ক্রেতাদের পছন্দ মোম প্রদীপ। —নিজস্ব চিত্র।
এলইডি, রাইস কিংবা লেজারের দাপটেও অম্লান প্রদীপের শিখা। বৈদ্যুতিক আলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মোম প্রদীপের চাহিদা। কারণ, এগুলি ব্যবহার করা সোজা। পলতে পাকিয়ে, প্রদীপে তেল দেওয়ার আজ সময় কোথায়? কর্মব্যস্ত জীবনের ফাঁকে দীপাবলি উঁকি দিলেও চিন্তার কিছু নেই। অভিজাত শপিং মল থেকে পাড়ার পরিচিত দোকানএখন মোম প্রদীপ আর শৌখিন প্রদীপের রমরমা।
কুমোরটুলির প্রদীপ ব্যবসায়ী কল্পনা দাস জানালেন, গত দু-তিন বছর ধরে ক্রমেই এই মোম প্রদীপের চাহিদা বাড়ছে। এতে ঝামেলা কম, দেখতেও আকর্ষণীয়। শৌখিন প্রদীপেরও ভাল চাহিদা আছে বাজারে। এ বছর ১৫০-এর বেশি নকশার প্রদীপ পাওয়া যাচ্ছে। অন্য এক প্রদীপ ব্যবসায়ী দিলীপ মাঝি বললেন, “অন্য প্রদীপের তুলনায় মোম প্রদীপের চাহিদা বেশি। তাই এ বছর নানা ধরনের মোম প্রদীপ হাজির বাজারে। তবে শুধু এ শহরেই নয়, মোম প্রদীপের চাহিদা রয়েছে বিদেশেও। এ বছর হংকং, ম্যানচেস্টার, দুবাই-এ প্রদীপ পাঠিয়েছি।”
নিউআলিপুর থেকে কুমোরটুলিতে মাটির প্রদীপ কিনতে এসে সুনেত্রা রায় কিনে ফেলেছিলেন ডজন চারেক মোম প্রদীপ। তিনি বলছিলেন, “মোম প্রদীপে ঝামেলা কম, দেখতেও আকর্ষণীয়।” তবে কম হলেও তেলের প্রদীপের চাহিদা আছে। তেলের প্রদীপ কিনতে এসে পিয়ালি বসু বললেন, “তেল দিয়ে প্রদীপ জ্বালাতে ভাল লাগে। তার জন্য বছরের একটা দিন একটু কষ্ট করতে কোনও আপত্তি নেই।”
কুমোরটুলি কিংবা বিধাননগরের খালপাড় ছাড়াও প্রদীপের বেচাকেনা চলে লেকমার্কেট, গড়িয়াহাট, জগুবাবুর বাজার, শিয়ালদহ ও বৌবাজারেও। একটা সময় প্রদীপের বাজার ছিল মন্দ। বছর দশেক আগেও শৌখিন প্রদীপ আসত পটনা, দিল্লি থেকে। তার পরে এখানেই নানা আকৃতির শৌখিন প্রদীপ তৈরি শুরু হয়। আগে মূলত অবাঙালি সম্প্রদায়ের মানুষ দীপাবলিতে এই শৌখিন প্রদীপ ব্যবহার করলেও বেশ কয়েক বছর ধরে বাঙালি ক্রেতারাও এই প্রদীপ পছন্দ করছেন। এমনই জানালেন প্রদীপ ব্যবসায়ী জয়ন্ত দত্ত।
বেশিরভাগ প্রদীপ আসে দত্তপুকুর, বনগাঁ, বারাসত, বারুইপুর এবং বিধাননগরের খালপাড় থেকে। রং করার কাজ হয় কুমোরটুলিতে। আকর্ষণীয় করে তুলতে ব্যবহার করা হয় চুমকি, পুঁতি, কাচ ও নানা রঙের রোলেক্স ডাস্ট।
মোম প্রদীপের ক্ষেত্রে প্রদীপের মধ্যে পলতে দিয়ে গরম মোম ঢেলে দেওয়া হয়।
শুধু কুমোরটুলি কিংবা খালপাড়ে নয়। মোম প্রদীপ ও শৌখিন প্রদীপ মিলছে নানা শপিং মলেও। আনোয়ার শাহ রোডের একটি অভিজাত শপিং মলে দেখা গেল, শৌখিন প্রদীপের পাশাপাশি রাখা মোম প্রদীপই বেশি পছন্দ ক্রেতাদের। পছন্দের কারণ জানতে চাইলে যোধপুর পার্কের সুনীতা গুপ্তা বললেন, “মোম প্রদীপে ঐতিহ্যও বজায় থাকে, কিছুটা সময়ও বাঁচে।”