হোটেল-কর্তা নিখোঁজে ইঙ্গিত দুর্ঘটনার দিকেই

লালবাজার সূত্রের খবর, হোটেলের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর অরিন্দম বসু-সহ ৩৫ জন ঘটনার দিন যে লঞ্চে ছিলেন, তাতে কোনও ডুবুরি ছিলেন না। নিয়ম মাফিক প্রতিটি লঞ্চে এক জন করে ডুবুরি থাকার কথা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৫
Share:

অরিন্দম বসু

কলকাতার গঙ্গায় ভাসমান একটি হোটেলের কর্তার জলে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রাথমিক ভাবে দুর্ঘটনা বলেই মনে করছে পুলিশ। তবে ওই ঘটনার তদন্তে নেমে একাধিক গাফিলতির সন্ধান পেলেন তদন্তকারীরা।

Advertisement

লালবাজার সূত্রের খবর, হোটেলের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর অরিন্দম বসু-সহ ৩৫ জন ঘটনার দিন যে লঞ্চে ছিলেন, তাতে কোনও ডুবুরি ছিলেন না। নিয়ম মাফিক প্রতিটি লঞ্চে এক জন করে ডুবুরি থাকার কথা। সেই সঙ্গে লঞ্চে লাইফ জ্যাকেট পরাও বাধ্যতামূলক। কিন্তু ওই হোটেল কর্তা বা তাঁর সঙ্গীরা কেউ তা ব্যবহার করেননি। তাই অরিন্দমবাবুকে গঙ্গায় তলিয়ে যেতে দেখে লঞ্চের কর্মীরা গঙ্গায় দ়ড়ি ফেলে তাঁকে উদ্ধারের চেষ্টা করলেও কেউ মাঝগঙ্গায় নামেননি বলেই জানতে পেরেছে পুলিশ।

শনিবার সকাল‌ে উলুবেড়িয়ার ৫৮ নম্বর গেটের কাছে একটি ভাড়া করা লঞ্চে সহকর্মীদের সঙ্গে পিকনিক করতে যান অরিন্দমবাবু। লঞ্চে মোট ৩৫ জন যাত্রী ছিলেন। ওই দিন বিকেলে পিকনিক করে ফেরার পথে হাওড়ার নাজিরগঞ্জের কাছে অরিন্দম বসু লঞ্চের সামনে সারেঙের কেবিনের দিকে যাওয়ার পথে গঙ্গায় পড়ে তলিয়ে যান। পরে অরিন্দমবাবুর স্ত্রী অদিতি বসু পশ্চিম বন্দর থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। তবে শনিবার, রবিবারের পরে সোমবারও গঙ্গায় ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালানো হলেও খোঁজ মেলেনি অরিন্দমবাবুর। তবে দুর্ঘটনার তত্ত্ব জোরালো হলেও খুনের অভিযোগ দায়ের হওয়ার বিযটিকে পুলিশ গুরুত্ব দিয়েই দেখছে। মঙ্গলবার ফরেন্সিক দল ওই লঞ্চে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবে। সেখানে রাখা হবে লঞ্চের সব কর্মীদেরও।

Advertisement

প্রাথমিক তদন্তের পরে তদন্তকারীরা জানান, ঘটনার সময় ওই লঞ্চে তিন জন কর্মী ছিলেন। ওই তিন জন ছাড়াও লঞ্চে থাকা আরও ন’জনকে সোমবার পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, এর মধ্যে সারেং-সহ চার জন অরিন্দমবাবুকে জলে পড়ে যেতে দেখেছেন। ঘটনার পরে সারেং প্রথম অরিন্দমবাবুর জলে পড়ে যাওয়ার বিষয়টি সকলকে জানিয়েছিলেন। কেন তাঁরা অরিন্দমবাবুকে উদ্ধার করতে গঙ্গায় ঝাঁপ দেননি? পুলিশের ওই প্রশ্নের মুখে তাঁরা দাবি করেছেন, মাঝগঙ্গায় ঘটনা ঘটায় তাঁরা সাহস করে জলে ঝাঁপ দেননি। ওই সময় লঞ্চের গতি বেশি থাকায় অরিন্দমবাবু জলে পড়ে যাওয়ার পরে লঞ্চটি কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিল। পরে লঞ্চটিকে ঘুরিয়ে ওই জায়গায় নিয়ে এলেও অরিন্দমবাবুর হদিস মেলেনি বলে তদন্তকারীদের জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

পুলিশ জানিয়েছে, ‘শিবানী’ নামের ওই লঞ্চে ডুবুরি না থাকার পাশাপাশি কেন যাত্রীরা লাইফ জ্যাকেট পরেননি তা জানতে ওই লঞ্চের মালিককে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা। এক পুলিশ কর্তা জানান, লঞ্চের মালিক দাবি করেছেন মাঝিরাই ডুবুরির কাজ করেন। আর অরিন্দমবাবু-সহ কেউ লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করতে চাননি। লঞ্চের মালিক এবং কর্মীদের বিরুদ্ধে গাফিলতির মামলা দায়ের করা যায় কিনা সে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

লালবাজার সূত্রের খবর, গত বছর গঙ্গা ভ্রমণে গিয়ে প্রিন্সেপ ঘাটের কাছে তলিয়ে গিয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র। এর পরেই লাইফ জ্যাকেট পরে নৌকায় ভ্রমণ-সহ জলে নিরাপত্তার বিষয়ে একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল পুলিশ। কিন্তু নির্দেশ কার্যকর করার ক্ষেত্রে নজরদারিতে যে কিছুটা ফাঁক থেকে গেছে তা শনিবারের ঘটনাতেই স্পষ্ট বলেই মনে করছেন পুলিশের একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন