মুখ ঢাকা শালে, উদ্ধার তরুণীর ঝুলন্ত মৃতদেহ

পুলিশ সূত্রের খবর, বাঘা যতীন স্টেশন রোডের বাসিন্দা বছর ২৫-এর তরুণীর নাম সুকন্যা পোদ্দার। বরাবরই পড়়াশোনায় মেধাবী এই তরুণী পার্ক সার্কাসের একটি কলেজ থেকে মাইক্রোবায়োলজিতে স্নাতকোত্তর পাশ করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:০৫
Share:

সুকন্যা পোদ্দার

মাথার উপর থেকে কালো শাল ঢাকা। আর সেই অবস্থায় ঘরের সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছে মেয়ের দেহ। সামনে আয়না।

Advertisement

রবিবার সকালে এ ভাবেই এক ছাত্রীর দেহ উদ্ধার করল যাদবপুর থানার পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, ওই তরুণী আত্মঘাতী হয়েছেন। মিলেছে একটি সুইসাইড নোট। যেখানে লেখা রয়েছে ‘‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।’’ তাঁর বিয়েও ঠিক হয়ে গিয়েছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রের খবর, বাঘা যতীন স্টেশন রোডের বাসিন্দা বছর ২৫-এর তরুণীর নাম সুকন্যা পোদ্দার। বরাবরই পড়়াশোনায় মেধাবী এই তরুণী পার্ক সার্কাসের একটি কলেজ থেকে মাইক্রোবায়োলজিতে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। বর্তমানে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাও শুরু করেছিলেন। পাশাপাশি, একটি কলেজে আংশিক সময়ের শিক্ষক ছিলেন। সুকন্যার পরিবারের লোকজন পুলিশকে জানিয়েছেন, সুকন্যার বাবা কাজের সূত্রে এক কাকাকে নিয়ে উত্তরবঙ্গে গিয়েছেন। তাঁদের পর্যটনের ব্যবসা রয়েছে। রবিবার বাড়িতে ছিলেন সুকন্যা, তাঁর মা এবং ছোট ভাই। অন্য দিনের মতো রবিবারেও সকালে ঘুম থেকে উঠে সুকন্যা পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে সকাল ১০টা নাগাদ ফের তিনি নিজের ঘরে যান। এর পরে সুকন্যাকে খাওয়ার জন্য ডাকতে গিয়ে পরিবারের লোকজন দেখেন, তাঁর ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। অনেক ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে তাঁরা জোরে জোরে দরজায় ধাক্কা দিতে থাকেন। এক সময়ে দরজা খুলে যায় এবং তখনই দেখা যায়, সুকন্যা সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছেন। মাথার উপর থেকে কালো রঙের একটি শাল ঢাকা দেওয়া রয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: বিষে খুন! এনআরএসে দেহ ১৬ কুকুরছানার​

এ রকম অবস্থায় মেয়েকে দেখেই পরিবারের লোকজন পুলিশে খবর দেন। খবর পৌঁছয় আত্মীয়দের কাছেও। পুলিশ এসে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু কী কারণে তিনি আত্মঘাতী হলেন, তা এখনও ধোঁয়াশায় বলেই পুলিশ জানিয়েছে।

এ দিকে পড়শিরা জানিয়েছেন, খুব কম কথা বলা সুকন্যা বরাবরই পড়াশোনায় ভালো ছিলেন। এমনকি সামনেই তাঁর বিয়ে ঠিক হয়েছিল। কিন্তু ঠিক কী কারণে বিয়ের আগেই তিনি আত্মঘাতী হলেন, তা ভাবাচ্ছে পুলিশকে। তাঁর মোবাইলের কললিস্টও খতিয়ে দেখছে।

সোশ্যাল মিডিয়ার তাঁর অ্যাকাউন্টগুলি খতিয়ে দেখতে পুলিশ তাঁর ল্যাপটপটি বাজেয়াপ্ত করেছে। এ দিন দুপুরের পরে সুকন্যাদের ফ্ল্যাটে গেলে পরিবারের কেউ কোনও কথা বলতে চাননি। পড়শিরা শুধু জানিয়েছেন, সুকন্যার মা মেয়ের মৃত্যুর ধাক্কা সামলাতে পারেননি। আচমকা এমন ঘটনার পরে তিনি বার বার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন। সুকন্যার মৃত্যুর খবর পাঠানো হয়েছে উত্তরবঙ্গে তাঁর বাবা এবং কাকাকে। রবিবার রাতেই তাঁদের কলকাতায় ফেরার কথা।

পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, যাঁর সঙ্গে সুকন্যার বিয়ে ঠিক হয়েছিল, তাঁর সঙ্গে সম্পর্কে কোনও টানাপড়েন চলছিল বলেই প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে। সম্ভবত তার জেরেই ওই ছাত্রী মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। যার পরিণাম এ দিনের ঘটনা। মৃত্যুর কারণ জানতে পুলিশ সুকন্যার দেহ ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন