ঘরছাড়া বৃদ্ধকে বাড়ি ফেরাতে নির্দেশ কোর্টের

বয়স্ক কোনও নাগরিক কার সঙ্গে মেলামেশা করবেন, তা কেউ ঠিক করে দিতে পারেন না। এমনই মন্তব্য করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, সমাজে মেলামেশা করা প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৫৮
Share:

বয়স্ক কোনও নাগরিক কার সঙ্গে মেলামেশা করবেন, তা কেউ ঠিক করে দিতে পারেন না। এমনই মন্তব্য করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, সমাজে মেলামেশা করা প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার।

Advertisement

নিজের বাড়ি থেকে বিতাড়িত হওয়া অশীতিপর এক বৃদ্ধের দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ওই মন্তব্য করেন বিচারপতি। এ দিন তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, ওই বৃদ্ধকে অবিলম্বে তাঁর ভাড়া বাড়ি থেকে সল্টলেকে নিজের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাঁকে ফিরিয়ে দিতে হবে তাঁর ফিক্সড ডিপোজিটের কাগজপত্র এবং লকারের চাবিও।

বিধাননগর (দক্ষিণ) থানার পুলিশ জানায়, ভবেশ মৈত্র নামে ওই বৃদ্ধের বয়স ৮৭ বছর। তিনি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তাঁর স্ত্রী কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছেন। তাঁরা নিঃসন্তান। সেই কারণে ভবেশবাবু তাঁর স্ত্রীর বোনের ছেলে আশিস সেনগুপ্তকে নিজেদের কাছে রেখে বড় করেছেন। সল্টলেকে ভবেশবাবুর দোতলা বাড়ি। ওই বাড়ি তিনি স্ত্রীর নামে লিখে দিয়েছিলেন। মারা যাওয়ার আগে তাঁর স্ত্রী সেই বাড়ি আশিসবাবুর নামে উইল করে দিয়ে যান। তবে শর্ত ছিল, আমৃত্যু বাড়ির একতলায় ভবেশবাবুকে থাকতে দিতে হবে। আশিসবাবু তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে থাকবেন দোতলায়।

Advertisement

পুলিশের কাছে ভবেশবাবুর অভিযোগ, আশিসবাবু ও তাঁর স্ত্রীর অত্যাচারে সেই বাড়ি থেকে কয়েক মাস আগে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন তিনি। আশিসবাবুর সঙ্গে জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে তাঁর কয়েক লক্ষ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট ছিল। তার কাগজপত্রও তাঁকে দেওয়া হয়নি। তাঁকে পাড়ার কোনও লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করতেও দেওয়া হত না। ভবেশবাবুর ভাগ্নে সুপ্রভাত সান্যাল তাঁকে হাওড়ার বটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় একটি ঘর ভাড়া করে দেন। পেনশনের টাকায় বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার ওষুধপত্র কিনে, ঘর ভাড়া দিয়ে প্রায় কিছুই থাকত না তাঁর কাছে। ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙিয়ে টাকা নেওয়ার জন্য তিনি সল্টলেকে আশিসবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু অভিযোগ, টাকা দিতে অস্বীকার করেন আশিসবাবু।

বৃদ্ধের আইনজীবী পৌলোমী দত্ত জানান, পুলিশের কাছে আশিসবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে কোনও লাভ না হওয়ায় হাইকোর্টে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার মামলা দায়ের করেন তাঁর মক্কেল। সেই মামলারই শুনানি ছিল এ দিন।

এ দিন মামলার শুনানিতে সরকারি কৌঁসুলি জানান, বিধাননগর (দক্ষিণ) থানার পুলিশ দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলে নিজেদের মধ্যে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে বলেছে। পুলিশ একেবারে চুপ করে বসে থাকেনি। ভবেশবাবুর আইনজীবীর দাবি, বৃদ্ধকে তাঁর নিজের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক। মানসিক ভাবে তিনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কোনও পরিচারিকাকেও তাঁর কাছে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না প্রতিবেশীদের সঙ্গে। আশিসবাবুর আইনজীবী আদালতে জানান, এমন অভিযোগ ঠিক নয়। বৃদ্ধ নিজেই তাঁর বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন।

এ কথা শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারপতি বসাক ওই মন্তব্য করে আশিসবাবুর আইনজীবীকে বলেন, অবিলম্বে নিজের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে তাঁর মক্কেলকে। ব্যাঙ্কের জমা রাখার টাকার সব নথিও দিতে হবে তাঁকে। পুলিশকে বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন, ভবিষ্যতে ভবেশবাবু কোনও অভিযোগ জানালে সঙ্গে সঙ্গে আইনমাফিক ব্যবস্থা নিতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন