ক্রেতার অপেক্ষায় কুমোরটুলি

শিল্পী অমল পালকে আবার ভিন্ন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। একটি প্রতিমা বায়না হওয়ার পরেও ক্রেতা বাতিল করেছেন। মোটা টাকা ব্যয়ে বানানো ওই প্রতিমার এখনও ক্রেতা নেই।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৭ ০৮:৩০
Share:

—ফাইল চিত্র।

পুজোর বাকি ২৮ দিন। এখনও পাঁচশো প্রতিমার বায়নাই হয়নি। মাথায় হাত শিল্পীদের!

Advertisement

কুমোরটুলিতে মৃৎশিল্পীর সংখ্যা প্রায় ৫০০। তাঁরা গড়ে ২০-৪০টি করে প্রতিমা তৈরি করেন। কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক কার্তিক পাল বলেন, ‘‘প্রতিমা তৈরি করে এখনও পর্যন্ত বায়না না হওয়াটা এ বার ব্যতিক্রমী। প্রতিমা বিক্রির জন্য শিল্পীরা পুরনো ক্রেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্রেতাই জানাচ্ছেন, নোট বাতিল, জিএসটি ও রাজ্যে বন্যার জেরে তাঁরা নিজেদের এলাকা থেকে সাধ্যমতো প্রতিমা কিনছেন।’’ কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী কাঞ্চি পাল এ বার ৪০টি প্রতিমা তৈরি করেছেন। কিন্তু ছ’টি প্রতিমার বায়না হয়নি এখনও। শিল্পীর কথায়, ‘‘প্রতি বছর ৪০-৪২টি প্রতিমা তৈরি করি। পুজোর এক মাস আগে অন্য বছর সব বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু এ বার এখনও ছ’টির বায়না হয়নি। চিন্তায় আছি।’’

শিল্পী অমল পালকে আবার ভিন্ন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। একটি প্রতিমা বায়না হওয়ার পরেও ক্রেতা বাতিল করেছেন। মোটা টাকা ব্যয়ে বানানো ওই প্রতিমার এখনও ক্রেতা নেই। প্রতিমা তৈরির সামগ্রীর দাম বাড়লেও গত বছরের তুলনায় এ বার কম দামে প্রতিমা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ বেশির ভাগ শিল্পীর। কুমোরটুলি সূত্রের খবর, একটি প্রতিমা তৈরিতে গড় খরচ ৩০-৪০ হাজার টাকা। ওই প্রতিমা বিক্রি হয় ৫০-৬০ হাজার টাকায়।

Advertisement

কুমোরটুলি সূত্রের খবর, ফি বছর চৈত্র মাস থেকেই শিল্পীরা প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেন। অধিকাংশ শিল্পী মহাজনদের থেকে টাকা ধার নিয়ে প্রতিমা তৈরি করেন। কার্তিকবাবুর খেদ, ‘‘মহাজনদের থেকে সুদের বিনিময়ে টাকা ধার নিয়ে আমরা ঠাকুর তৈরি করি। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে দেনা কী ভাবে শোধ করা হবে, তাই নিয়ে ঘোর দুশ্চিন্তায় রয়েছি।’’ কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সাংস্কৃতিক সমিতির সম্পাদক রঞ্জিৎ সরকারের কথায়, ‘‘কুমোরটুলি বিশ্বের দরবারে পরিচিত। শুধু শহর থেকেই নয়, জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ক্রেতারা প্রতিমা কিনতে আসেন। কিন্তু সেই ক্রেতাদের অধিকাংশ এ বার কুমোরটুলিতে পা-ই দেননি।’’

নোট বাতিল থেকে শুরু করে জিএসটি চালু হওয়ার জেরে জেরবার কুমোরটুলি। তার উপরে জেলায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির জেরে চলতি বছরে ব্যবসায় অনেকটা ভাটা পড়েছে বলে শিল্পী শিবিরের পর্যবেক্ষণ। পুজোর আগে হাও়়ড়া, হুগলি ও মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা হওয়ায় সেখান থেকে অনেক ক্রেতাই এ বার কুমোরটুলিমুখো হননি। গোদের উপরে বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে নোট বাতিল ও জিএসটি-র জের। কুমোরটুলির শিল্পী ইন্দ্রজিৎ পালের কথায়, ‘‘নোট বাতিলের জন্য পুজো উদ্যোক্তারা বিভিন্ন সংস্থা থেকে টাকা না পাওয়ায় ভুগতে হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় তাঁরা বেশি দাম দিতে রাজি নন।’’ জিএসটি-র গেরোয় প্রতিমার সামগ্রী কিনতে অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে বলে আগেই নালিশ করেছিলেন শিল্পীরা। জাহাজে করে বিদেশে প্রতিমা পাঠাতে অতিরিক্ত করের টাকা গুনতে হয়েছে তাঁদের। সব মিলিয়ে শিরে সংক্রান্তি অবস্থা কুমোরটুলির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন