জল থইথই মহানগরে যানজট, চরম দুর্ভোগ

মাত্র ৪৫ মিনিটে ১০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি। শনিবারের বারবেলায় তাতেই স্তব্ধ হল শহরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল।কম সময়ে এত বেশি বৃষ্টির কারণে জলে ডুবে যায় মধ্য কলকাতার প্রধান রাস্তা চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ। তার সঙ্গে গোদের উপরে বিষফোঁড়ার মতো যুক্ত হয় গঙ্গার জোয়ার। যার জেরে জলমগ্ন হয়ে যায় দক্ষিণ কলকাতার বেশ কিছু এলাকাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:০৩
Share:

মুক্তারামবাবু স্ট্রিট

মাত্র ৪৫ মিনিটে ১০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি। শনিবারের বারবেলায় তাতেই স্তব্ধ হল শহরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল।

Advertisement

কম সময়ে এত বেশি বৃষ্টির কারণে জলে ডুবে যায় মধ্য কলকাতার প্রধান রাস্তা চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ। তার সঙ্গে গোদের উপরে বিষফোঁড়ার মতো যুক্ত হয় গঙ্গার জোয়ার। যার জেরে জলমগ্ন হয়ে যায় দক্ষিণ কলকাতার বেশ কিছু এলাকাও। সল্টলেকের বহু রাস্তা এবং আবাসনে হাঁটুজল জমে যায়। এ সবের জেরে সর্বত্র ব্যাপক যানজটে চরম ভোগান্তি হয় শহরবাসীর। আধঘণ্টার পথ পেরোতে সময় লাগে আড়াই ঘণ্টারও বেশি। রাস্তা ছেড়ে যাঁরা পাতাল পথে গিয়েছেন, লম্বা লাইন পেরিয়ে টিকিট পেতেই নাজেহাল হয়েছেন তাঁরা। যানজটের কারণে একাধিক রুটে সাময়িক ভাবে বন্ধ করা হয় অটো চলাচলও।

এ দিন সকাল থেকেই মুখ ভার ছিল আকাশের। বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। দ্রুত জল জমতে থাকে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, মহাত্মা গাঁধী রোড, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট, মানিকতলা মেন রোড, উল্টো়ডাঙা মেন রোড, নারকেলডাঙা মেন রোড, ঠনঠনিয়া, স্ট্র্যান্ড রোড, সুকিয়া স্ট্রিট, কালীঘাট রোড, রমেশ মিত্র রোড-সহ একাধিক রাস্তায়।

Advertisement

অঝোর ধারায় বৃষ্টির মধ্যেই উত্তর কলকাতার বি কে পাল অ্যাভিনিউয়ে মহানায়ক উত্তমকুমারের জন্মদিন উপলক্ষে পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠান ছিল পুরসভার। সেখানে হাজির হয়েছিলেন মেয়র তথা মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়, শশী পাঁজা এবং মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার। বৃষ্টির জন্য সেই অনুষ্ঠান পরিচালনাতেও অসুবিধায় পড়তে হয় পুর প্রশাসনকে। সেখান থেকে ফেরার পথে জলমগ্ন চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের বেহাল অবস্থা চোখে পড়ে মেয়রের। ঠিক তার আগেই গিরিশ পার্কের কাছে বিবেকানন্দ রোডে একটি গাছও উপড়ে পড়ে। সে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। তার প্রভাব পড়ে উত্তর কলকাতার বিভিন্ন রাস্তাঘাটে। পুলিশ জানায়, এই ঘটনার জেরে প্রায় দেড় ঘণ্টা গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। দুপুর পৌনে দু’টো নাগাদ ওই রাস্তায় আটকে পড়েন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজাও।

বিবেকানন্দ রোড ছবি: সুমন বল্লভ

পুরসভা সূত্রের খবর, ১০৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় উল্টোডাঙায়। তাতে কাঁকুড়গাছি, মানিকতলা, উল্টোডাঙা আন্ডারপাস এলাকায় জল জমে। ভিআইপি রোড, সল্টলেক থেকে আসা গাড়ির লাইন পড়ে যায় উল্টোডাঙায়। রেল ব্রিজের নীচে অন্তত ঘণ্টাখানেক আটকে থাকে গাড়ি। বেলগাছিয়া এবং এন্টালির পামারবাজারে বৃষ্টি হয় যথাক্রমে ৮৭ এবং ৮৫ মিলিমিটার। জল জমে পাতিপুকুর আর দমদম আন্ডারপাসেও। শহরের উত্তরে জল-চিত্র কেমন, তা জনাতে পুরসভার কন্ট্রোলরুমে যান শোভনবাবু। পুরসভা দাবি করে, জমা জল বেরিয়ে যাবে ঘণ্টা দুয়েকে। কিন্তু তেমনটা বাস্তবে হল না কেন?

পুলিশ জানিয়েছে, পাম্প ঠিক মতো চালু করা যায়নি বলে উত্তরের কিছু রাস্তায় জল জমে থাকে। যদিও পুরসভার নিকাশি দফতরের ডিজির ব্যাখ্যা, মধ্য কলকাতার নিকাশি ব্যবস্থা মূলত পামারবাজার পাম্পিং স্টেশনের উপরে নির্ভরশীল। এ দিন বৃষ্টির সময়ে গঙ্গার জোয়ারও চলছিল। তাই পামারবাজারের সব গেট বন্ধ রাখতে হয়। চালানো যায়নি পাম্পও। ফলে ৪-৫ ঘণ্টা ধরে জল জমে থেকেছে রাস্তায়।

দক্ষিণে বৃষ্টির পরিমাণ কম থাকায় তুলনায় কম ভোগান্তি হয়েছে। পুর সূত্রের খবর, বৃষ্টি চলাকালীন বালিগঞ্জ পাম্পিং স্টেশনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সেখানকার ১১টি পাম্প বন্ধ ছিল। মেয়র জানান, উত্তরের মতো বৃষ্টি হলে এ দিন দক্ষিণের হাল খুবই খারাপ হতো। মেয়র জানান, সিইএসি-র সার্কিট ব্রেক-আপ খারাপ হওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।

জোয়ারের কারণে এ দিন রমেশ মিত্র রোডে প্রায় হাঁটুজল জমে। গত মাসেই সেখানেই অষ্টম শ্রেণির ছাত্র যশ বেঙ্গানি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। স্থানীয় এক দোকানদার জানান, ওই জমা জল যে শুধু বৃষ্টির জল নয়। গঙ্গার জলও সেখানে ঢুকে পড়ে বলে দাবি তাঁর। একই অবস্থা কালীঘাট রোডেও। সেখানেও গঙ্গার জল জমে গিয়েছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

দু’ঘণ্টার বৃষ্টিতে দুপুরে বিধাননগর পুর এলাকার কিছু জায়গায় জল জমলেও বিকেলের দিকে তা নেমে যায়। পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শুধু তিন নম্বর সেক্টরে এক জায়গায় কেব্‌ল ফল্টের জন্য জল নামতে দেরি হয়েছে। মেয়র পারিষদ (নিকাশি) দেবাশিস জানা জানান, বৃষ্টির বেগ বেশি থাকায় বিভিন্ন জায়গাতেই পাম্প চালু করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টি খুব বেশি হওয়ায় কেষ্টপুর খালের আশপাশে, বাগুইআটির সাতগাছি রোড, অর্জুনপুরের মতো কিছু এলাকায় জল দাঁড়িয়ে যায়।

পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ক্যান্টনমেন্ট খালে সংস্কারের কাজ চলছে বলে অর্জুনপুরের কাছে পুষ্পকনগরেও জল জমে আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন