এসএসকেএম

পুলিশ ধরেও ছেড়ে দিল ‘চেনা দালাল’ রাজেনকে

দালাল ধরতে হাসপাতালে হানা দিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরেই তাঁকে ধরেছিল পুলিশ। বিকেলে লালবাজারে কলকাতা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত গোয়েন্দাপ্রধান বিশাল গর্গ সেই গ্রেফতারের কথা সাংবাদিকদের জানিয়েও দেন। আবার রাতে সেই ব্যক্তিকে ছেড়েও দেয় পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share:

দালাল ধরতে হাসপাতালে হানা দিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরেই তাঁকে ধরেছিল পুলিশ। বিকেলে লালবাজারে কলকাতা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত গোয়েন্দাপ্রধান বিশাল গর্গ সেই গ্রেফতারের কথা সাংবাদিকদের জানিয়েও দেন। আবার রাতে সেই ব্যক্তিকে ছেড়েও দেয় পুলিশ। বিশাল গর্গ তখন আগের বক্তব্য পাল্টে বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু অনিয়মের অভিযোগ আমরা জানতে পেরেছিলাম। তাই ওঁকে লালবাজারে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদের পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’’

Advertisement

কে তিনি? যাঁকে নিয়ে খোদ লালবাজারও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অবস্থান বদলাল? কে তিনি, যাঁকে ভ্যানে তোলামাত্রই পুলিশি অভিযানের প্রতিবাদে হাসপাতাল সুপারের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের একাংশ?

তিনি রাজেন মল্লিক। হাসপাতালের ‘প্রভাবশালী’ চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। যাঁর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই হাসপাতালে শয্যার ব্যবস্থা করার নামে রোগীদের পরিবারের থেকে টাকা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। রাজেন এসএসকেএম হাসপাতালে প্রাক্তন মন্ত্রী তথা এসএসকেএমের রোগীকল্যাণ সমিতির কো-চেয়ারম্যান মদন মিত্রের ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত। অনেকেরই মতে, পুলিশি অভিযানে তাঁর ধরা পড়ার ঘটনা এসএসকেএমের কর্মীদের সঙ্গে দালালদের সরাসরি যোগসাজশের অভিযোগকেই আরও এক বার প্রমাণ করে দিল।

Advertisement

ঘটনাচক্রে পুলিশ রাজেনকে ধরার সময়ে এসএসকেএমেই হাজির ছিলেন মন্ত্রী তথা রোগীকল্যাণ সমিতির নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান অরূপ বিশ্বাস। তাঁর অবশ্য দাবি, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজকর্মের গতিপ্রকৃতি খতিয়ে দেখতে এসেছিলেন তিনি। অরূপবাবু বলেন, ‘‘পুলিশের কাজ পুলিশ করছে। আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। এর মধ্যে ঢুকতেও চাই না।’’

হাসপাতালের একটি সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে, রাজেনকে ‘ধরা’ এবং ‘ছেড়ে দেওয়া’ একটি কুশলী পদক্ষেপ। হাসপাতালে দালাল দমন অভিযানে এর জেরে কিছুমাত্র ঘাটতি হবে না। তা যেমন চলছিল, তেমনই চলবে। কিছু ‘কৌশলগত’ কারণে রাজেনকে এখনই গ্রেফতার করা হল না। তবে এই ‘কৌশল’-এর যুক্তি কতটা গ্রহণযোগ্য, সেই প্রশ্নও উঠছে। অনেকের মতে, এসএসকেএমের অভ্যন্তরীণ ‘রাজনীতি’তে রাজেনের গুরুত্ব ও প্রভাব এই মুহূর্তে খর্ব করা কঠিন বুঝেই রাজেনকে ধরেও ছেড়ে দিতে বাধ্য হল পুলিশ। তৃণমূলের অন্দরে ‘ভারসাম্যের খেলা’য় এসএসকেএমের রাজেন এ বার দলের মধ্যেই ‘ঘর’ বদল করলেন কি না, জল্পনা চলছে তা নিয়েও। লালবাজার থেকে বেরিয়ে রাজেনও জোর গলায় জানিয়ে দিলেন, আজ, শুক্রবার পুলিশি অভিযানের প্রতিবাদে হাসপাতাল সুপারের ঘরে সামনে তিনি বিক্ষোভ করবেন।

এসএসকেএমে দালাল ধরার অভিযান শুরু হয়েছিল দিন কয়েক আগেই। ইমার্জেন্সি, আউটডোরে লাগাতার ধরপাকড় তো চলছিলই, এমনকী রোগীর পরিজন সেজে ফাঁদ পেতেও দালালদের হাতেনাতে ধরছিল পুলিশ। সেই সূত্রেই এ দিন পুলিশের জালে পড়েন রাজেন। এ দিন তাঁকে ধরার পরেই স্থানীয় ডোম বস্তির বেশ কিছু লোক এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের একাংশ সুপারের ঘরের সামনে বিক্ষোভ করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানান, চাপের কাছে নতিস্বীকার করবেন না তাঁরা। পুলিশের সঙ্গেও তাঁদের কথা হয়েছে। কর্মীরা দালালচক্রে জড়িত থাকলে কাউকে রেয়াত করা হবে না বলেও জানান কর্তৃপক্ষ। এক প্রবীণ চিকিৎসকেরও দাবি, ‘‘বছরের পর বছর সুপারের দফতরে ডিউটি করেও অবাধে দালালি চালিয়ে গেছেন রাজেন। বাম জমানাতেও যেমন কর্তৃপক্ষের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তৃণমূলের জমানাতেও তা-ই। ওঁকে গ্রেফতার করে বাকিদের সামনেও বার্তা রাখা হল।’’

এসএসকেএমে রাজেন যাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, সেই মদন মিত্র এ দিন বলেন, ‘‘রাজেনকে আমি চিনি। এসএসকেএমের বেশির ভাগ কর্মীকেই চিনি। আমি কখনও ওর কোনও দুর্নীতি দেখিনি। কেউ দোষ করে থাকলে অবশ্যই তার শাস্তি হওয়া উচিত। আর দোষ প্রমাণিত না হলে নিশ্চয়ই সসম্মানে ছাড়া পাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন