আবেশ। ফাইল চিত্র।
আবেশের বন্ধু-বৃত্তে এখনও আতঙ্ক!
শনিবার যারা সানি পার্কের বাড়িতে জন্মদিনের পার্টিতে ছিল, তারা তো বটেই, সিঁটিয়ে রয়েছে অন্যরাও। যারা সে দিনের পার্টিতে ছিল, তাদের পুলিশ জেরা করছে। বাদ যায়নি ফেসবুক-বন্ধুরাও। অনেকে ভয়ে বন্ধ করে দিয়েছে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। বাইরে মেলামেশাও বন্ধ। বুধবার তার মধ্যেও অবশ্য মুখ খুলল আবেশের দুই বন্ধু। তাদের এক জন সেদিন পার্টিতে ছিল, আর এক জন ছিল না।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত বন্ধুর বয়ান:
আবেশ যখন আহত হয়, তখন আমি ঠিক সেখানে ছিলাম না। অন্য জায়গায় অন্য বন্ধুদের সঙ্গে ছিলাম। চিৎকার শুনে ছুটে গিয়ে দেখি, রক্তাক্ত আবেশ মাটিতে পড়ে রয়েছে। আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয় এটা দুর্ঘটনা, না অন্য কিছু। তখন কয়েক জন গাড়িচালক এবং বন্ধুরা সেখানে ছিল। আমরা আবেশের জামা খুলে নিই। জামাটা রক্তে ভিজে জবজবে হয়ে গিয়েছিল। ওই জামাটাই আমি ওর ক্ষতস্থানে বেঁধে দিই। আরও দুই বন্ধুও সাহায্য করেছিল।
যার জন্মদিনে গিয়েছিলাম, এর পরেই তার বাবা নেমে আসেন। তিনি অ্যাম্বুল্যান্সে ফোন করেন। কিন্তু যখন দেখলেন আসতে দেরি হচ্ছে, তখন তিনি নিজের গাড়ি বার করেন। আমি আর অন্য এক বন্ধু আবেশকে গাড়িতে তুলে নিয়ে হাসপাতালে যাই। সেখানে পৌঁছনোর কিছুক্ষণ পরে চিকিৎসক এসে জানিয়ে দেন, আবেশ আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে।
আমরা কিন্তু ওকে বাঁচানোর চেষ্টাই করেছিলাম। যখন হাসপাতালে যাচ্ছিলাম, তখনও ও বেঁচেছিল। বলা যেতে পারে, আমার হাতের উপরেই আবেশের মৃত্যু হয়। আবেশের পরিবারকে জানাতে চাই, আমরা যে ক’জন সেখানে ছিলাম সকলেই পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করছি। আমাদের ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সোশ্যাল সাইট থেকে সব বিবরণ নেওয়া হয়েছে। অনেকেই হয়তো মনে করছেন, কিছু গোপন করা হচ্ছে বা উপরমহল থেকে কোনও চাপ দেওয়া হচ্ছে— সেটা ঠিক নয়।
আবেশকে চিনি গত এক মাস ধরে। পার্টিতে এমন কয়েক জন ছিল, যারা আবেশকে সে দিনই প্রথম বার দেখেছে। ঘটনার পরে আমাদের নজর ছিল আবেশের দিকেই। ফলে তখন ওই জায়গাটাতে ক’জন ছিল, কে কে ছিল, বলতে পারব না। তবে এটা ঠিক যে, ঘটনার পরে কয়েক জন চলে গিয়েছিল। শুনেছি, আগের দিন নাকি গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে ওর (আবেশের) ঝামেলা হয়েছিল। কিন্তু তার সঙ্গে এই ঘটনার কোনও যোগ রয়েছে বলে মনে হয় না। সকলেই ওকে পছন্দ করত।
পার্টিতে ছিল না এমন এক বন্ধুর বক্তব্য:
আবেশকে বহু দিন চিনি। পার্টিতে আর যারা ছিল, তাদেরও অনেককেই চিনি। এলগিন রোডের একটি ক্লাবে আমাদের আলাপ হয়েছিল। ওই দিন আমি অন্য পার্টিতে ছিলাম। বাড়ি ফেরার পথে একটা মেসেজ আসে। সেখানে লেখা, আবেশ ইজ নো মোর।
প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারিনি। রাতে বাড়ি ফিরে টিভি খুলে দেখি সত্যি! সেই রাতটা আর ঘুম হয়নি। আমি জানি, ওরা মদ এবং সেই সঙ্গে অন্য নেশাও করে। যার ফলে, খুব তাড়াতাড়ি নেশা চড়ে যায়। আর তখন অনেকেরই মাথা গরম হয়ে যায়!
পার্টিতে ছিল, এমন দু’এক জনের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওরা বলছে, আবেশের মৃত্যু দুর্ঘটনাই। বলছে, একটু গোলমালও হয়েছে। আবেশের যে বন্ধু ওকে পার্টিতে নিয়ে গিয়েছিল, সে ঠান্ডা মাথার ছেলে। ওদের নাকি পুলিশ প্রায়ই ডেকে পাঠাচ্ছে। আমরাও ভয়ে রয়েছি। বাড়িতে বারবার আমাকে জিজ্ঞেস করছে, আমি ওই রকম পার্টিতে যাই কি না।