বুধবার বন্দর এলাকায় এক ব্যবসায়ীর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে তোলা চেয়েছে গুন্ডারা। বৃহস্পতিবার ভোরে ট্যাংরায় এক যুবককে গুলি করে চম্পট দিয়েছে দুই যুবক। সম্প্রতি কড়েয়ায় একটি খাবার দোকানে গিয়ে হুমকি দিয়ে এসেছিল দক্ষিণ কলকাতার একদাগি দুষ্কৃতী।
এটাই শহরের নিরাপত্তার চিত্র! অর্থাৎ গুন্ডাদমন করে আইনের শাসন জারি করাটা যাঁদের কাজ, সেই পুলিশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গুন্ডারাই! লাগাতার এমন ঘটনায় আক্ষরিক অর্থেই প্রশ্নের মুখে নাগরিকদের নিরাপত্তা। তাঁরা বলছেন, পাড়ার মুখে এসে যদি বিনা বাধায় দুষ্কৃতীরা গুলি চালাতে পারে, তা হলে বাড়িতে ঢুকে হামলা করলেই বা রুখবে কে? অনেকে বলছেন, জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে তো নয়, এমন হাঙ্গামা ঘটছে খাস মহানগরের বুকে! ‘‘কলকাতা কি তা হলে বন্দুকবাজদের স্বর্গরাজ্য টেক্সাস হয়ে উঠল?’’ বলছেন এক প্রবীণ নাগরিক।
এ সব প্রশ্নের ভিত্তিতে উঠে এসেছে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডাদমন শাখার ‘বেহাল’ দশার প্রসঙ্গও। পুলিশের অনেকেই বলছেন, শহরে গুন্ডাদমনের মূল কাজ তাঁদেরই। কিন্তু গুন্ডাদের বাড়বাড়ন্তে ওই শাখার অফিসারেরা কেন মিইয়ে রয়েছেন সে প্রশ্নও উঠছে। এক প্রবীণ
পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘কলকাতায় শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য এই অফিসারদেরই কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছিল। ভোট পেরোতেই তাঁদের এমন দশা কেন, তা ভাবা উচিত।’’
লালবাজারের অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, ভোটের পরেই গুন্ডাদমন শাখার কয়েক জন অফিসারকে বদলি করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে গুন্ডাদের পাকড়াও করায় রাজনৈতিক নেতাদের থেকে ‘তিরস্কার’ও জোটে। কয়েক জনকে বদলির হুমকিও দেওয়া হয়। এর পরেই যেন পিছিয়ে এসেছেন অফিসারেরা। লালবাজারের এক প্রবীণ অফিসারের কথায়, ‘‘কড়েয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত দুষ্কৃতী এক দাপুটে নেতার ঘনিষ্ঠ। তাকে ধরতে গেলে অফিসারকে বদলি করাও হতে পারে। তাই ওই দুষ্কৃতীর এক শাগরেদকে ধরে নিজেদের বাঁচাতে চেয়েছেন অফিসারেরা। ফলে কেন ঝুঁকি নিতে যাবেন তাঁরা?’’
লালবাজার সূত্রে বলা হচ্ছে, ওই শাখার অফিসারদের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উপরে নজরদারি বা দুর্নীতিদমনেই বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। গুন্ডাদমন শাখার ‘মনিটরিং সেল’, যার কাজ গুন্ডাদের উপরে নজরদারি, সেই দফতরকে সরানো হয়েছে ‘স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স’-এ। জঙ্গিদমনে নিযুক্ত ওই শাখায় অন্য অফিসারদের যাতায়াতে কড়াকড়ি রয়েছে। ফলে নজরদারির হাতিয়ারটাই সরে গিয়েছে গুন্ডাদমনে নিযুক্ত অফিসারদের। এক সময়ে যাদের লালবাজারের কুলীন হিসেবে দেখানো হতো, তাঁরাই এখন রাজনৈতিক চাপে নিজেদের স্বত্তা হারিয়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ কলকাতা পুলিশের
শীর্ষ কর্তার।
নাগরিকদেক প্রশ্ন, ‘‘পরিস্থিতি যদি এমনই থাকে, আমাদের নিরাপত্তা দেবে কে?’’ সদুত্তর নেই।