বিধি ভেঙে মজুত ৭০০ কেজি পোস্ত খোলা, বন্ধ দোকান

বড়বাজারের রাজাকাটরায় বুধবার সন্ধ্যায় হানা দিয়েছিলেন রাজ্য আবগারি দফতরের অফিসারেরা। খবর ছিল, সেখানে এক ব্যবসায়ী বেআইনি ভাবে অতিরিক্ত পোস্ত খোলা মজুত করেছেন। আবগারি দফতর সূত্রে খবর, ওই দিন তাঁর দোকানে হানা দিয়ে ৭০০ কিলোগ্রাম অতিরিক্ত পোস্ত খোলা পাওয়া গিয়েছে। যার বাজারদর প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

বড়বাজার শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৬ ০১:১০
Share:

সেই দোকান। বৃহস্পতিবার। — নিজস্ব চিত্র

বড়বাজারের রাজাকাটরায় বুধবার সন্ধ্যায় হানা দিয়েছিলেন রাজ্য আবগারি দফতরের অফিসারেরা। খবর ছিল, সেখানে এক ব্যবসায়ী বেআইনি ভাবে অতিরিক্ত পোস্ত খোলা মজুত করেছেন। আবগারি দফতর সূত্রে খবর, ওই দিন তাঁর দোকানে হানা দিয়ে ৭০০ কিলোগ্রাম অতিরিক্ত পোস্ত খোলা পাওয়া গিয়েছে। যার বাজারদর প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা। বৃহস্পতিবার রাজ্য আবগারি দফতরের কলকাতার কালেক্টর সুব্রত বিশ্বাস বলেন, ‘‘দোকানে সব মিলিয়ে ১২ হাজার কিলোগ্রাম পোস্ত খোলা ছিল। কিন্তু, কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, তার মধ্যে ৭০০ কিলোগ্রাম পোস্ত খোলা নিয়ম বহির্ভূত ভাবে রাখা ছিল।’’

Advertisement

গরম জলে এই পোস্ত খোলা ভিজিয়ে সেই জল খেলে নেশা হয়। পোস্ত খোলা বিক্রির জন্য লাইসেন্স দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু, প্রত্যেক ব্যবসায়ী একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি পোস্ত খোলা মজুত রাখতে পারেন না। পশ্চিমবঙ্গে এমন প্রায় জনা ২০ ব্যবসায়ী রয়েছেন, যাঁরা লাইসেন্স নিয়ে পোস্ত খোলার ব্যবসা করেন। এই ব্যবসায়ী সন্তোষ লোধ তাঁদেরই অন্যতম।

এই সন্তোষ লোধ কিছু দিন আগেই উঠে এসেছিলেন সংবাদের শিরোনামে। তাঁর কাছে বেশ কিছু দিন আগে তোলা চেয়ে হুমকি দিয়েছিলেন বলে সল্টলেকের কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়। মূলত সন্তোষবাবুর করা অভিযোগের ভিত্তিতেই বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ মামলা রুজু করেছিল। প্রাক্তন এই কংগ্রেস নেতা, সল্টলেক নিবাসী সন্তোষবাবু নিজে এখন অসুস্থ। কার্যত গৃহবন্দি।

Advertisement

এই বেআইনি কাজের জন্য তাঁর নামে মামলা শুরু করেছে আবগারি দফতর। যদিও এখনও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। সুব্রতবাবু এ দিন বলেন, ‘‘আমরা জেনেছি, এই ব্যবসা এখন সন্তোষবাবুর মেয়েই দেখভাল করছিলেন।’’

জানা গিয়েছে, ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত খোলা বাজারে আফিম বিক্রি হতো। সেই সময়ে প্রচুর লোক নিয়মিত আফিমের নেশা করতেন। ১৯৮৫ সালে কেন্দ্র মাদক সংক্রান্ত এনডিপিএস (নারকোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্টান্সেস) আইন চালু করে। খোলা বাজারে আফিম বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। সমস্যায় পড়েন আফিমের নেশা করা মানুষেরা। চিকিৎসকেরা সতর্ক করেন, আফিম না পেলে মৃত্যুও হতে পারে তাঁদের কারও।

এমনই হয় পোস্তর খোলা।

এই অবস্থায় কেন্দ্র ঠিক করে, আফিমের পরিবর্তে পোস্ত খোলা বিক্রির জন্য লাইসেন্স দেওয়া হবে। চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন নিয়ে সেই পোস্ত খোলা কেনা যাবে। যাঁরা মূলত আফিমের নেশা করতেন, তাঁরাই আফিমের বদলে পোস্তা খোলা ব্যবহার করতে পারবেন। সুব্রতবাবু এ দিন বলেন, ‘‘যেহেতু বয়স্ক লোকেরা আফিমের নেশা করতেন, কেন্দ্রের উদ্দেশ্য ছিল ধীরে ধীরে পোস্ত খোলা বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হবে। নতুন প্রজন্মকে এই নেশার জন্য উৎসাহিত করা হবে না।’’ কিন্তু, তা কার্যত সম্ভব হয়নি।

সূত্রের খবর, মধ্যপ্রদেশ থেকে আইনি ভাবে এই পোস্ত খোলা কেনেন ব্যবসায়ীরা। সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের লাইসেন্স নিয়ে পোস্ত চাষ করা হয়। প্রতি কিলোগ্রামের দাম প্রায় দেড় থেকে দু’হাজার টাকা। কিন্তু, অভিযোগ, এই রাজ্যে মালদহ, বীরভূমে যে বেআইনি ভাবে পোস্ত চাষ করা হয়, সেখান থেকেও কম টাকায় পোস্ত খোলা কেনেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। তা খোলা বাজারে বিক্রিও করা হয়। যার দাম কিলোগ্রাম প্রতি প্রায় পাঁচ হাজার টাকা বলে আবগারি দফতর সূত্রে খবর।

বুধবার রাতে রাজ্য আবগারি দফতরের সঙ্গে নারকোটিক কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি)-র অফিসারেরাও এই অভিযানে ছিলেন। এনসিবি-র পূর্বাঞ্চলের ডিরেক্টর দিলীপ শ্রীবাস্তব এ দিন জানান, বুধবার রাতেই মালদহের বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে তাঁরা মহম্মদ বকুল মিঞাঁ নামে এক ব্যক্তিকে ৬৩০ গ্রাম হেরোইন-সহ গ্রেফতার করেছেন। আটক হওয়া ওই পরিমাণ হেরোইনের বাজারদর প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা। অভিযোগ, ভারতের এক এজেন্টের মাধ্যমে বকুল ওই হেরোইন বাংলাদেশে পাচার করার চেষ্টা করছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন