মোদীর জয়ে খুশির হাওয়া গুজরাতি পাড়ায়

বিরোধীরা তাঁকে যতই বিতর্কে জড়ানোর চেষ্টা করুন, মোদী যে তাঁদের ঘরের লোক তা এ দিন স্পষ্ট করে জানান শরৎ বসু রোড এবং ভবানীপুরের রয় স্ট্রিটের বাসিন্দারা।

Advertisement

কৌশিক ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০১:৪৯
Share:

প্রার্থনা: শরৎ বসু রোডের লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দিরে এ শহরের গুজরাতিরা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

সকাল থেকেই জয়ের খবর আসছিল। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর দল যে কেন্দ্রে এত ভোটে জিততে পারে তা তাঁর জানা ছিল না। তাই দোকান খোলা রাখলেও তা ফাঁকা রেখেই বাড়িতে টিভি দেখতে ছুটলেন নবীন সম্পত। তার পরে নবীন বাড়িতে টিভি বন্ধ করেছেন বিজেপির জয় নিশ্চিত হওয়ার পরেই। শুধু তিনিই নন, শরৎ বসু রোড এবং ভবানীপুরের রয় স্ট্রিট সংলগ্ন গুজরাতি অধ্যুষিত এলাকায় অনেক পরিবারেই এ দিন ছিল খুশির মেজাজ। ওই অঞ্চলের পাড়ায় পাড়ায় ছিল মানুষের জটলা। জয়ের আনন্দে শরৎ বসু রোডে একটি গুজরাতি মিষ্টির দোকানে এ দিন আলাদা করে তৈরি করা হয় লাড্ডুও।

Advertisement

বিরোধীরা তাঁকে যতই বিতর্কে জড়ানোর চেষ্টা করুন, মোদী যে তাঁদের ঘরের লোক তা এ দিন স্পষ্ট করে জানান শরৎ বসু রোড এবং ভবানীপুরের রয় স্ট্রিটের বাসিন্দারা। তাই আবারও মোদী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন কি না তা নিয়ে এ দিন নবীনের মতো ওই এলাকার বাসিন্দাদের সকলেই উৎসাহী ছিলেন। নবীনের কথায়, ‘‘মোদীজিই যে আবার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন এটা জেনে সত্যিই খুব আনন্দ হচ্ছে। আমি কোনও রাজনৈতিক দল করি না। কারা ক্ষমতায় থাকল বা কারা থাকল না তাতেও আমার কিছু না। তবে উন্নয়নের কাজ হবে এইটুকু তো চাইবই। এবং আমার আশা মোদী উন্নয়ন করবেনই।’’

ছোটবেলায় গুজরাতের সুদূর কচ্ছ থেকে কলকাতায় এসেছিলেন নবীন। কয়েক বছর আগে স্ত্রী বিয়োগের পর থেকে ভাই ভরত এবং চার মেয়েকে নিয়েই তাঁর সংসার। রয় স্ট্রিটের মুখে একটি চানাচুর এবং মিষ্টির দোকান রয়েছে নবীনদের। তাঁর ভাই ভরত বলেন, ‘‘বহু বছরের ব্যবসা। আমরা এখন বাঙালিই হয়ে গিয়েছি। এখানেই পড়াশোনা। এখানকার কেউ যদি দেশকে সম্মানিত করেন তাতেও যেমন আনন্দ হয়, তেমনই গুজরাতের কোনও ব্যক্তি দেশকে সম্মানিত করলেও গর্ব হয়।’’

Advertisement

ওই এলাকারই এক বাসিন্দা সুবোধ ভাটিয়া বলেন, ‘‘মোদী এসেছেন বলেই খুশি তা নয়। মোদীকে তাঁর উন্নয়নের কাজই জিতিয়েছে। আমি যে ভাষায় কথা বলি মোদীও সেই ভাষায় কথা বলেন। কিন্তু সেটাই বড় কথা নয়, দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য উন্নয়নের কাজই শেষ কথা। মোদী সেটা করবেনই।’’

কলকাতার ওই গুজরাতি বাসিন্দারা জানান, মোদীকে তাঁরা তাঁদের কাছের মানুষ বলেই মনে করেন। কয়েক বছর আগে কলকাতা শহরে মোদী যখন এসেছিলেন তখন তিনি তাঁদের সঙ্গে খোলাখুলি ভাবেই মিশেছিলেন। সুবোধের কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে ২০১৪ সালে মোদীজি কলকাতায় গুজরাতি সমাজের মানুষের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তখন আমরা অনেকেই তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে নানা অভাব-অভিযোগের কথা জানিয়েছিলাম। উনি সবার সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন। তাই মোদীজি আবারও প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন জেনে স্বাভাবিক ভাবেই গর্ব অনুভব করছি।’’

এ দিন সকাল থেকেই ভিড় ছিল শরৎ বসু রোডের লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দিরে। গুজরাতি সম্প্রদায় পরিচালিত এই মন্দিরে বিকেলে গিয়ে দেখা গেল এলাকার অনেকেই পুজো দিতে এসেছেন। গুজরাত থেকে এই শহরে কাজে এসেছেন চিন্তন কুমার। পেশায় চিকিৎসক। বডোদরা থেকে কিছু দিন হল কলকাতায় এসেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘সকাল থেকেই নির্বাচনের ফল নিয়ে চাপা উত্তেজনা ছিল। দুপুরের পরে যখন জানা গেল মোদীজিই জিতেছেন, তখনই মনস্থ করলাম এখানে পুজো দিতে আসার।’’ মন্দির কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানান, সকাল থেকে নির্বাচনের ফল প্রকাশ হতেই সেখানে অনেকেই পুজো দিতে চলে এসেছিলেন।

নির্বাচনে জেতার হাতিয়ার কাজ এবং উন্নয়ন। ফলে প্রশ্ন ছিল মোদী কি তা করবেন?

ওই বাসিন্দাদের বিশ্বাস, যে কোনও রাজনৈতিক দলকে সুযোগ দেওয়া দরকার। কাজ না করলে গণতন্ত্রের নিয়মেই সে সরে যাবে। মোদীও তার ব্যতিক্রম হবেন না বলেই তাঁরা মনে করেন। তবে মোদীর এ বারের এই বিরাট জয়ও তাঁরা তাঁদের কাছে স্মরণীয় করে রাখতে চান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন