হবু স্বামীর মৃত্যুর পরেই মিলল তরুণীর দেহ

রবিবার বিকেলে ডায়মন্ড হারবার রোডের পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছিলেন আলি আকবর ওরফে রাহুল (১৯)। একবালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে দু’দিনের বেশি চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। তাঁর হবু স্ত্রী তথা প্রেমিকা জিনাত খাতুন (২০) তখন থেকেই গভীর উৎকণ্ঠায় ছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৯ ০২:৩২
Share:

জিনাত খাতুন এবং আলি আকবর।

সামনের মাসেই গাঁটছড়া বাঁধার কথা ছিল দু’জনের। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার ফারাকে দু’জনের জীবনই শেষ হয়ে গেল। বুধবার সকালে এসএসকেএম হাসপাতালের মর্গে জড়ো হলেন দুই তরুণ-তরুণীর শোকার্ত পরিজনেরা।

Advertisement

রবিবার বিকেলে ডায়মন্ড হারবার রোডের পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছিলেন আলি আকবর ওরফে রাহুল (১৯)। একবালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে দু’দিনের বেশি চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। তাঁর হবু স্ত্রী তথা প্রেমিকা জিনাত খাতুন (২০) তখন থেকেই গভীর উৎকণ্ঠায় ছিলেন। পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ হোয়াটসঅ্যাপের বার্তায় এক আত্মীয়ের মাধ্যমে রাহুলের মৃত্যুর সংবাদ পান জিনাত। এর পরে বুধবার ভোরে একবালপুরের ভূকৈলাস রোডের বাসিন্দা তরুণীর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান তাঁর পরিজনেরা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, হবু বরের মৃত্যুসংবাদ পেয়েই জিনাত আত্মঘাতী হয়েছেন। রাহুলের খবর পেয়েই জিনাত তাঁর মাসতুতো দিদিকে এসএমএস করে জানান, তিনি আত্মহননের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। জিনাত চিরবিদায় নিচ্ছেন বলে আরও কয়েক জন বন্ধুর কাছে যে বার্তা পাঠিয়েছিলেন, তাঁর স্মার্টফোন থেকে সেই নথি সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারীরা।

পরিবার সূত্রের খবর, ওই তরুণীর সঙ্গে একবালপুর হুসেন শাহ রোডের বাসিন্দা রাহুলের (১৯) সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। মাস ছয়েকের ঘনিষ্ঠতা ক্রমশ বিয়ের দিকে এগোচ্ছিল। গত সপ্তাহেই রাহুলের মা জিনাতের বাড়ি গিয়ে বিয়ের কথা বলেন। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়, অগস্টে ইদের পরেই তাঁদের বিয়ে হবে। গত রবিবার সেই স্বপ্নে ধাক্কা আসে।

Advertisement

পুলিশ জানায়, ওই বিকেলে মোটরবাইকে চেপে একবালপুর মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন রাহুল। হেলমেট ছাড়া মোবাইলে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলেন ওই যুবক। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, ডায়মন্ড হারবার রোডে রাহুলের মোটরবাইকের সঙ্গে মুখোমুখি অন্য একটি মোটরবাইকের ধাক্কা লাগে। রাস্তায় ছিটকে পড়েন তিনি। পরে পুলিশ তাঁকে একবালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ-তে ভর্তি করে। সেখানেই মঙ্গলবার রাতে মারা যান রাহুল।

তরুণীর পরিজনেরা জানাচ্ছেন, সোমবারের পরে মঙ্গলবারও হাসপাতালে রাহুলকে দেখতে যান জিনাত। নিঃসাড় রাহুলের পাশে বেশ কিছু ক্ষণ বসে থেকে বাড়ি ফিরে যান ওই তরুণী। এ দিন জিনাতের মা তানজা খাতুন বলেন, ‘‘রাতে কিছুই খেতে চাইছিল না মেয়ে। আমিই জোর করে খাইয়ে দিই। এর পরে এগারো বছরের ভাইয়ের সঙ্গে ঘুমোতে চলে যায় জিনাত। ভোর রাতে ওর ভাই-ই প্রথমে খেয়াল করে, কী ঘটেছে।’’ পুলিশ জানায়, ঘরের সিলিং পাখা থেকে জিনাতের দেহ ঝুলছিল। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

জিনাতের মেসো মহম্মদ শামিম হায়দার বলছিলেন, ‘‘জিনাত মেনে নিতে পারেনি রাহুলের মৃত্যু। যদি একটু সময় পেতাম, ওকে বোঝাতাম জীবনে কত কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। মেয়েটাকে বুঝিয়ে শান্ত করার সুযোগই তো পেলাম না।’’ স্ত্রী, তিন ছেলে এবং এক মেয়ে জিনাতকে নিয়ে এক বছর ধরে ভূকৈলাস রোডের চারতলা ফ্ল্যাটের তিনতলায় থাকছেন মহম্মদ ইসমাইল। পেশায় ট্রাম সংস্থার কর্মী ইসমাইল এ দিন দুপুরে মেয়ের মরদেহ নিতে দুই ছেলে এবং আত্মীয়কে নিয়ে যান এসএসকেএম মর্গে। ইসমাইল সাহেব বলেন, ‘‘মেয়ের বিয়ের জন্য তৈরি ছিলাম। রাতে বাড়ি ছিলাম না। কোথা থেকে কী হল, বুঝতেই পারছি না!’’

হুসেন শাহ রোডের ভাড়া বাড়িতে মামা, বাবা-মা ছাড়াও রাহুলের এক বোন থাকত। বাবার বিরিয়ানির দোকান থাকলেও মাংস ব্যবসায়ী মামা শেখ সালাউদ্দিনই রাহুলের দেখভাল করতেন। সম্প্রতি ছাগলের ব্যবসায় নেমেছিলেন তিনি। রবিবার ছাগল বিক্রির টাকা নিয়েই তিনি যাচ্ছিলেন, তখনই দুর্ঘটনার শিকার হন রাহুল। মামার কথায়, ‘‘দুর্ঘটনার পরে রাহুলের মোবাইল-টাকা কিছুই পাওয়া যায়নি। পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজও দেখায়নি।’’ বন্ধুদের দাবি, জিনাতের সঙ্গে আলাপের পর থেকেই ব্যবসায় মন দিয়েছিলেন রাহুল।

এ দিন দুপুরে এসএসকেমে দু’টি পরিবার যখন ওঁদের দেহ দু’টি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে, তখন লাশকাটা ঘরে জিনাত আর রাহুলের দেহের কাটাছেঁড়া চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন