Vaccine

স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিবারের জন্য প্রতিষেধক চেয়ে মমতাকে আর্জি

শহরের এক হাসপাতালের চিকিৎসক যেমন বলছেন, ‘‘প্রতিষেধক নেওয়াকে কেন্দ্র করে তো দেখছি গৃহযুদ্ধ বেধে যাবে এ বার!’’

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:১১
Share:

শহরের এক হাসপাতালের চিকিৎসক যেমন বলছেন, ‘‘প্রতিষেধক নেওয়াকে কেন্দ্র করে তো দেখছি গৃহযুদ্ধ বেধে যাবে এ বার!’’ প্রতীকী চিত্র

‘‘তুমি তো প্রতিষেধক পেয়ে গেলে। আমরা কবে পাব?’’

Advertisement

রাজ্য জুড়ে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীদের করোনা প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ় দেওয়া প্রায় শেষ। অনেকে পেয়ে গিয়েছেন দ্বিতীয় ডোজ়ও। আর সেই কর্মসূচির মধ্যেই বার বার এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন তাঁদের স্বামী, স্ত্রী বা পরিবারের অন্য সদস্যেরা। শহরের এক হাসপাতালের চিকিৎসক যেমন বলছেন, ‘‘প্রতিষেধক নেওয়াকে কেন্দ্র করে তো দেখছি গৃহযুদ্ধ বেধে যাবে এ বার!’’

‘‘কেন বলব না? ওঁরা করোনা রোগীর সংস্পর্শে যাচ্ছেন বলে প্রতিষেধক পাচ্ছেন। তেমনই বাড়িতে আমরাও তো ওঁদের কাছাকাছি থাকছি। তাতে কি সংক্রমণের আশঙ্কা নেই?’’— প্রশ্ন ওই চিকিৎসকের বেসরকারি চাকুরে স্ত্রীর। তবে যে পরিবারে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই চিকিৎসক, সেখানে অবশ্য এমন ‘ঝগড়া’র সুযোগ নেই। যেমন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের কথায়, ‘‘আমি ও স্ত্রী দু’জনেই চিকিৎসক হওয়ায় প্রতিষেধক পেয়েছি। ছেলে বিদেশে থাকে, ফলে তার তো পাওয়ার ব্যাপার নেই। কিন্তু বাড়িতে বৃদ্ধা মা রয়েছেন, সেটা চিন্তার বিষয় তো বটেই।’’

Advertisement

রাজপুর-সোনারপুরের মাতৃসদনে কর্মরত চিকিৎসক স্ত্রী ইতিমধ্যেই প্রতিষেধকের দ্বিতীয় ডোজ় পেয়ে গিয়েছেন। তাই ব্যবসায়ী সুব্রত ভট্টাচার্য রোজই এক বার করে স্ত্রীর কাছে জানতে চান, কবে তিনিও প্রতিষেধক পাবেন। রোজ একই প্রশ্নে রেগে যান স্ত্রী। সুব্রতবাবু বললেন, ‘‘নিজের জন্য চিন্তা হবে না, বলুন? তাই রোজ জিজ্ঞাসা করি। সেই নিয়ে রাগারাগিও হচ্ছে।’’

বয়স্ক মা-বাবাকে সংক্রমণ থেকে দূরে রাখতে চিকিৎসক স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা থাকছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই। তিনি বলছেন, ‘‘সেই কোভিড সংক্রমণের শুরু থেকেই আলাদা থাকছি। এখনও থাকতে হবে। যে কোনও মুহূর্তে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে। তাই পরিবারকে নিয়ে মনে তো একটা ভয় থেকেই যায়। এক দিকে করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা, অন্য দিকে পরিবার। দুইয়ে মিলে মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে।’’ পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটাতে তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ
হয়েছে চিকিৎসকদের একটি মঞ্চ ‘প্রোটেক্ট দ্য ওয়ারিয়র্স’।

ওই মঞ্চের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়েছে, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিবারের সদস্যদের, বিশেষ করে মা-বাবা ও স্ত্রী-সন্তানদের যেন প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ওই মঞ্চের তরফে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীদের করোনায় সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা
সব চেয়ে বেশি। মৃত্যুর হারও তাঁদের ক্ষেত্রে বেশি। তাঁদের থেকে বাড়ির লোকের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কাও তাই অনেকটাই বেশি। কারণ, ঝুঁকি এড়াতে সব স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীদের আলাদা থাকা সম্ভব নয়। তাঁদের বাড়ির লোকেদেরও সুরক্ষিত করতে না পারলে শুধু স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের প্রতিষেধক দিয়ে উপকার হবে না বলেই দাবি উঠেছে।

যদিও এ বিষয়ে তাঁদের এখনই
কিছু করার নেই বলে জানাচ্ছেন রাজ্যে স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘‘সমস্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীর বাড়ির লোককে সাধারণ মানুষ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। পঞ্চাশোর্ধ্বদের মার্চে প্রতিষেধক দেওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও কেন্দ্র এখনও নির্দিষ্ট তারিখ জানায়নি। তবে আমরা প্রস্তুত। কারা, কবে প্রতিষেধক পাবেন, তা কেন্দ্রের নির্দেশিকা মেনেই ঠিক হচ্ছে।’’

আর সেই বিষয়টি জেনে স্ত্রীর সঙ্গে প্রতিষেধক নিয়ে খুনসুটি করার সুযোগও ছাড়ছেন না অনেকেই। কেমন সেটা? আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান জ্যোতির্ময় পালের সহাস্য জবাব, ‘‘কী বলব! ‘পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য’, এমন উত্তর দিয়েই তো চালাতে হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন