আমার নিজের পেশায় ফিরে যাব: বিকাশ

চলতি লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল ও বিজেপির উপরেই মূলত ‘প্রচারের আলো’ থাকলেও যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে বামফ্রন্ট প্রার্থী আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যও নজর কাড়ছিলেন।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০১:৫৮
Share:

বিষণ্ণ: যাদবপুরে দলীয় কার্যালয়ে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। ছবি: পিন্টু মণ্ডল

দিনভর বাড়িতেই থাকার কথা ছিল। কিন্তু সকাল আটটা নাগাদ খবর পান, ভোট গণনা কেন্দ্রে তাঁর এজেন্টকে বসতে বাধা দিচ্ছে তৃণমূল। সঙ্গে সঙ্গে নিজেই গাড়ি চালিয়ে বিজয়গড় জ্যোতিষ রায় কলেজের গণনা কেন্দ্রে হাজির হন। এজেন্টকে বসানোর ব্যবস্থা করে কলেজ লাগোয়া পার্টি অফিসে প্রায় তিন ঘণ্টা উপস্থিত ছিলেন যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের বামপ্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।

Advertisement

চলতি লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল ও বিজেপির উপরেই মূলত ‘প্রচারের আলো’ থাকলেও যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে বামফ্রন্ট প্রার্থী আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যও নজর কাড়ছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বামফ্রন্টের ভরাডুবির ছবিটা পরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় অবাক হয়েছেন দলীয় কর্মীরাই। খোদ যাদবপুরে প্রার্থী বিকাশবাবুই বললেন, ‘‘এতটা খারাপ ফল আশা করিনি। এর জন্য আমাদের পর্যালোচনা করতে হবে।’’

বিজয়গড় কলেজ লাগোয়া সিপিএমের দলীয় কার্যালয় ভোলা বসু স্মৃতি ভবনে বসেছিলেন বিকাশবাবু। পরনে ধূসর রঙের কর্ডের ট্রাউজার্স এবং মেরুন টি-শার্ট। কখনও মোবাইলের স্ক্রিনে, কখনও আবার দলীয় কর্মীদের থেকে ভোটের ফলাফলের আপডেট জেনে নিচ্ছিলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র। লোকসভায় বামফ্রন্টের ভরাডুবির কারণের পর্যালোচনা তত ক্ষণে শুরু হয়ে গিয়েছে ভোলা বসু স্মৃতি ভবন কক্ষে। টালিগঞ্জ বামফ্রন্টের আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক গৌতম বন্দোপাধ্যায়, সিপিএম কাউন্সিলর চয়ন ভট্টাচার্যেরা তখন বলছেন, ‘‘মানুষের কাছে ঠিক মতো পৌঁছনো যাচ্ছে না। যার খেসারত দিতে হচ্ছে। মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে।’’ গৌতমবাবুর কথায় সায় দিয়ে বিকাশবাবুও তখন বলে চলেছেন, ‘‘আমরা সবাই নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত রয়েছি। বামফ্রন্টের এই খারাপ ফলাফলের জন্য মানুষের কাছে ঠিক মতো না পৌঁছনোর কারণ তো রয়েছেই। পাশাপাশি, এখন ধর্মের ভিত্তিতে ভোটটা পুরোপুরি ভাগ হয়ে যাচ্ছে। যা দেশের পক্ষে খুবই বিপজ্জনক ইঙ্গিত।’’

Advertisement

গত লোকসভা ভোটে রায়গঞ্জ, মুর্শিদাবাদের দখল রেখেছিল বামফ্রন্ট। সে ক্ষেত্রে এ বার বামফ্রন্ট খাতাই খুলতে পারেনি। বস্তুতই বিজয়গড়ের সিপিএম পার্টি অফিসে বসে থাকা কর্মীদের চোখমুখে ছিল হতাশার ছাপ। প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলর চন্দনা ঘোষদস্তিদার বলছিলেন, ‘‘আমাদের দলের এতটা ভরাডুবি হবে বোঝা যায়নি।’’ যাদবপুর লোকসভার বামপ্রার্থী বিকাশ ভট্টাচার্যের পর্যবেক্ষণ, ‘‘বামফ্রন্ট দীর্ঘ বছর ক্ষমতায় থাকাকালীন ধর্মকে কখনও ভোট প্রচারের হাতিয়ার করেনি। এ রাজ্যে বিজেপি, তৃণমূল যা নাগাড়ে করে চলেছে। ধর্মের মোহে মানুষের চেতনা হারিয়েছে। ফল যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে।’’ তাঁর বিরুদ্ধে প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে বিজেপি এবং তৃণমূল উভয়েই ধর্মকে ব্যবহার করেছিল বলে অভিযোগ করেন বিকাশবাবু। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ভিন‌্ রাজ্যে বিজেপির তরফে গোমাংস নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় বছর দুয়েক আগে একটি সংস্থার উদ্যোগে ধর্মতলায় প্রকাশ্যে আমি গোমাংস খেয়েছিলাম। যাদবপুরে প্রচারে বিজেপি সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়ে আমাকে হিন্দু বিরোধী বলে তকমা লাগিয়েছিল। আবার তৃণমূলের তরফে প্রচারে বলা হয়েছিল, আমি মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জিমদের সরকারি ভাতা প্রদানের বিরুদ্ধে আইনজীবী হিসেবে লড়েছি। এখানেও মুসলিমদের চোখ থেকে আমাকে সরিয়ে রাখা হয়েছে।’’ বিকাশবাবুর কথায়, ‘‘অতীতে কখনও কোনও রাজনৈতিক দল ভোট প্রচারের মাধ্যম হিসেবে ধর্মকে এই ভাবে ব্যবহার করেনি। ধর্মের নামে মেরুকরণ হওয়ায় ভোটের এই ফলাফল।’’

বেলা ১১টা নাগাদ ভোটের ফলাফলের আগাম ইঙ্গিত পেয়ে আর পার্টি অফিসে বসে থাকতে চাননি বিকাশবাবু। ফের নিজেই গাড়ি চালিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেন। যাওয়ার আগে বললেন, ‘‘আমার হারানোর কিছু নেই। আমার নিজের পেশায় ফিরে যাব। আইনজীবী হয়ে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কাজ করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন