বিজন সেতু

রেগে গিয়েই মেরেছি, স্বীকার অটোচালকের

কখনও খুচরো নিয়ে বচসা, কখনও বেপরোয়া ভাবে অটো চালানো নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে চালকদের গোলমালের বহু নজির রয়েছে। হাল ফেরাতে মানসিকতা বদলানোর উদ্দেশ্যে একাধিক বার অটো চালকদের সঙ্গে বৈঠকও করেছে লালবাজার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share:

কখনও খুচরো নিয়ে বচসা, কখনও বেপরোয়া ভাবে অটো চালানো নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে চালকদের গোলমালের বহু নজির রয়েছে। হাল ফেরাতে মানসিকতা বদলানোর উদ্দেশ্যে একাধিক বার অটো চালকদের সঙ্গে বৈঠকও করেছে লালবাজার। কিন্তু রবিবার বিজন সেতুর কাছে এক প্রৌঢ়কে মারধরের ঘটনায় ধৃত অটোচালকের স্বীকারোক্তি ও তার নমুনা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছে পুলিশই।

Advertisement

রবিবার ঘটনাটি ঘটে বিজন সেতুর কাছে। গরফার রামলাল বাজারের বাসিন্দা, শান্ত সাহা নামে এক প্রৌঢ়কে সপাটে ঘুষি মারে এক অটোচালক। রাত ১১টা নাগাদ গ্রেফতার করা হয় বছর পঁচিশের ওই অটোচালক দেবাশিস পালকে।

অটো চালকদের একাংশের আচরণে লাগাম দিতে পরিবহণ দফতর থেকে পুলিশ, সবাই পথে সচেষ্ট হলেও আখেরে যে তাঁরা লাগামছাড়া হয়ে গিয়েছেন, রবিবারের ঘটনা ফের তার প্রমাণ— এমনটাই মনে করছেন সাধারণ যাত্রী থেকে পুলিশকর্তারা।

Advertisement

পুলিশের দাবি, জেরায় দেবাশিস জানায়, অন্য এক অটোচালকের সঙ্গে ওই প্রৌঢ়ের বচসা দেখে তার রাগ হয়েছিল। তাই সে তাঁকে ঘুষি মেরেছে। ‘‘নিজের সঙ্গে গোলমাল হয়নি। অথচ প্রৌঢ়কে ঘু‌ষি মারা নিয়ে নির্লিপ্ত ভাবে এমন কথা বলল যেন এটাই স্বাভাবিক।’’— মন্তব্য এক তদন্তকারীর।

ওই দিন বিকেলে সপরিবার গরফায় ফিরছিলেন শান্তবাবু। বিজন সেতুর কাছে একটি অটোয় স্ত্রী-মেয়েকে বসিয়ে নাতিকে নিয়ে পরের অটোয় উঠতে যাচ্ছিলেন তিনি। তখনই আর একটি অটো দ্রুত গতিতে শান্তবাবুর কাছে চলে আসে। ধাক্কা খাওয়া থেকে কোনও রকমে রেহাই পান তিনি ও তাঁর নাতি। প্রতিবাদ করলে ওই অটোচালকের সঙ্গে বচসা হয় শান্তবাবুর। এর পরে দেবাশিসের অটোয় উঠতে গেলে সে শান্তবাবুকে নেমে যেতে বলে। তা থেকে শুরু হয় বচসা। অভিযোগ, বচসা চলাকালীন হঠাৎ শান্তবাবুর চোখে ঘুষি মারে দেবাশিস। তার পরে পালিয়ে যায়।

পুলিশ জানায়, দেবাশিসের সঙ্গে শান্তবাবুর প্রথমে কোনও গোলমালই হয়নি। যে অটোচালক অন্য চালকের সঙ্গে বচসা দেখে শুধু রাগের কারণে এক প্রৌঢ়কে মেরে চোখ ফুলিয়ে দিতে পারে, তার মানসিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায় বলে পুলিশের বক্তব্য। গত বছরও এক তরুণীর টাকা-মোবাইল লুঠের অভিযোগ উঠেছিল এক অটোচালকের বিরুদ্ধে। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

তবে সিটু প্রভাবিত কলকাতা অটোরিকশা অপারেটর্স ইউনিয়ন’-এর কলকাতার সম্পাদক অজিত চৌধুরী বলেন, ‘‘বর্তমানে অটো চালকদের বড় অংশকে নিয়ন্ত্রণ করছে আইএনটিটিইউসি। চালকদের বেপরোয়া মনোভাব বদলাতে হলে সংগঠনকেই হাল ধরতে হবে। সেটা কিন্তু হচ্ছে বলে মনে হয় না।’’

শাসক দল তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র দক্ষিণ কলকাতার সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অভিযোগ পেলে সংগঠনের তরফেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই ধরনের ঘটনায় অভিযুক্ত কোনও চালক যেন আর কোনও রুটে অটো চালাতে না পারেন, সেই ব্যবস্থাও করা হবে।’’

তবে চালকদের ঠিক পথে নিয়ে আসার ব্যাপারে এখনই হাল ছাড়তে নারাজ লালবাজার। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (১) বিনীত গোয়েল বলেন, ‘‘কম সময়ে সব কিছুর ফল পাওয়া যায় না। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব। আমাদের বিশ্বাস, ফল একদিন মিলবেই।’’ সে দিনটা কবে আসবে, যাত্রীরা এখন তারই অপেক্ষায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন