নিয়ম উড়িয়েই চলছে সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক

ওই একই দিনে পার্ক স্ট্রিটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কিডনির সমস্যা নিয়ে ভর্তি, বছর পঞ্চান্নের এক রোগীর রক্তের রিকুইজিশন স্লিপ নিয়ে পরিজনেরা পৌঁছন সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৮ ০৩:০৭
Share:

দিন কয়েক আগে হার্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, অস্ত্রোপচার জরুরি। ষাটোর্ধ্ব সেই বৃদ্ধের চিকিৎসা চলছে এসএসকেএম হাসপাতালের কার্ডিওভাস্কুলার বিভাগে। তাঁকে রক্ত দিতে হবে। কিন্তু পরপর তিনটে সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে ঘুরেও বি-পজিটিভ গ্রুপের রক্ত পাওয়া যায়নি। পরিবারের অভিযোগ, যে রক্ত বিনামূল্যে পাওয়ার কথা, বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে তা ১২০০ টাকা প্রতি ইউনিট দামে কিনতে হয়েছে।

Advertisement

ওই একই দিনে পার্ক স্ট্রিটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কিডনির সমস্যা নিয়ে ভর্তি, বছর পঞ্চান্নের এক রোগীর রক্তের রিকুইজিশন স্লিপ নিয়ে পরিজনেরা পৌঁছন সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে। নগদ হাজার চারেক টাকা দিয়ে বি-পজিটিভ দুই ইউনিট রক্ত কেনেন তাঁরা। অথচ, তার কোনও বিল দেওয়া হয়নি। ব্লাড ব্যাঙ্কের এক কর্মী জানান, আকালের বাজারে রক্ত যে পাওয়া গিয়েছে, সেটাই ঢের!

এ ভাবেই রক্ত নিয়ে হয়রানির অভিযোগ তুলছেন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের পরিজনেরা। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর রক্তের প্রয়োজন হাসপাতাল মেটাতে না পারলে রিকুইজিশন স্লিপ নিয়ে অন্য সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে নিখরচায় রক্ত মিলবে। অভিযোগ, অধিকাংশ সময়েই সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক জানিয়ে দেয়, রক্ত নেই। রক্তদাতা জোগাড় করতে না পারলে রক্ত পাওয়া যাবে না। বাধ্য হয়েই রোগীর পরিজনেদের বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে ইউনিট-পিছু ১২০০ টাকা দিয়ে রক্ত কিনতে হয়।

Advertisement

সরকারি হাসপাতালে কি রক্তের সঙ্কট চলছে? স্বাস্থ্য দফতরের ব্লাড ব্যাঙ্কের দায়িত্বে থাকা এক কর্তার কথায়, ‘‘প্রত্যেক জেলায় শিবির হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে সঙ্কট এড়াতে নজরদারিও চলছে।’’

তা হলে সরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক রক্ত দিচ্ছে না কেন? স্বাস্থ্য কর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, এর পিছনে রয়েছে ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীদের একাংশের দুর্নীতি। অধিকাংশ ব্লাড ব্যাঙ্কেই রিকুইজিশন স্লিপের হিসেব কম্পিউটারে তুলে রাখা হয় না। কম্পিউটার খারাপ দেখিয়ে খাতায় লেখা হয়। ইচ্ছে মতো পরিবর্তনও করা হয়। সরকারি নিয়মে বেসরকারি হাসপাতালের রোগীদের ইউনিট-পিছু ১০৫০ টাকায় রক্ত দেওয়ার কথা। প্লেটলেট, প্লাজমার ক্ষেত্রে দামের তারতম্য থাকে। তবে নিয়ম হল, সরকারি হাসপাতালের রোগীদের প্রয়োজন মিটিয়ে তবেই বেসরকারি হাসপাতালের রোগীদের রক্ত দেওয়া যাবে। সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে সারা দিন কত ইউনিট রক্ত কোথায় গেল, সে হিসেবও দেওয়ার কথা। অভিযোগ, কোনও নিয়ম ঠিকমতো মানা হয় না।

নিয়ম হল, সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক যদি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীকে রক্ত দিতে না পারে, তা হলে রিকুইজিশন স্লিপে তা লিখে স্ট্যাম্প মেরে দেওয়ার কথা। কিন্তু অভিযোগ, অধিকাংশ সময়েই তা করা হয় না। শুধু মৌখিক ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি, বেসরকারি হাসপাতালের রোগীদের রক্ত ‘বিক্রি’ করার পরে তাঁদের বিল দেওয়া হয় না বলেও অভিযোগ।

স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা জানান, এক দিকে সরকারি হাসপাতালে রোগী-হয়রানি বাড়ছে। অনেক সময়ে টাকা দিয়ে রক্ত কিনে নিতে হচ্ছে। অন্য দিকে, বেসরকারি হাসপাতালের রোগীদের কাছে বিক্রি করা রক্তের টাকা সরকারের কোষাগারে পড়ছে না। এসএসকেএম-এর দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা ওই ব্লাড ব্যাঙ্ক পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। এসএসকেএম সূত্রে খবর, ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীদের কাছে রক্ত দেওয়া সংক্রান্ত তালিকা চাওয়া হয়েছে। সেই তালিকা ঠিক মতো দিতে না পারলে প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন পরিদর্শকেরা। হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকেও এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ব্লাড ব্যাঙ্কের এই দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই কয়েকটি ব্লাড ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে। কিছু কর্মীকে বদলিও করা হচ্ছে। পুরো বিষয়টির উপরে আমাদের নজর রয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement