বলত ‘সংসারের সব দায়িত্ব নেব’

সোমবার সকালে যখন গোরাবাজারে দলা পাকানো মাংসপিণ্ডের মতো দুটি দেহ উদ্ধার হয়েছিল, তখন গোড়ায় কেউই তা শনাক্ত করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত হাতের একটি বালা এবং শরী

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:০৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

সংসার চালানোর তাগিদে ছেলেকে ভিন রাজ্যে কাজ করতে পাঠিয়েছিলেন সুনীল রাম সিংহ। গত আড়াই বছর ধরে সেই ছেলে অর্থাৎ ২১ বছরের ভিকিকুমার সিংহ কলকাতারই বাসিন্দা। মাঝখানে দু’বার ছুটিতে বাড়ি গেলেও ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ অনেকটাই টেলিফোন নির্ভর হয়ে পড়েছিল। মঙ্গলবার কলকাতায় এসে সেই ছেলেরই পুড়ে ঝলসে যাওয়া দেহটি শনাক্ত করলেন বাবা। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘‘ওর মুখটা শেষবারের মতোও ভালভাবে দেখতে পেলাম না!’’

Advertisement

সোমবার সকালে যখন গোরাবাজারে দলা পাকানো মাংসপিণ্ডের মতো দুটি দেহ উদ্ধার হয়েছিল, তখন গোড়ায় কেউই তা শনাক্ত করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত হাতের একটি বালা এবং শরীরের গঠন দেখে চেনা যায়, একটি দেহ ভিকির। অন্য দেহটিকে প্রাথমিকভাবে ওই দোকানেরই কর্মী, ওড়িশার বাসিন্দা সুনীলের বলে চিহ্নিত করেছেন স্থানীয় দোকানদারেরা। দুজনেই রাতে গোরাবাজারের ওই দোকানে থাকতেন। সুনীলের মোবাইল ফোনটি পুড়ে ঝলসে যাওয়ায় প্রথমে তাঁর বাড়ির ঠিকানা মেলেনি। পরে তাঁর বালেশ্বরের বাড়ির ঠিকানা পেয়ে যোগাযোগের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

ভিকির বাবা সুনীলবাবু এ দিন সকালে বিহারের নওয়াদা থেকে বাসে কলকাতায় পৌঁছন। তিনি জানান, তাঁর তিন ছেলে। ছোট ছেলে বিহারে থাকলেও বড় এবং মেজ কাজের খোঁজে এসেছিলেন কলকাতায়। বড় ছেলে বিহার এবং কলকাতায় মিলিয়ে মিশিয়ে থাকলেও মেজ ভিকি থেকে গিয়েছিলেন কলকাতাতেই।

Advertisement

নিজের রান্নার কাজ করেন সুনীলবাবু। জানালেন, অভাবের সংসারে ভিকিকে অনেক কষ্ট করে স্কুলের গণ্ডি পার করিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘ছেলে বলেছিল, ও আরও ভাল কাজের চেষ্টা করবে। মাইনে বাড়লে সংসারে আরও বেশি টাকা পাঠাবে বলেছিল। বার বার বলত, ‘তোমাকে আর কাজ করে খেতে হবে না। সংসারের সব দায়িত্ব আমিই নেব।’ আমাদের সবাইকে একা করে দিয়ে ছেলেটা চলে গেল।’’

ওই চায়ের দোকানের মালিক বাসুদেব সাউ বলেন, ‘‘এর আগেরবার আগুন লাগার পর থেকে দোকানে তালা লাগাই না। ভিকিরা থাকত। খুবই পরিশ্রম করত ছেলেদুটো। ওদের এই পরিণতিটা মানতে পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন