প্রতীকী ছবি।
চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগের তদন্তে নেমে একটি আন্তঃরাজ্য প্রতারক চক্রের হদিশ পেল বিধাননগরের পুলিশ। শুক্রবার রাতে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বাগুইআটির একটি হোটেল থেকে এক মহিলা-সহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতেরা হলেন আমদাবাদের বাসিন্দা পল্লবী জয়ন্তীলাল শাহ ও প্যাটেল কিরিতভাই (৪৪), দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা রঘু সর্দার (৩৭) এবং বেনিয়াপুকুরের বাসিন্দা মহম্মদ নাজিমুদ্দিন ওরফে সঞ্জয় চৌহান। ধৃতদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র-সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছে। শনিবার বিধাননগর আদালতে তোলা হলে ধৃতদের পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
পুলিশ জানায়, বিজয় ধ্যানেশ্বর নামে লেকটাউনের এক বাসিন্দা অভিযোগ করেছিলেন, রেলে টিকিট কালেক্টরের পদে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কিছু লোক তাঁর কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু চাকরি মেলেনি। তদন্তভার দেওয়া হয় বিধাননগর সাইবার থানাকে। তদন্তে নেমে ওই আন্তঃরাজ্য চক্রটির সন্ধান পায় পুলিশ। একটি হোটেলে একাধিকবার আবেদনকারীদের ইন্টারভিউও নেওয়া হয়েছে বলে তদন্তকারীদের অভিযোগ। ওই সব আবেদনকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হচ্ছে।
সম্প্রতি পুলিশ খবর পায়, বাগুইআটির রঘুনাথপুরের ওই হোটেলে ওই চক্রের কয়েক জন রয়েছে। শুক্রবার রাতে বাগুইআটির ওই হোটেলে হানা দেন তদন্তকারীরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চার জনকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন তদন্তকারীরা। ধৃতদের কাছ থেকে নগদ ৮ লক্ষ ৩৯ হাজার টাকা, দু’টি জাল নিয়োগপত্র, দশটি মোবাইল ফোন, তিনটি রাজ্যের বেকার যুবক-যুবতীদের তালিকা উদ্ধার হয়েছে। এ ছাড়া বহু গুরুত্বপূর্ণ নথিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, এই চক্রটি ২০১৪ থেকে এই রাজ্যে সক্রিয়। আরও কয়েকটি রাজ্যেও এদের জাল ছড়িয়ে রয়েছে বলে পুলিশের হাতে তথ্য এসেছে। পুলিশের দাবি, চাকরি দেওয়ার নামে তিন কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা তুলেছে এই চক্রটি। ধৃতদের জেরা করে চক্রের বাকি সদস্যদের খোঁজ করা হচ্ছে। ধৃত মহম্মদ নাজিমুদ্দিন চক্রটির পাণ্ডা। পুলিশ জানায়, এই চক্রটি প্রথমে বেকার যুবক-যুবতীদের তথ্য সংগ্রহ করে। তার পরে এই যুবক-যুবতীদের রেল, এমনকী বিদেশেও চাকরির প্রলোভন দেখানো হয়। তার বদলে বড় অঙ্কের টাকা চাওয়া হয়। টাকা মিললে চাকরি প্রার্থীদের ভুয়ো নিয়োগপত্র দেওয়া হতো। তার পরে আর এই প্রতারকদের খোঁজ মিলত না বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, রেলের স্ট্যাম্প, রেলের প্যাড ব্যবহার করে ওই প্রতারকচক্র আবেদনকারীদের আস্থাভাজন হওয়ার চেষ্টা করত। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ওই প্যাড এবং রবার স্ট্যাম্প ভুয়ো। যেখান থেকে ওই প্যাড ছাপানো হত সেই ছাপাখানাতেও অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।