বজবজ

ট্রেন থেকে উদ্ধার তরুণীর বস্তাবন্দি দেহ

শনিবার রাত ৯টা ৪৫। বজবজ-শিয়ালদহ লোকাল বজবজ স্টেশনে পৌঁছতেই এক যাত্রী জিআরপি কর্মীদের জানান, ট্রেনের শেষ কামরায় সিটের নীচে ঢাউস একটি গাঢ় মেরুন রঙের ব্যাগ পড়ে রয়েছে। সেই কামরায় গিয়ে ব্যাগটিতে হাত দিতেই তাঁরা বুঝে যান ভিতরে ভারী কিছু রয়েছে। স্টেশন চত্বরে প্রচুর খুঁজেও ব্যাগের দাবিদার মেলেনি কেউ। ব্যাগের চেন খুলতেই চমক। পুলিশকর্মীরা দেখেন, ব্যাগের ভিতরে রয়েছে ছোটখাটো চেহারার এক তরুণীর মৃতদেহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:১৬
Share:

শনিবার রাত ৯টা ৪৫। বজবজ-শিয়ালদহ লোকাল বজবজ স্টেশনে পৌঁছতেই এক যাত্রী জিআরপি কর্মীদের জানান, ট্রেনের শেষ কামরায় সিটের নীচে ঢাউস একটি গাঢ় মেরুন রঙের ব্যাগ পড়ে রয়েছে। সেই কামরায় গিয়ে ব্যাগটিতে হাত দিতেই তাঁরা বুঝে যান ভিতরে ভারী কিছু রয়েছে। স্টেশন চত্বরে প্রচুর খুঁজেও ব্যাগের দাবিদার মেলেনি কেউ। ব্যাগের চেন খুলতেই চমক। পুলিশকর্মীরা দেখেন, ব্যাগের ভিতরে রয়েছে ছোটখাটো চেহারার এক তরুণীর মৃতদেহ।

Advertisement

এর পরে রাতেই ব্যাগটিকে বজবজ থেকে নিয়ে যাওয়া হয় বালিগঞ্জ জিআরপি থানায়। সেখানে বার করা হয় তরুণীর দেহ। পরনে ছিল কালো রঙের অন্তর্বাস ও ট্রাউজার্স। গলায় একটি রুপোর হার। পুলিশকর্মীরা জানান, ওই তরুণীর গলায় একটি দাগ ছিল। তা থেকেই পুলিশের ধারণা, ওই তরুণীকে শ্বাসরোধ করে মারা হয়েছে। তবে তরুণীর শরীরে আর কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি বলেই পুলিশের দাবি। রবিবার রাত পর্যন্ত জানা যায়নি মৃতার পরিচয়ও। একটি খুনের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে রেল পুলিশ। বিভিন্ন থানায় পাঠানো হয়েছে মৃতা তরুণীর ছবিও।

শিয়ালদহের রেল পুলিশ সুপার উৎপলকুমার নস্কর রবিবার বলেন, “প্রাথমিক তদন্তের পরে মনে হচ্ছে ওই তরুণীকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে তরুণীর পরিচয় জানাটাই এখন সব থেকে জরুরি।”

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্রেনে জিআরপি কর্মীরা অন্য একটি কামরায় ডিউটি করছিলেন। বজবজ স্টেশনে ট্রেন পৌঁছনোর পরে এক যাত্রী এসে পুলিশকে ব্যাগটি পড়ে থাকার কথা জানান। তার পরেই পুলিশ গিয়ে ব্যাগটি তল্লাশি শুরু করে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, নিহত তরুণী ছোটখাটো চেহারার। ফলে ঢাউস মাপের ওই ব্যাগে ঢোকাতে বিশেষ কসরত করতে হয়নি খুনিদের।

রেল পুলিশ সূত্রের খবর, খুন করে ব্যাগে পুরে ট্রেনে ফেলে দিয়ে যাওয়া কোনও নতুন ঘটনা নয়। বছর দুয়েক আগে শিয়ালদহ স্টেশনে একটি ডাউন ট্রেনের মধ্যে বস্তায় খণ্ডবিখণ্ড দেহ মিলেছিল। সেই খুনের কিনারা এখনও করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের বক্তব্য, কাউকে খুন করার পর সেই দেহ ব্যাগে পুরে দুষ্কৃতীরা ট্রেনে ওঠে। তার পর নানা অছিলায় ব্যাগটি ট্রেনে ফেলেই চলে যায় তারা। ট্রেন অনেক সময়ই ভিন্ জেলা বা ভিন্ রাজ্যে চলে যাওয়ায় নিহতের পরিচয় জানতেই ঘুরপাক খান তদন্তকারীরা। সেই ফাঁকে অভিযুক্তেরাও গা ঢাকা দিতে পারে।

কিন্তু এ ক্ষেত্রে শিয়ালদহ থেকে বজবজ এমন কিছু দূরে নয়। লোকভর্তি শিয়ালদহ স্টেশনে ব্যাগে মৃতদেহ নিয়ে প্রবেশ করাটা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। তা হলে ওই দেহ ট্রেনে ওঠানো হল কী করে?

প্রাথমিক ভাবে পুলিশের সন্দেহ, শিয়ালদহ ও বজবজের মাঝামাঝি কোনও স্টেশন থেকে ওই ব্যাগটি তোলা হয়ে থাকতে পারে। অথবা ট্রেনটি শিয়ালদহ স্টেশনে (বজবজের উদ্দেশে রওনার আগে) পৌঁছনোর আগেই ব্যাগটিকে ট্রেনের সিটের তলায় ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিল। দেহটি খতিয়ে দেখার পরে তদন্তকারীরা মোটামুটি নিশ্চিত, শনিবারই খুন করা হয়েছে ওই তরুণীকে। খুনের পরেই দেহটি ব্যাগে ভরে ট্রেনে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, যে ভাবে খুনের পর দেহটি পাচার করার ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাতে খুনিরা পেশাদার বলেই মনে হয়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, পরিকল্পনা করেই ওই তরুণীকে খুন করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে শনিবার রাতে বজবজ লোকালের ওই কামরার যাত্রীদের সহযোগিতা চাইছে রেল পুলিশ। যাত্রীরা কেউ কাউকে ওই ব্যাগটি সিটের তলায় ঢোকাতে দেখেছেন কি না তা জানার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন