সোনার তদন্তে নজর বিমানের জোড়া আসনে

এক বছরের ব্যবধানে দু’টি বিমানে মিলল প্রচুর সোনা। কিন্তু প্রথম বিমানটির শৌচাগারে কারা সোনা রেখেছিল, বছর ঘুরে যাওয়া সত্ত্বেও তা জানা যায়নি। তবে রবিবারের বিমানটিতে কারা সোনা রেখেছিল, তার হদিস পাওয়ার ব্যাপারে তদন্তকারীরা আশাবাদী। আর তাঁদের সেই আশার আলো দেখাচ্ছে দু’টি বিশেষ নম্বরের আসন। ১৩এ এবং ১৪এ। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে ১৩এ নম্বরের আসনের নীচে লাইফ জ্যাকেটের খোপেই রাখা ছিল সওয়া এক কোটি টাকার সোনা। সন্দেহের কেন্দ্রে তাই ওই আসনটিই। পিছনের ১৪এ আসনে বসেও ১৩এ আসনের নীচে সোনা রাখা সম্ভব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৯
Share:

এক বছরের ব্যবধানে দু’টি বিমানে মিলল প্রচুর সোনা। কিন্তু প্রথম বিমানটির শৌচাগারে কারা সোনা রেখেছিল, বছর ঘুরে যাওয়া সত্ত্বেও তা জানা যায়নি। তবে রবিবারের বিমানটিতে কারা সোনা রেখেছিল, তার হদিস পাওয়ার ব্যাপারে তদন্তকারীরা আশাবাদী। আর তাঁদের সেই আশার আলো দেখাচ্ছে দু’টি বিশেষ নম্বরের আসন। ১৩এ এবং ১৪এ।

Advertisement

এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে ১৩এ নম্বরের আসনের নীচে লাইফ জ্যাকেটের খোপেই রাখা ছিল সওয়া এক কোটি টাকার সোনা। সন্দেহের কেন্দ্রে তাই ওই আসনটিই। পিছনের ১৪এ আসনে বসেও ১৩এ আসনের নীচে সোনা রাখা সম্ভব। তাই সেটিও আছে সন্দেহের আওতায়। একটি বিমানই দু’দিন ধরে তিন রুটে ওড়ার পরে রবিবার কলকাতায় তা থেকে সোনা উদ্ধার করা হয়। তিন রুটে ১৩এ নম্বর আসনে কোন কোন যাত্রী ছিলেন, শুল্ক অফিসারেরা প্রাথমিক ভাবে তাঁদেরই হদিস পেতে চাইছেন। তদন্তকারীদের মতে, পিছনের ১৪এ আসনের যাত্রীও ১৩এ আসনের নীচে সোনা রেখে দিতে পারেন। তাই তিন রুটে ওই আসনটিতেই বা কারা ছিলেন, সেটা জানা জরুরি।

২০১৩ সালের নভেম্বরে কলকাতাতেই জেট এয়ারওয়েজের একটি বিমানের শৌচাগারে ২৪ কিলোগ্রাম সোনা পাওয়া গিয়েছিল। তার তদন্তে নেমে শুল্ক অফিসারেরা জেটের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু ওই সোনা কে বা কারা লুকিয়ে নিয়ে আসছিল, এত দিনেও তা জানা সম্ভব হয়নি। জেটের সেই বিমান ঘটনার আগের দিন দুবাই থেকে মুম্বই আসে। সেখান থেকে পটনা হয়ে কলকাতা। অর্থাৎ সেটির ক্ষেত্রে তিনটি রুট ছিল দুবাই-মুম্বই, মুম্বই-পটনা এবং পটনা-কলকাতা। এয়ার ইন্ডিয়ার রবিবারের বিমানটিও শনিবার দুবাই থেকে গোয়া ঘুরে ওই রাতে বেঙ্গালুরুতে পৌঁছয়। রবিবার সকালে উড়ে আসে কলকাতায়। অর্থাৎ তার ক্ষেত্রে তিনটি রুট হল দুবাই-গোয়া, গোয়া-বেঙ্গালুরু এবং বেঙ্গালুরু-কলকাতা। এ ছাড়াও তদন্তকারীরা দু’টি ঘটনায় আরও মিল পাচ্ছেন। দু’টি ক্ষেত্রেই বাজেয়াপ্ত হওয়া সোনার গায়ে বিদেশের ছাপ রয়েছে।

Advertisement

প্রথম বিমানের ক্ষেত্রে শুল্ক অফিসারেরা দুবাই-মুম্বই, মুম্বই-পটনা এবং পটনা-কলকাতা রুটে জেটের যাত্রীদের সবিস্তার তথ্য জোগাড় করেছিলেন। কিন্তু ওই তিনটি উড়ানে কোন কোন যাত্রী কত বার শৌচাগারে গিয়েছিলেন, তা নির্দিষ্ট করে জানা সম্ভব হয়নি। প্রাথমিক ভাবে সন্দেহ করা হচ্ছিল, দুবাই থেকে কোনও যাত্রী সোনা তুলে তা শৌচাগারে রেখে দেন। মুম্বইয়ে বিমানের কোনও সাফাইকর্মীর সেই সোনা ভর্তি প্যাকেট নামিয়ে নেওয়ার কথা ছিল। শুল্ক অফিসারেরা ভেবেছিলেন, যাঁরা ওই বিমান সাফাইয়ের দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব কিছু জানা যাবে। কিন্তু লাভ হয়নি। হাল ছেড়ে দিয়ে তদন্ত শেষ করে শুল্ক দফতরেরই নিজস্ব বিচার বিভাগে সেই রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে।

তবু যে রবিবার এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের ঘটনায় তদন্তকারীরা আশার আলো দেখছেন, তার কারণ, এ ক্ষেত্রে শৌচাগারের মতো সব যাত্রীর ব্যবহারের জায়গায় সোনা ছিল না। তা লুকিয়ে রাখা হয়েছিল নির্দিষ্ট একটি আসন, ১৩এ-র তলায়। বিমানের তিন দফার উড়ানে খুব বেশি হলে তিন যাত্রী ওই আসনে বসেছেন। তাই প্রাথমিক ভাবে দুবাই-গোয়া, গোয়া-বেঙ্গালুরু, বেঙ্গালুরু-কলকাতা রুটের তিনটি উড়ানে ওই আসনের যাত্রীদের নামধাম চাওয়া হয়েছে বিমান সংস্থার কাছে। পিছনের ১৪এ আসনে বসেও সামনের আসনের তলায় সোনা রাখা যেতে পারে। তাই তিন রুটে সেই আসনে কারা বসেছিলেন, তাঁদের পরিচয়ও জানতে চায় শুল্ক দফতর।

এয়ার ইন্ডিয়ার এক অফিসার বলেন, “সোনার প্যাকেটটি এমন ভাবে আসনের তলায় সেঁটে দেওয়া হয়েছিল যে, ১৩এ আসনের যাত্রী বসে থাকা অবস্থায় নিজে কিংবা ১৪এ আসনের যাত্রী ছাড়া অন্য কারও পক্ষে সেটা করা সম্ভবই নয়।” তবে যাত্রীদের আগে উঠে বিমান সাফ করেন সাফাইকর্মীরা। সেবিকারাও যাত্রীদের আগেই বিমানে ওঠেন। তাই তাঁদেরও জেরা করা হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন