পরিবেশে পরিবর্তন চেয়ে ব্যানার শহর জুড়ে

শুক্রবার রাত থেকেই রবীন্দ্র সদন মেট্রো স্টেশন চত্বর, রাসবিহারী মোড়-সহ বিভিন্ন জায়গায় ‘পরিবর্তন চাই’ শিরোনামে হোর্ডিং, ব্যানার দেখা যাচ্ছে। তা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে আলোচনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৯ ০১:৩২
Share:

দাবি: এমনই পোস্টার পড়েছে শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে। নিজস্ব চিত্র

ভোটের আগে শহরে ফের ‘পরিবর্তন চাই’ হোর্ডিং, ব্যানার নজরে আসছে!

Advertisement

শুক্রবার রাত থেকেই রবীন্দ্র সদন মেট্রো স্টেশন চত্বর, রাসবিহারী মোড়-সহ বিভিন্ন জায়গায় ‘পরিবর্তন চাই’ শিরোনামে হোর্ডিং, ব্যানার দেখা যাচ্ছে। তা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে আলোচনা। বস্তুত, ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটের আগে একই শিরোনামে পোস্টার দেখা গিয়েছিল শহর জুড়ে। তখন তা ছিল রাজনৈতিক ক্ষমতা বদলের আহ্বান। এ বারের ‘পরিবর্তন’-এর দাবি অবশ্য একেবারেই পরিবেশকেন্দ্রিক।

পরিবেশকর্মীদের যৌথ সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’, পরিবেশ গবেষণা সংস্থা ‘ডব্লিউডব্লিউএফ’-সহ মোট তিনটি সংগঠন একসঙ্গে এই হোর্ডিং, ব্যানার লাগিয়ে দাবি করেছে, কলকাতার বায়ুদূষণ, জলা ভরাট, প্লাস্টিক বর্জ্য, শব্দদূষণের মতো যে উপদ্রব রয়েছে, তা বদলাতে হবে। মূলত উত্তরে সিঁথি থেকে দক্ষিণে টালিগঞ্জ, এই এলাকার মধ্যেই এই হোর্ডিং, ব্যানার আপাতত সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। আপাত ভাবে দেখলে, এই প্রচারের সঙ্গে নাগরিক সমাজের যোগ রয়েছে। কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন করছেন, ভোটের আগে পরিবেশকর্মীদের এই হোর্ডিং, ব্যানার কি রাজনৈতিক বক্তব্য নয়? ‘‘এই বক্তব্য ১০০ শতাংশ রাজনৈতিক বক্তব্য। এটি অস্বীকার করার জায়গা নেই। তবে এর সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলের সংস্রব নেই,’’ উত্তর সবুজ মঞ্চের সম্পাদক নব দত্তের। তাঁর বক্তব্য, নির্বাচনের মাধ্যমে তো জনগণ দেশের সরকার এবং রাজনৈতিক প্রশাসন গড়বে। সেখানে অরাজনৈতিক বক্তব্য বলা হবে কেন? জনপ্রতিনিধিরা এই বিষয়গুলি নিয়ে কত দূর সরব হবেন বা যে দল সরকার গড়বে তারা এই বিষয়গুলি রূপায়ণে কত দূর চেষ্টা করবেন, তা নিয়ে জনমত তৈরির চেষ্টা করছেন এই পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলি। ‘‘এই বক্তব্যের মাধ্যমে নির্বাচনের আগে একটি রাজনৈতিক আলোচনাও শুরু করতে চাইছি আমরা,’’ বলছেন নববাবু।

Advertisement

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস’ (এডিআর)-এর সমীক্ষা বলছে, এ দেশে বহু মানুষই ভোটের ক্ষেত্রে পরিবেশকে গুরুত্ব দেন। কিন্তু সার্বিক ভাবে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে ভোটের প্রচারে পরিবেশ এখনও তেমন গুরুত্ব পায় না। সবুজ মঞ্চের নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, চলতি লোকসভা নির্বাচনের সময়ে তাঁরা রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে আলোচনাসভার আয়োজন করেছিলেন। তাতে নেতারা নানা কথা বললেও সেই বক্তব্য কতটা জোরালো ছিল, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে পরিবেশকর্মীদের।

তবে রাজনীতিতে ‘পরিবেশপন্থী’ দল ইউরোপ বিশেষত জার্মানিতে ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলেছে। সে দেশের ‘গ্রিন পার্টি’ কয়েকটি প্রদেশে ক্ষমতায় রয়েছে। সার্বিক ভাবে জার্মানির পার্লামেন্ট ‘বুন্দেস্ট্যাগ’-এও যথেষ্ট প্রভাবশালী তারা। প্রসঙ্গত, এ রাজ্যেও প্রায় এক দশক আগে এক বার ‘গ্রিন পার্টি’ তৈরির উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। সেই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘সে বার আলোচনা হয়েছিল। বিলেতের গ্রিন পার্টির নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ হয়। কিন্তু উদ্যোগটি শেষমেশ বাস্তবায়িত হয়নি।’’ তাঁর বক্তব্য, এ দেশে রাজনৈতিক দল তৈরি করতে ও নির্বাচনে লড়তে যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন, তার জোগান পরিবেশকর্মীদের কাছে নেই।

অর্থের জোগান না থাকলেও নির্বাচনের উপরে নাগরিক সমাজের ‘প্রভাব’ এ রাজ্য দেখেছে। ‘পরিবর্তন’ স্লোগানই ছিল তার মূল হাতিয়ার। রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলে সেই প্রভাব অনেকটাই দায়ী। এ বারেও নাগরিক সমাজের একাংশ থেকে

ওঠা পরিবর্তনের দাবি কি শহরের দূষণ চিত্র বদলাবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন