আগুনের গ্রাসে প্রজেক্টের খাতা, বইপত্র

রবিবার সকাল হতেই মা ও দিদিকে নিয়ে ঘরের ভিতর থেকে হাতড়ে বেঁচে যাওয়া বইপত্র বার করছিল নৈঋতা। যে বাড়ির নীচে ট্রেডার্স অ্যাসেম্বলি, সেই বাড়িরই আর একটি অংশে বাবা রথীন সমাজপতি, মা নন্দিতা ও দিদি ঋষিতার সঙ্গে থাকে সে।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:০২
Share:

ঋষিতা ও নৈঋতা সমাজপতি। নিজস্ব চিত্র

সামনেই সিবিএসই দ্বাদশ শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষা। চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি চলছিল। সেই সঙ্গে চলছিল ফাইনাল পরীক্ষার প্রজেক্টের খাতা তৈরিও। কিন্তু শনিবার রাতের ভয়াল আগুনের পরে বছর সতেরোর নৈঋতা সমাজপতি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না, কী ভাবে এত অল্প সময়ে সব কিছু আবার নতুন করে শুরু করবে। কার‌ণ, আগুন কেড়ে নিয়েছে তার খাতাপত্র। পুড়ে গিয়েছে বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি ও কিছু বইও।

Advertisement

রবিবার সকাল হতেই মা ও দিদিকে নিয়ে ঘরের ভিতর থেকে হাতড়ে বেঁচে যাওয়া বইপত্র বার করছিল নৈঋতা। যে বাড়ির নীচে ট্রেডার্স অ্যাসেম্বলি, সেই বাড়িরই আর একটি অংশে বাবা রথীন সমাজপতি, মা নন্দিতা ও দিদি ঋষিতার সঙ্গে থাকে সে। সাউথ পয়েন্ট থেকে মাধ্যমিক পাশ করে নৈঋতা ভর্তি হয়েছে দিল্লি পাবলিক স্কুলে। এখন সেখানকারই দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া। ঋষিতা এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। রথীনবাবু পেশায় চিকিৎসক। ঘটনার রাতে রথীনবাবু ও তাঁর স্ত্রী একটি ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন। ঋষিতা ছিলেন অন্য একটি ঘরে। সামনে পরীক্ষা বলে পড়ছিল নৈঋতা। আচমকাই সে নীচ থেকে লোকজনের চিৎকার শুনে বাবাকে ডাকে।

রথীনবাবু ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় এসে দেখেন, নীচের তলা দাউদাউ করে জ্বলছে। চিৎকার করছেন আশপাশের লোকজন। তাঁর কথায়, ‘‘বুঝে যাই আমাদেরই বাড়ির নীচে আগুন লেগেছে। তার হল্কা উপর পর্যন্ত উঠে এসেছিল।’’ আর দেরি করেনি সমাজপতি পরিবার। দুই মেয়েকে নিয়ে কোনও রকমে নেমে আসেন। কিন্তু নিতে পারেননি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। আর সেই আগুনই গিলে খেয়েছে মেয়েদের পড়ার ঘরের বইপত্র থেকে শুরু করে আসবাব। যেখানে ছিল নৈঋতার ফাইনাল পরীক্ষার প্রজেক্টের খাতা, জীবনবিজ্ঞানের বইপত্র ও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজ। ছিল স্কুলে ভর্তির কাগজপত্রও। তবে কিছু বইপত্র ও খাতা পাশের ঘরে থাকায় সেগুলি রক্ষা পেয়েছে।

Advertisement

শুধু নৈঋতারই নয়। পুড়ে গিয়েছে দিদি ঋষিতার বইপত্র ও প্রজেক্টের খাতাও। সম্প্রতি তাঁর এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তিনিও সেই পরীক্ষার প্রজেক্ট তৈরি করছিলেন। এই আগুনের জন্য রথীনবাবুরা আঙুল তুলেছেন নীচে ফুটপাতের হকারদের দিকে। তাঁদের অভিযোগ, এ ভাবে প্লাস্টিকের ছাউনি না থাকলে হয়তো আগুন এত তাড়াতাড়ি গোটা বাড়িতে ছড়াত না।

রবিবার দুপুরে মা-বাবা ও দিদিকে নিয়ে ফের দোতলার ঘরে উঠেছিল নৈঋতা। আগুনের খবর পেয়ে এসেছিলেন দুই বোনের বন্ধু ও আত্মীয়েরা। কিন্তু তন্নতন্ন করে খোঁজাই সার। শুধু ছাই ছাড়া আর কিছুই মেলেনি। নন্দিতা বলেন, ‘‘পরীক্ষার আগে এ ভাবে প্রজেক্টের খাতা পুড়ে গেল। আবার নতুন করে সব তৈরি করতে হবে। ভর্তির কাগজপত্র পুড়ে যাওয়ায় স্কুলেও জানাতে হবে।’’ আর রথীনবাবু মাঝেমধ্যে নীচে নেমে নিজেদের ফ্ল্যাটের পোড়া অংশ দেখছিলেন। তাঁর মুখে তখন একটাই কথা, ‘‘অন্তত মেয়েদের কাগজপত্রগুলি যদি বাঁচানো যেত!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন