জল-ছবি। সোমবার, হাওড়ার পঞ্চাননতলা রোডে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
মরসুমের প্রথম বৃষ্টিতেই চেনা জলছবি ফিরে এল হাওড়ায়। দুপুরে বৃষ্টি থেমে গেলেও রাত পর্যন্ত জলমগ্ন হয়ে থাকল পথঘাট, অলিগলি। যদিও হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তীর দাবি, নিকাশি ব্যবস্থার উন্নত হওয়ায় আগের তুলনায় অনেকটাই দ্রুত নেমেছে জমা জল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘জল নামানোর ক্ষেত্রে হাওড়া পুরসভা অনেকটাই সফল। তবে সবটা নয়। টাকা ও পরিকাঠামো থাকলে আরও সফল হওয়া যেত।’’
মঙ্গলবার শেষরাত থেকে শুরু হওয়া তুমুল বৃষ্টিতে কলকাতার পাশাপাশি বানভাসি হয় হাওড়া ও বালির বহু এলাকা। জল জমে থমকে যায় যানচলাচল। নাজেহাল হন নিত্যযাত্রী ও সাধারণ মানুষ। জলমগ্ন হয়ে পড়ে নবান্ন এলাকাও। পূর্ব রেলের হাওড়া স্টেশনের রুট রিলে বিকল হয়ে ব্যাহত হল ট্রেন চলাচল। যার রেশ চলে রাত পর্যন্ত।
সামান্য বৃষ্টিতে হাওড়া শহরের অধিকাংশ ওয়ার্ডে জল জমা নতুন নয়। কিন্তু এ দিন শেষ রাত থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত দফায় দফায় বৃষ্টিতে হাওড়া ও বালির ৬৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২০ থেকে ২৪টি ওর্য়াডের অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকাগুলি জলমগ্ন হয়ে পড়ে। সবচেয়ে বেশি জল জমে উত্তর হাওড়ার জায়সবাল হাসপাতাল লাগোয়া এলাকা-সহ গুহ রোড, বেনারস রোড, কে রোড, পি রোডে। মধ্য হাওড়ার বেলিলিয়াস রোড, বেলিলিয়াস লেন, পঞ্চাননতলা রোড, ইস্ট-ওয়েস্ট বাইপাস, টিকিয়াপাড়া, রামরাজাতলা এলাকা প্রায় ৩-৪ ইঞ্চি জলের নীচে চলে যায়। পঞ্চাননতলা রোডে গাছ পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীদের নিয়ে ছুটে যান নিকাশি দফতরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ শ্যামল মিত্র।
পুরসভা সূত্রে খবর, জল বার করতে এ দিন আলাদা পাম্প বসেনি। ঘুসুড়ি, ইছাপুর, কোনা, বেলগাছিয়া, পঞ্চাননতলা ও রাউন্ড ট্যাঙ্ক লেনে পুরসভার ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশনগুলি দিনভর কাজ চালায়। রাস্তায় থাকতে বলা হয় নিকাশি দফতরের কর্মীদেরও। ব্যবহার হয় বাকেট ও জেট সাকশন মেশিন। যদিও এত কিছু সত্ত্বেও বৃষ্টি থামার আট ঘণ্টা পরেও যে শহরের বহু জায়গা থেকে জল নামেনি, পুরসভার কর্মীরাও তা স্বীকার করেছেন। এক কর্মী বলেন, ‘‘বর্ষার অনেক আগে থেকে নিকাশির কাজ শুরু না করায় এই বিপত্তি। গত বছর ঠিক সময়ে করা হয়েছিল বলে জল
তাড়াতাড়ি নেমেছিল।’’
যদিও মেয়র পারিষদ (নিকাশি) শ্যামলবাবুর দাবি, বর্ষার অনেক থেকেই নিকাশির কাজ শুরু হয়েছে। তাই অধিকাংশ জায়গায় আগের তুলনায় দ্রুত নেমেছে জল। এমনকী নবান্নের মতো নিচু এলাকাতেও জল নেই। শ্যামলবাবু বলেন, ‘‘পুরসভার ৬৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ৪-৫টি নিচু এলাকায় জল থাকতেই পারে। সেই জলও রাতেই নেমে যাবে। এত বৃষ্টি হয়েছে, জল বেরোতে একটু তো সময় দিতে হবে।’’
আর মেয়রের বক্তব্য, ‘‘হাওড়ার মতো পুরনো শহরে নিকাশির খোলনলচে বদলাতে অনেক টাকা দরকার। সেই টাকা পুরসভার নেই। তবে এই সীমিত ক্ষমতার মধ্যেও নিকাশির অনেকখানি উন্নতি হয়েছে
বলে মনে করি।’’
অন্য দিকে, বৃষ্টিতে হাওড়া স্টেশনে দিনভর ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। সকাল সাড়ে ৯টার পরে জমা জলের কারণে রুট রিলে ইন্টারলকিং সিস্টেমে গোলমাল দেখা দেয়। ফলে সব ট্রেন এক-দেড় ঘণ্টা দেরিতে স্টেশনে ঢোকে। সিগন্যাল ব্যবস্থা অকেজো হয়ে যাওয়ায় স্টেশনের অনেক আগে বহু ট্রেন দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। যাত্রীদের অনেককেই লাইন ধরে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছতে দেখা যায়।