‘বেআইনি’ নির্মাণ, চুপ পুর প্রশাসন

এত কিছুর পরেও নিজের আবাসনের বেআইনি নির্মাণের সুরাহা করতে পারল না বেহালার বেচারাম চ্যাটার্জি রোডের বাসিন্দা এক পরিবার।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৫০
Share:

টিনের ছাউনি দেওয়া এই বেআইনি নির্মাণ নিয়েই উঠেছে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র

দেড় বছরে তিন দফায় কলকাতা পুরসভাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠির উত্তরে পাল্টা চিঠি। তিন বার তথ্য জানার অধিকার আইনে আবেদন। শেষে উপায় না দেখে পর্ণশ্রী থানাতেও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এত কিছুর পরেও নিজের আবাসনের বেআইনি নির্মাণের সুরাহা করতে পারল না বেহালার বেচারাম চ্যাটার্জি রোডের বাসিন্দা এক পরিবার।

Advertisement

অথচ বেআইনি নির্মাণ ও বহুতলগুলির ছাদের বিষয়ে পুর-প্রশাসন তৎপরতার কথা বললেও এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, কলকাতা পুরসভার ভূমিকা নিয়ে।

২৫, বেচারাম চ্যাটার্জি রোডের বাসিন্দা শ্রাবণী নাগ ২০১৭ সালের ৯ জানুয়ারি প্রথম চিঠি দেন পুরসভার বিল্ডিং বিভাগে। শ্রাবণীদেবীর অভিযোগ, তাঁদের আবাসনের ছাড়পত্র তিনতলা পর্যন্ত দিয়েছিল পুরসভা। কিন্তু তা না মেনেই তিনতলার ছাদে বেআইনি নির্মাণ করা হয়েছে। ছাদের ১২০০ বর্গফুট জায়গা জুড়ে একটি ফ্ল্যাট বানিয়ে উপরে টিনের ছাউনি দেওয়া হয়েছে। এখন সেই ফ্ল্যাট ব্যবসার কাজে ব্যবহার হচ্ছে বলে ওই পরিবারের অভিযোগ।

Advertisement

শ্রাবণীদেবীর দাদা শ্যামল মজুমদার বলেন, ‘‘চোখে দেখতে পাই না। কিন্তু বুঝতে পারছি, ওটা বেআইনি। অথচ পুরসভা, পুলিশ বুঝতে পারছে না? ওখানে দাহ্যবস্তু মজুত রাখা হচ্ছে। দিনরাত বাইরের লোক ঢুকছে। নিরাপত্তা কোথায়?’’

প্রথম চিঠির পরে আরও দু’বার পুরসভাকে চিঠি দেন শ্রাবণীদেবীরা। সেই সঙ্গে ২০০৩ সালে ওই বহুতলের জন্য পুরসভার দেওয়া ছাড়পত্রের প্রতিলিপিও পাঠান তাঁরা। তাতেও কাজ না হওয়ায় ২০১৭-এর অগস্টে তথ্য জানার অধিকার আইনে (আরটিআই) পুরসভার বিল্ডিং বিভাগে আবেদন করেন শ্রাবণীদেবীরা। এর পরে পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের এক আধিকারিক শ্রাবণীদেবীদের বাড়ি ঘুরে যান। আরটিআই-এর উত্তরে জানানো হয়, ‘ওই ঠিকানায় বর্তমানে কোনও বেআইনি নির্মাণ চলছে না।’ শ্যামলবাবু বলছেন, ‘‘এখন বেআইনি নির্মাণ চলছে, সেটা আমরাও বলছি না। একটা বেআইনি নির্মাণকাজ হয়ে রয়েছে, সেটাই জানানো হয়েছে। কেন সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে।’’

দ্বিতীয় এবং তৃতীয় আরটিআই-এর পরে পুরসভা জানায়, ‘ওই বহুতলের বর্তমান ব্যবহারকারী রমাপ্রসাদ চক্রবর্তী এবং তৈরির কাজে যুক্তদের থেকে নথিপত্র চাওয়া হয়েছে’। ওই পর্যন্তই। এ বিষয়ে আর কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ শ্রাবণীদেবীদের।

পুরসভার থেকে সুরাহা না পেয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর বিষয়টি জানিয়ে পর্ণশ্রী থানায় অভিযোগ করেন তাঁরা। সেখান থেকেও কিছু করা হয়নি বলে শ্রাবণীদেবীদের দাবি। পর্ণশ্রী থানা সূত্রে খবর, ওই বাড়ির বাসিন্দাদের ডেকে কথা বলা হয়েছে। বাকিটা পুরসভার দেখার কথা। পুরসভা চাইলে পুলিশ হস্তক্ষেপ করবে।

শহরের বহুতলের নিরাপত্তা এবং ছাদের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে তৎপরতার কথা বলেন পুর-আধিকারিকেরা। অথচ ছাদ জুড়ে বেআইনি নির্মাণ গড়ে ওঠার বিষয়টি তথ্যপ্রমাণ দিয়ে জানানো হলেও পুর-প্রশাসন চুপ কেন? প্রশ্ন তুলছেন শ্রাবণীদেবীরা।

এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ১৪ নম্বর বরোর অন্তর্গত। বরো চেয়ারম্যান মানিকলাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এলাকায় কোনও বেআইনি নির্মাণ রাখতে দিই না। ওই আবাসনটি দেখা হয়েছে। পুরসভাকে যা জানানোর জানানো হয়েছে।’’ পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের এর আধিকারিক বলেন, ‘‘ওই বাড়ির মালিকের থেকে নথি চেয়ে পাঠানো হয়েছে। তা দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ এত দিনেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হল না? তার উত্তর অবশ্য কোনও পক্ষের কাছেই মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন