Tala Bridge

যান চলাচল নিয়ে প্রশ্ন রেখে বৃহস্পতিবার উদ্বোধন টালা সেতুর

ওই দিন বিকেল চারটেয় সেতুর উদ্বোধন করার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার পরে ছোট যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৪৬
Share:

পরিদর্শন: টালা সেতুতে শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। তার মধ্যেই সেতুর উপরে একটু হাঁটা। মঙ্গলবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

প্রায় আড়াই বছর বন্ধ থাকার পরে মহালয়ার তিন দিন আগে, কাল, বৃহস্পতিবার খুলে যেতে চলেছে টালা সেতু। নবান্ন সূত্রের খবর, ওই দিন বিকেল চারটেয় সেতুর উদ্বোধন করার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার পরে ছোট যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। নবনির্মিত সেতুটির ‘ওয়াকিং বে’ পথচারীদের ব্যবহার করতে দেওয়া হতে পারে। এ দিকে, সেতুর নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কর্মীদের মন্তব্যে প্রশ্ন উঠেছে, পুজোর আগে উদ্বোধন করতে গিয়ে সেতুর কাজে তড়িঘড়ি করা হল কি? যদিও নবান্ন সূত্রের খবর, উদ্বোধনের পরে যান চলাচল নিয়ে যে সিদ্ধান্তই হোক, তা হবে সেতুর স্বাস্থ্যের কথা ভেবে।

Advertisement

সেতুটির নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা সূত্রের খবর, চার লেনের ওই সেতু দু’টি ফ্ল্যাঙ্কে বিভক্ত। উদ্বোধনের পরে এখন শুধুই ডান দিকের ফ্ল্যাঙ্কটি সাধারণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হতে পারে। অর্থাৎ, পুরনো সেতুর যে দিকটি ডানলপ থেকে শ্যামবাজারমুখী যানবাহন চলাচলে ব্যবহৃত হত, নতুন সেতুর সেই ফ্ল্যাঙ্কটি দিয়েই শুধু ছোট গাড়ি চলাচল করানো হতে পারে। ওই ফ্ল্যাঙ্কটিকে দ্বিমুখী রাস্তা হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার সেটি একমুখী রেখে ব্যবহার হতে পারে সেতুর পার্শ্ববর্তী অন্য রাস্তা। ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে খুলে দেওয়া হতে পারে দু’টি ফ্ল্যাঙ্কই।

সেতুটির নির্মাণের কাজে যুক্ত এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘মহালয়ার আগেই উদ্বোধনের জন্য তাড়াহুড়ো হচ্ছেই। এখনও যা কাজ বাকি, তা পুজোর আগে শেষ করা অসম্ভব।’’ অন্য এক ইঞ্জিনিয়ারের মন্তব্য, ‘‘এ জন্যই সেতু সংলগ্ন সার্ভিস রোডের এক দিকের কাজ পুজোর পরে হবে। আরও কিছু কাজ পুজোর পরে করার জন্য তুলে রাখা হচ্ছে। প্রথমেই ভারী গাড়ি না চালানোর সিদ্ধান্তও সেই কারণেই। কয়েকটি ফিট সার্টিফিকেট পেতেও পুজো পেরিয়ে যাবে।’’

Advertisement

নির্মাণ সংস্থার মুখ্য ইঞ্জিনিয়ারের আবার দাবি, প্রথমে ধরা হয় ১ অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। সেটা এগিয়ে এনে ২৯ তারিখেই কাজ শেষ করতে বলা হয়। গত পরশু ফের নির্দেশ এসেছে, ২২ তারিখেই উদ্বোধন হবে। ইউনেস্কোর প্রতিনিধিরা কলকাতার পুজো দেখতে আসবেন, সেতু উদ্বোধনে সেটিকেও মাথায় রাখা হচ্ছে! এর পরেই নতুন-পুরনো মিলিয়ে মোট ১৫০০ কর্মী রাত-দিন এক করে কাজ তোলার চেষ্টা করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কাজ তো হয়েছে, কিন্তু পরীক্ষা না করে কোনও মতেই সেতুতে যানবাহন উঠতে দেওয়া যাবে না।’’

উদ্বোধনের পর পর টালা সেতুকে কী ভাবে ব্যবহার করা হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারলেন না পূর্তমন্ত্রী পুলক রায়ও। তাঁর মন্তব্য, ‘‘প্রথমে ছোট গাড়িও চালানো হতে পারে, আবার শুধুমাত্র হাঁটার জন্যও ব্যবহার করা হতে পারে। আগামী ২২ তারিখ টালা সেতুর উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী, এর বেশি সিদ্ধান্ত হয়নি।’’ তাঁর দাবি, যা-ই পদক্ষেপ হোক, নিরাপত্তার কথা ভেবেই করা হবে।

মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পরে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে টালা সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। ২০১৯ সালে পুজোর আগে ওই স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দিয়ে সরকারি সংস্থা রাইটস জানায়, টালা সেতু ভেঙে ফেলে নতুন নির্মাণ প্রয়োজন। সেতু বিশেষজ্ঞ ভি কে রায়নাও একই সুপারিশ করেন। ওই বছর পুজোর আগে টালা সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে টালা সেতু ভাঙার কাজ শুরু হয়। ওই বছরের এপ্রিলে শেষ হয় সেই কাজ।

অগস্টে সেতুর নির্মাণ শুরু করে লার্সেন অ্যান্ড টুবরো লিমিটেড। চলতি বছরের জানুয়ারিতে পূর্ত দফতর জানায়, এপ্রিলে খুলে দেওয়া হবে টালা সেতু। সেই সময়সীমা পেরোলেও কাজ শেষ হয়নি। নবান্ন সূত্রের খবর, সেই প্রতীক্ষাই শেষ হতে চলেছে আগামী বৃহস্পতিবার। মোট ৪৬৮ কোটি টাকা খরচ করে ৭৫০ মিটার লম্বা টালা সেতু ফিরে পেতে চলেছে শহর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন