চিনার পার্ক। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।
দু’পাশের খাল টইটম্বুর। একমাত্র ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশনেরও বেহাল দশা। ফলে আশঙ্কা সত্যি প্রমাণ করে ফের ভাসল সল্টলেক এবং পাঁচ নম্বর সেক্টর। প্রতি বারের মতোই রাজারহাটের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হল। দু’টি বস্তি এলাকায় ঘর ছাড়াও হতে হল বাসিন্দাদের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শহর সাজাতে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। অথচ বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও নিকাশি পরিকাঠামোর সংস্কার হল না। এই অভিযোগকে সমর্থন করেছে প্রাক্তন পুরবোর্ডের একাংশও। কিন্তু পুরসভা সূত্রে খবর, ডিপিআর করে প্রায় ৬ কোটি টাকা এসেছিল। তাতে একটি পর্যায়ের কাজ হয়েছে। অথচ এখনও নিকাশি পরিকাঠামো সংস্কারের কাজ হল না।
সল্টলেকের ১ ও ২ নম্বর সেক্টরে বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাতভর বৃষ্টি হয়েছে, জল জমবেই। কিন্তু পাম্প চালানো হলে এমন থইথই অবস্থা হত না। শাসক দলেরই এক কাউন্সিলরের অভিযোগ, ‘‘ঠিক মতো পাম্প চালানো হয়নি।’’ পুরসভা সূত্রের দাবি, ৭টি পাম্পের চারটি অকেজো। বাকি তিনটির মধ্যে সকাল থেকে দু’টি চালানো হয়েছে। একটি মজুত রাখতে হয়েছে। ফলে ৩ নম্বর সেক্টরে এফডি, এফসি, জিসি, এফবি ব্লক জলমগ্ন হয়েছে। জলমগ্ন হয় ইই ব্লক, করুণাময়ীও। একই ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশনের উপরে নির্ভর করে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের নিকাশি। সেখানেও দীর্ঘক্ষণ জলে দাঁড়িয়েছিল বলে অভিযোগ। সল্টলেকের অফিসপাড়ার জলছবিও প্রতিবারের মতোই। ডিডি ব্লকে হাসপাতাল থেকে অফিস, কোনও কিছুই বাদ যায়নি।
সেক্টর ফাইভের দশা আরও করুণ। তথ্যপ্রযুক্তি তালুকের বিভিন্ন জায়গা দীর্ঘক্ষণ জলমগ্ন ছিল। সেখানে অবশ্য জল নামানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালায় প্রশাসন। ভোর থেকেই পাম্প চালিয়ে কাজে নামেন নবদিগন্তের কর্মীরা। তবে সফল হননি। এক দিকে জলে থইথই ভেড়ি, অন্য দিকে ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেলে সংস্কারের কাজ পুরোপুরি হয়নি। তাই জল সরার জায়গা পায়নি, জানান এক নবদিগন্ত কর্তা।
শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত জলমগ্ন ছিল দত্তাবাদ এবং সংযুক্ত এলাকা। শাসক দলেরই একাংশের দাবি, সল্টলেকে পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে নিয়মিত কার্ব চ্যানেল এবং গালিপিট পরিষ্কার করা হয়নি। পাঁচ বছরেও ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশন সংস্কার শেষ হল না। তাঁদের অভিযোগের তীর প্রশাসনের দিকেই। যদিও বিধাননগর মহকুমা প্রশাসনের দাবি, তবে শুক্রবার সকাল থেকে জল দ্রুত নামানো হয়েছে। পাম্পও সময়মতো চালানো হয়েছে।
পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, কেষ্টপুর খাল ও ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেল জলমগ্ন হওয়ায় সল্টলেক ও পাঁচ নম্বর সেক্টরে জল বার করতে সময় লেগেছে। তবে সকালে জোয়ারের কারণে খাল থেকে জল বার করা যায়নি। ভাটার সময়ে লকগেট খুলে খালের জল বার করার পরে দ্রুত জল নামে।
বিধাননগর ও রাজারহাট-গোপালপুর দুই পুরসভা যুক্ত হয়ে এ বার বিধাননগর পুর-নিগম হয়েছে। তবে প্রবল বৃষ্টিতে দুই পুরসভা এলাকাতেই ভারী বর্ষণের ফলে পুরনো জলমগ্ন ছবিই দেখা গেল শুক্রবার সারাদিন। যদিও আধিকারিকদের দাবি, এ বার জল নামাতে দু’টি পুরসভার নিজস্ব পরিকাঠামো যৌথ ভাবে কাজ করেছে। অন্য বছরের তুলনায় তাই দুর্যোগ মোকাবিলায় সুবিধা হয়েছে।
রাতভর বৃষ্টিতে রাজারহাট-গোপালপুর পুর-এলাকার চিনারপার্ক-হলদিরামের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় প্রায় আড়াই ফুট জল দাঁড়িয়ে যায়। অর্জুনপুর, শান্তিময় নগর, বাগুইআটির সাহাপাড়া, প্রতিবেশী পাড়ায় সব বাড়ির একতলায় জল ঢুকে যায়।
বিধাননগর পুর-নিগমের আধিকারিকেরা জানান, বাগজোলা খাল আটকে থাকায় বাগজোলা বাইপাস-১ (বিবি-১) নম্বর খালের জল সেখানে নামতে পারেনি। ফলে রাজারহাট-গোপালপুরের বহু জায়গা জলবন্দি হয়ে পড়ে। বহু জায়গায় মানুষকে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হয়। তাঁদের জন্য ত্রাণ সামগ্রীও সরবরাহ করতে হয়। আধিকারিকেরা জানান, নিকাশির জন্য বিভিন্ন জায়গায় ১৫টি পাম্প বসানো হয়েছে। জগতপুরের কাছে বিবি-১ খালের আশপাশে দু’টি পাম্প বসেছে। তার জেরে বিকেলের পরে চিনারপার্কে এক ফুট মতো জল নামানো যায়।
তবে বিধাননগর পুর-নিগম জানিয়েই রেখেছে, যদি আর ভারী বর্ষণ না হয়, তবেই শনিবার সকালের মধ্যে রাজারহাট-গোপালপুরে জল নামবে। নয় তো বহাল থাকবে দুর্ভোগ।