফতার চার

ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পারে, ২০১৪ সাল থেকে চক্রটি সক্রিয়। প্রথম ধাপে বিভিন্ন রাজ্যের বেকার যুবকদের নাম-ঠিকানা জোগাড় করে তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৭ ১৬:২৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

খাস কলকাতা থেকে টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার বিরাট প্রতারণা চক্রের হদিস পেল পুলিশ। দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা এই প্রতারণা চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শুক্রবার রাতে বাগুইআটির একটি হোটেল থেকে চক্রের চাঁই-সহ ৪ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বিজয় ধ্যানেশ্বর নামে এক যুবকের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে এই চক্রের সন্ধান পান তদন্তকারীরা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে পল্লবী জয়ন্তীলাল শা এবং পটেল কিরিটভাই আমদাবাদের বাসিন্দা। তৃতীয় অভিযুক্ত রঘু সর্দার দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং মহম্মদ নিজামুদ্দিন ওরফে সঞ্জয় চৌহান বেনিয়াপুকুরের বাসিন্দা।

Advertisement

বিজয় লেকটাউনে থাকেন। পুলিশ জানিয়েছে, কয়েক লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিজয়কে টিকিট কালেক্টরের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ওই চক্র। দিন কয়েক আগে বাগুইআটির নির্দিষ্ট ঠিকানায় গিয়ে সেই টাকা তিনি দিয়েও দেন। সেখানেই হাতে হাতে একটা নিয়োগপত্র পেয়ে যান। কিন্তু পরে সেটি নিয়ে রেলের দফতরে গিয়ে জানতে পারেন, নিয়োগপত্রটি ভুয়ো। তারপর থেকে ওই চক্রের লোকজনের সঙ্গে আর কোনও ভাবেই যোগাযোগ করতে পারেননি বিজয়। খুব বড় একটা ভুল করে ফেলেছেন বুঝতে পেরে লেকটাউন থানায় প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।

সেই ঘটনার তদন্তে নেমেই তাজ্জব হয়ে যান তদন্তকারীরা। জানতে পারেন, শুধু এ রাজ্যেই নয়, চক্রটির শিকড় ছড়িয়ে রয়েছে ভারতের আরও অনেকগুলো রাজ্যে। রেলে চাকরি দেওয়ার পাশাপাশি বিদেশেও নানা লোভনীয় মাইনের চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণা করে থাকে এই চক্র। লেকটাউন থানার পাশাপাশি তদন্তে নামে বিধাননগর পুলিশের সাইবার বিভাগও। তদন্তে নেমে বিধাননগর পুলিশের সাইবার সেল জানতে পারে, বাগুইআটির রঘুনাথপুরের একটি হোটেলে ওই চক্রের কিছু লোকজন জড়ো হয়েছে। শুক্রবার রাতে ওই হোটেলে আচমকা হানা দিয়ে চার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

Advertisement

আরও পড়ুন: এ বার লালুর মেয়ের তিন বাড়িতে ইডি হানা

ধৃতদের কাছ থেকে নগদ ৮ লক্ষ ৩৯ হাজার টাকা, দুটো ভুয়ো নিয়োগপত্র এবং ১০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি ৩৯ পাতার একটি নথিও উদ্ধার করা হয়েছে। ওই নথি থেকে শ’খানেক যুবকের নাম পেয়েছে পুলিশ। যে তিন রাজ্যে এই চক্র বেশি সক্রিয়, এরা সেই রাজ্যগুলিরই বাসিন্দা বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে ওই রাজ্যগুলির নাম জানাতে চায়নি পুলিশ।

কী ভাবে চলত এই চক্র?

ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পারে, ২০১৪ সাল থেকে চক্রটি সক্রিয়। প্রথম ধাপে বিভিন্ন রাজ্যের বেকার যুবকদের নাম-ঠিকানা জোগাড় করে তারা। তার জন্য স্থানীয় স্তরে প্রচুর লোকও নিযুক্ত। দ্বিতীয় ধাপে সরাসরি তাঁদের ফোন করে রেল বা বিদেশে চাকরির অফার দেওয়া হয়। তাতে রাজি হলে দিনক্ষণ জানিয়ে কোথায় টাকা দিতে হবে তা বলে দেওয়া হয়। টাকা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভুয়ো নিয়োগপত্র চাকরিপ্রার্থীদের হাতে দিয়ে দেওয়া হয়। ঠিক যেমন অভিযোগকারী বিজয়ের সঙ্গে করেছে তারা। যত ক্ষণ ওই নিয়োগপত্রটিকে ভুয়ো বলে চিহ্নিত করতে পারেন চাকরিপ্রার্থী, তত ক্ষণে আর হদিস পাওয়া যায় না এই প্রতারকদের। এই ভাবে এখনও পর্যন্ত ৩ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা প্রতারণা করেছে তারা।

এই চক্রের সঙ্গে রেলের কোনও কর্মী যুক্ত কি না বা আর কোন কোন রাজ্যে এরা জাল বিছিয়েছে তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন